বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের চারটি কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দেশে বিতর্ক চলছে। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় দফার শাসনামলে এসব অপারেটরের নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে দেশের শ্রমিক সংগঠন, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এই বিতর্ক ও প্রশ্ন কেন তৈরি হলো, সরকার কী চাইছে আর বিরোধিতাকারীদের আপত্তিই–বা কোথায়—এগুলোর উত্তর খুঁজেছেন এই প্রতিবেদক। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যান, বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষার প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রশ্ন-উত্তরের আলোকে এ বিষয়ে আলোচনা করা যাক।

প্রশ্ন : চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কেন এত আলোচনা?
উত্তর: বাংলাদেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এই তিনটি হলো চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর। এই তিনটির মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো হলো চট্টগ্রাম বন্দর। এটির প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ১৮৮৮ সালে। মোংলা চালু হয় ১৯৫০ সালে। পায়রা বন্দর যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালে।
তিন বন্দরের মধ্যে পায়রায় এখনো টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়নি। সেখানে বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করা হয়, পরে বিভিন্ন ঘাটে নিয়ে পণ্য খালাস করা হয়। কনটেইনার খালাসের সুবিধা নেই। মোংলায় বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের পাশাপাশি জেটিতে সীমিতভাবে কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধা রয়েছে। তিন বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে সুবিধা সবচেয়ে বেশি।
চট্টগ্রামে কনটেইনার পণ্য পরিবহন শুরু হয় ১৯৭৭ সালের মার্চে। শিপিং-বিষয়ক পুরোনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্ট-এর তালিকা অনুযায়ী, কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যায় বৈশ্বিক ক্রমতালিকা অনুযায়ী এই বন্দরের অবস্থান এখন ৬৭তম। এই তালিকায় মোংলা নেই।
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় পুরোটা একাই বহন করছে। শুধু সমুদ্রবন্দর নয়, বাংলাদেশের সব স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে যত পণ্য পরিবহন হয়, তারও সিংহভাগ এই বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, বিগত অর্থবছরে মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ৮৩ শতাংশ (প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকা) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়েছে।
একটা উদাহরণ দিলে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বটা আরও বোঝা যায়। যেমন সমুদ্রপথে যত কনটেইনার আনা-নেওয়া হয়, তার ৯৯ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। ১ শতাংশ হয় মোংলা বন্দর দিয়ে। সমুদ্রপথে রপ্তানির পুরোটাই নেওয়া হয় কনটেইনারে। আবার শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি, মূল্যবান পণ্য—সবই আনা হয় কনটেইনারে।
চট্টগ্রামের ওপর কনটেইনার পরিবহনের চাপ থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী জেটি ও টার্মিনাল নির্মাণের সুবিধা বাড়েনি। যেমন এখন চারটি টার্মিনাল রয়েছে, যার মধ্যে গত ৩৫ বছরে মাত্র দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। অবশ্য তাতে সেবার মান খুব বেশি বাড়েনি। অবকাঠামো সুবিধার অভাবে কখনো নিয়মিত জাহাজজট, কখনো অচলাবস্থা—এসব দিক নানা সময়ে আলোচনায় আসে।
কোনো বন্দরের প্রধান অবকাঠামো হলো জেটি। এক বা একাধিক জেটি নিয়ে টার্মিনাল তৈরি করা হয়। টার্মিনালে যন্ত্রপাতি ও কনটেইনার রাখার সুবিধা থাকে। জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য জেটি ও যন্ত্রপাতি দরকার।
প্রশ্ন : চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে কত টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে?
উত্তর: চট্টগ্রাম বন্দরে এখন মোট চারটি কনটেইনার টার্মিনাল চালু আছে। এগুলো হলো নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ও রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) চিটাগাং, যা পতেঙ্গা টার্মিনাল নামে পরিচিত। এসব কনটেইনার টার্মিনালের প্রধান কাজ জাহাজ থেকে আমদানি কনটেইনার নামানো এবং রপ্তানি কনটেইনার জাহাজে তুলে দেওয়া।
এই চারটি টার্মিনালের মধ্যে পতেঙ্গা টার্মিনালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত বছর জুনে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল বা আরএসজিটিআইকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাকি তিনটি অর্থাৎ এনসিটি, জিসিবি, সিসিটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। এনসিটিতে দেশীয় অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ৬ জুলাই। পরদিন থেকে ছয় মাসের জন্য নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাই ডক লিমিটেডকে পরিচালনার দায়িত্ব দেয় বন্দর।
চালু চার টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় এনসিটি। এটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া সরকার প্রায় গুছিয়ে এনেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে এগুলোর বাইরে নতুন তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এগুলোর মধ্যে একটি টার্মিনাল কর্ণফুলী নদীর তীরে লালদিয়ার চরে। বাকি দুটি বঙ্গোপসাগরের উপকূলে পতেঙ্গা সৈকতের অদূরে বে টার্মিনাল প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এই তিন টার্মিনালে এখনো কোনো অবকাঠামো তৈরি হয়নি।
এর বাইরে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২৯ সালে এই টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করার কথা।
প্রশ্ন : দেশীয় প্রতিষ্ঠান থাকতে বিদেশিদের প্রয়োজন কেন?
উত্তর: এখানে দুটি দিক আছে। ১. চালু টার্মিনাল ও ২. নতুন টার্মিনাল।
সরকার বলছে, চারটি কনটেইনার টার্মিনালের মধ্যে নিউমুরিং বা এনসিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ হবে। এতে সক্ষমতা আরও বাড়বে। আবার নতুন টার্মিনাল নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের ক্ষেত্রেও বিপুল বিনিয়োগের দরকার। বিনিয়োগের অপেক্ষায় থাকা তিন টার্মিনালে তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান টার্মিনালভেদে ৪০ থেকে ১০০ কোটি ডলারের (৫ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার কমবেশি) বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালস, সিঙ্গাপুরের পিএসএ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড।
শিপিংবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্ট প্রতিবছর বিশ্বের সেরা ১০০ অপারেটরের তালিকা প্রকাশ করে। এখন পর্যন্ত সেই তালিকায় বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান স্থান পায়নি। সরকার বলছে, বাংলাদেশে যারা বিনিয়োগ করবে, সেগুলো বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান। লয়েডস লিস্ট-এর তালিকায় শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে সেগুলোর নাম।
আন্দোলনকারীদের কথা হলো, চালু থাকা নিউমুরিং টার্মিনাল স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটি ভালোভাবে চলছে। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগের দরকার নেই। আর বিনিয়োগের অপেক্ষায় বাকি তিনটি টার্মিনালে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
প্রশ্ন : কাদের আপত্তি, কেন আপত্তি?
উত্তর: বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা যুক্তি দিয়ে বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি করছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর বড় আপত্তি নিউমুরিং টার্মিনাল বা এনসিটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে। তাদের যুক্তি হলো এনসিটিতে জেটি ও আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন কাজে বন্দর প্রায় ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা খরচ করেছে। এখানকার মূল যন্ত্রপাতিগুলো (গ্যান্ট্রি ক্রেন) আরও ১৯ থেকে ২৩ বছর কার্যকর থাকবে, অর্থাৎ আগামী দুই দশকে নতুন করে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। এনসিটি থেকে বন্দরের আয় সবচেয়ে বেশি। তাই এটি বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দিলে বন্দরের আর্থিক ক্ষতি হবে। শ্রমিকেরা চাকরি হারাবেন।
বিনিয়োগের অপেক্ষায় থাকা তিনটি টার্মিনালে কোনো অবকাঠামো এখনো না হওয়ায় সেগুলোয় বিদেশি অপারেটরদের দিতে শ্রমিক সংগঠনগুলোর তেমন কোনো আপত্তি নেই।
তবে চালু থাকা এনসিটি ও নতুন তিন টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠনের আপত্তি রয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে প্রশ্ন তুলেছেন। এনসিটিসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে না দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বন্দর পরিচালনার দাবি তুলেছে বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’। বিদেশি বিনিয়োগ দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে অভিযোগ তাদের।
প্রশ্ন : বিদেশি অপারেটর নিয়োগপ্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে?
উত্তর: চট্টগ্রাম বন্দরের সূত্র ও নথি অনুযায়ী, চালু থাকা নিউমুরিং টার্মিনাল বা এনসিটি ও নতুন তিনটি টার্মিনালে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) আওতায় জিটুজি ভিত্তিতে (সরকারি পর্যায়ে) বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। ২০১৫ সালের পিপিপি আইনে শুরুতে জিটুজি প্রকল্পের বিধান ছিল না। ২০১৭ সালে এ-সংক্রান্ত নীতি হয়। এই নীতির আওতায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা স্মারক সই হয়। পরে ২০১৯ সালে আইন সংশোধন করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের করে যাওয়া এই আইনে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া এগোচ্ছে।
গত ১০ আগস্ট বন্দরে এ সংক্রান্ত সভার আলোচনা অনুযায়ী, আগামী ৩১ ডিসেম্বর নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা প্রকল্পে বাংলাদেশের পক্ষে মধ্যস্থতা (ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার) করছে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। তিন মাস আগে তারা পিপিপি কর্তৃপক্ষের কাছে ট্রানজেকশন স্ট্রাকচার রিপোর্ট (টিএসআর) জমা দিয়েছে। এ বছরের অক্টোবরের মধ্যে নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে।
বে টার্মিনাল প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবিকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় দুই টার্মিনাল হচ্ছে। একটি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যটিতে আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এ বছরে চুক্তির সম্ভাবনা নেই। আগামী বছর চুক্তি হতে পারে।
সরকার বলছে, লালদিয়া ও বে টার্মিনালে এই তিন অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হলেও টার্মিনালের মালিকানা থাকবে বন্দরের হাতে। বিদেশি অপারেটর নিজেদের অর্থে টার্মিনাল নির্মাণ করবে। নিজেরা যন্ত্রপাতি কিনে টার্মিনালে বসাবে। এরপর দীর্ঘ মেয়াদে টার্মিনাল পরিচালনা করবে। এ সময় টার্মিনালের সব মাশুল বিদেশি প্রতিষ্ঠান আদায় করবে। সেখান থেকে কনটেইনারপ্রতি বন্দর একটা অংশ পাবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এককালীন ও কনটেইনারপ্রতি কত ডলার পাবে, তার সবই ঠিক হবে দর-কষাকষি করে যে চুক্তি হবে, তার ওপর। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে (সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর, যেটি চুক্তিতে থাকে) টার্মিনালটি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে যন্ত্রপাতিসহ হস্তান্তর করবে তারা।
প্রশ্ন : বিশ্বে বন্দর কীভাবে পরিচালিত হয়?
উত্তর: বিশ্বে প্রধানত চার প্রক্রিয়ায় বন্দর পরিচালনা করা হয়। মূলত বন্দরের বিনিয়োগ ও পরিচালনার ওপর ভিত্তি করে এই মডেল ঠিক করা হয়। বিশ্বের বন্দরগুলো কীভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, তার উদাহরণ রয়েছে বিশ্বব্যাংকের ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘পোর্ট রিফর্ম টুল কিট’ প্রকাশনায়। এতে বিশ্বে বন্দর ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনার চারটি ধরনের উল্লেখ রয়েছে।
ক. পাবলিক সার্ভিস পোর্ট মডেল: এটি মূলত পুরোপুরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় বন্দর পরিচালনার মডেল। যেমন সরকারি সংস্থা বা বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল নির্মাণ করে ও যন্ত্রপাতি বসিয়ে নিজেরাই বন্দর পরিচালনা করে।
খ. টুল পোর্ট মডেল: সরকারি নিয়ন্ত্রণ রেখে কিছু কাজ বেসরকারি হাতে পরিচালনা। যেমন জেটিসহ অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি কেনা—সবই সরকারি সংস্থা করে। তবে টার্মিনাল পরিচালনার নানা কাজের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, জিসিবি ও সিসিটি এই মডেলে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেশীয় বা বিদেশি হতে পারে।
গ. ল্যান্ডলর্ড মডেল: সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে ব্যবস্থাপনা। এই মডেলে বন্দরের জায়গা সরকারের মালিকানায় থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেটি বা যন্ত্রপাতিসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করে দীর্ঘ মেয়াদে পরিচালনা করে। বাংলাদেশে গত বছরের জুনে চালু হওয়া পতেঙ্গা টার্মিনাল এই মডেলে পরিচালিত হচ্ছে।
ঘ. প্রাইভেট পোর্ট মডেল: পুরোপুরি বেসরকারি খাতে পরিচালনা। বেসরকারি খাত বন্দর নির্মাণ থেকে সবকিছুতে বিনিয়োগ করে নিজেরাই পরিচালনা করে। এই মডেল যুক্তরাজ্যে জনপ্রিয়। যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমনস লাইব্রেরির তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ৪৩ শতাংশ বন্দর প্রাইভেট সার্ভিস মডেলে পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপেক্ষায় থাকা নতুন তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগের ক্ষেত্রে ল্যান্ডলর্ড মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। আর চালু থাকা নিউমুরিং টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ হচ্ছে ল্যান্ডলর্ড ও টুল পোর্টের মিশ্র মডেলে।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট-২০২৪ অনুযায়ী, বিশ্বে সক্রিয় কনটেইনার বন্দরের সংখ্যা ৯৩৭। সংস্থাটির ‘ট্রেইন ফর ট্রেড’ ওয়েবসাইটে থাকা ডেটাসেটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ৬৭ শতাংশ বন্দর ল্যান্ডলর্ড মডেলে পরিচালনা হচ্ছে।
তবে মডেল বা পরিচালনার প্রক্রিয়া ঠিক থাকলেও বিদেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। বিদেশে ল্যান্ডলর্ড মডেলে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগ হয়, যা বাংলাদেশে সরাসরি সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) সুনির্দিষ্ট অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। অর্থাৎ এখানে কোনো প্রতিযোগিতা হচ্ছে না।
প্রশ্ন : বিশ্বে কোন দেশ কীভাবে বন্দর চালায়?
উত্তর: ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বন্দর পরিচালনা নিয়ে ২০২২ সালে কনটেইনার মার্কেট রিপোর্ট প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেরিটাইম বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ড্রিউরি ও ভারতের মেরিটাইম গেটওয়ে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের কম্পিটিটিভনেস অব সাউথ এশিয়ান কনটেইনার পোর্টসের প্রকাশনায়ও দক্ষিণ এশিয়ায় বন্দর পরিচালনা নিয়ে তথ্য রয়েছে। এই দুটি প্রকাশনা অনুযায়ী, ভারতের ৩০টি কনটেইনার টার্মিনালের তথ্য রয়েছে। এসব টার্মিনালের ১২টিতে ভারতীয় অপারেটর, ৯টিতে বিদেশি অপারেটর, ৭টিতে যৌথভাবে দেশি-বিদেশি এবং দুটিতে সরকারি বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করছে।
পাকিস্তানের পাঁচটি টার্মিনাল পাঁচ বিদেশি অপারেটর পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ডিপি ওয়ার্ল্ড দুটি, হংকংভিত্তিক হাচিসন পোর্ট হোল্ডিংস দুটি এবং একটি ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল কনটেইনার টার্মিনাল সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠান। শ্রীলঙ্কার পাঁচটি কনটেইনার টার্মিনালের তিনটি দেশটি বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং দুটি যৌথভাবে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান টার্মিনাল পরিচালনা করছে।
সিঙ্গাপুর বন্দরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বন্দর পরিচালনাকারী পিএসএ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। ১৯৯৭ সাল থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে আলাদা হয়ে সিঙ্গাপুর বন্দর পরিচালনা করে আসছে। সিঙ্গাপুরের বাইরে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল নামে বন্দর পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিভিন্ন দেশের বন্দরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ডিপি ওয়ার্ল্ড সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি কোম্পানি। দেশটির বন্দর পরিচালনা করছে ডিপি ওয়ার্ল্ড-ই। চীনের প্রধান বন্দরগুলো চালায় চীনের বন্দর পরিচালনাকারী রাষ্ট্রমালিকানাধীন পাবলিক কোম্পানিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে দেশি-বিদেশি অপারেটরের পাশাপাশি দেশটির বন্দর কর্তৃপক্ষও বন্দর পরিচালনা করছে। ইউরোপের প্রধান বন্দর রটারড্যাম দেশি-বিদেশি বেসরকারি অপারেটররা পরিচালনা করছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে প্রতিযোগিতার বদলে জিটুজি কেন?
উত্তর: বাংলাদেশে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরুর নজির রয়েছে। তবে প্রতিবারই সরকারের হস্তক্ষেপেই তা বন্ধ হয়ে গেছে।
যেমন নিউমুরিং টার্মিনালে যন্ত্রপাতি যুক্ত করার আগে ২০০৮ সালে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চারটি বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা হয়েছিল। এই চারটি হলো নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালস, ব্রিটিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাচিসন পোর্ট ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইসিটিএসআই এবং যুক্তরাজ্যের পিঅ্যান্ডও (২০০৬ সালে ডিপি ওয়ার্ল্ড অধিগ্রহণ করে)। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে মূল দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছিল। তবে দেশীয় অপারেটরকে সুযোগ দেওয়ার নামে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা দরপত্রে হস্তক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ আছে। তাতে শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল হয়।
একইভাবে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিযোগিতামূলকভাবে অপারেটর নিয়োগের জন্য ২০১৩ সালে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর সব প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে বাছাই করে পাঁচ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে মূল দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য প্রাক্-যোগ্য হিসেবে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এই পাঁচটি হলো ভারতের আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড, আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ফ্রান্সের বোলোর, চীনের চায়না হারবার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল পোর্ট সার্ভিসেস। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাঝপথে তা বাতিল করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া বে টার্মিনাল প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর ৯টি দেশ ও প্রতিষ্ঠান টার্মিনাল নির্মাণ ও অন্যান্য সুবিধা তৈরিতে বিনিয়োগ ও আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেয়। ২০১৯ সালের ৮ জুলাই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বন্দরের চিঠি অনুযায়ী, এগুলো হলো নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালস, চীনের চায়না মার্চেন্টস গ্রুপ, আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন প্রোগ্রাম, সিঙ্গাপুরের পিএসএ, ভারতের আদানি গ্রুপ, ভারতীয় ঋণসুবিধায় এলওসি-৩, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
এই সব কটি প্রকল্প শেষ পর্যন্ত জিটুজি বা সরকারি পর্যায়ে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা এখন প্রায় গুছিয়ে আনতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রশ্ন : বিদেশি অপারেটর এলেই বন্দরের দক্ষতা-সক্ষমতা বাড়বে?
উত্তর: বন্দর পরিচালনায় দক্ষতা কতটা বাড়বে, তা এককভাবে অপারেটরের ওপর নির্ভর করে না। বন্দর অপারেটরের মূল কাজ শুরু হয় জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর পর। জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর পর আমদানি কনটেইনার নামানো হয় এবং রপ্তানি কনটেইনার জাহাজে তোলা হয়। এসব কাজ মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে:
এক. জাহাজ কখন জেটিতে ভিড়বে: কোনো বন্দরে পর্যাপ্ত জেটি না থাকলে কোনো জাহাজ ওই বন্দরের জলসীমায় আসার পরও তাৎক্ষণিকভাবে জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ নেই। চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত জেটি না থাকায় জাহাজজট নিয়মিত সমস্যা হয়ে উঠছে। আবার এই বন্দরের সব কটি টার্মিনাল কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত। সাগর থেকে নদীর জেটিতে ভিড়তে হলে দিনের জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয়। বন্দরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জট না থাকলেও গড়ে ১৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় প্রতিটি জাহাজকে।
দুই. কাস্টমস-প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরতা: বন্দর অপারেটর জাহাজ থেকে কনটেইনার নামিয়ে বন্দর চত্বর বা ইয়ার্ডে রাখে। সেখান থেকে কাস্টমস-প্রক্রিয়া শেষ করে খালাস নেন আমদানিকারকেরা। এখন আমদানি কনটেইনার কত দ্রুত খালাস হবে, তা নির্ভর করে কাস্টমসের প্রক্রিয়া কত দ্রুত শেষ হবে তার ওপর। যেমন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২২ সালের টাইম রিলিজ স্টাডি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে পণ্য খালাসে গড়ে সময় লাগে ১১ দিন ৬ ঘণ্টা। একে বিশ্বে নজিরবিহীন বলা হয়ে থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বা অপারেটরের কিছুই করার নেই এখানে।
বিশ্বের উন্নত বন্দরগুলোয় কাস্টমস-প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। বাংলাদেশে কাস্টমস-প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নেই। সনাতন এবং অনলাইনে সমান্তরালে চলে শুল্কায়ন-প্রক্রিয়া। অনেক পণ্যের জন্য নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে অপেক্ষা করতে হয়। তাতে সময় লাগে। কনটেইনারও পড়ে থাকে বন্দরে। আবার আমদানির অন্তত ৬০ শতাংশ কনটেইনার খুলে বন্দর চত্বরে পণ্য খালাস করা হয়, যা বিশ্বে নজির খুব একটা নেই। পণ্য খালাস নিতে কয়েক হাজার ট্রাক ঢুকে টার্মিনালে জট তৈরি করে। তাতে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামিয়ে রাখার জায়গা খুঁজতে হয়।
তিন. বন্দরের সঙ্গে আন্তযোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা: দেশের যেসব জায়গা থেকে যে পথ ধরে বন্দরে কনটেইনার আনা-নেওয়া হয়, সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থার ওপরও বন্দরের দক্ষতা নির্ভর করে। এ জন্য সড়ক, রেল ও নৌপথে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা থাকা দরকার।
চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকার সঙ্গে রয়েছে নৌ ও রেলপথের যোগাযোগব্যবস্থা। রেলপথে বছরে আনা-নেওয়া হয় মোট কনটেইনারের ৫ শতাংশ। সক্ষমতা না থাকায় জাহাজ থেকে নামানোর পর রেলপথগামী কনটেইনার নিতে বেশির ভাগ সময় দু-তিন সপ্তাহ সময় লেগে যায়। নৌপথে কনটেইনার নেওয়ার হার ১ শতাংশের কম। সড়কপথে জট থাকে। আবার চট্টগ্রামের ডিপোগুলো (বন্দরের ১ থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে থাকা) থেকে রপ্তানি কনটেইনার জাহাজে তোলার অপেক্ষা করতে গিয়ে জেটিতে অলস অপেক্ষা করতে হয় জাহাজকে।
প্রশ্ন : নিয়োগ পাওয়া একমাত্র বিদেশি অপারেটর বন্দরে এমন সীমাবদ্ধতার মধ্যে দক্ষতা কেমন দেখিয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশে চালু থাকা চারটি টার্মিনালের একটি পরিচালনা করছে বিদেশি অপারেটর। এটি হলো সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল বা আরএসজিটি। গত বছরের জুনে সৌদির এই প্রতিষ্ঠানটির হাতে কর্ণফুলীর তীরে থাকা বন্দরের পতেঙ্গা টার্মিনালটি তুলে দেওয়া হয়। পরিচালনার ভার নেওয়ার পর তারা যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে। এখনো জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর যন্ত্রপাতি যুক্ত হয়নি। ফলে জাহাজের ক্রেন দিয়ে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়।
চালুর প্রথম বছর টার্মিনালটিতে শুধু রপ্তানি কনটেইনার জাহাজে তোলা হতো। স্ক্যানার বসানো নিয়ে কাস্টমসের অনুমোদন পেতে দেরিসহ নানা কারণে এক বছর জাহাজ থেকে আমদানি কনটেইনার নামানোর কাজ করার সুযোগ পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। গত মে মাসে তারা জাহাজ থেকে আমদানি কনটেইনার নামানোর সুযোগ পায়। ফলে এই টার্মিনালের উদাহরণ তুলনা করার এখনো সময় হয়নি।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, টার্মিনালটিতে একসঙ্গে তিন জাহাজ ভেড়ানোর তিনটি জেটি রয়েছে। একটি জাহাজ গড়ে তিন দিন অবস্থান করলে মাসে ১০টি জাহাজ ভেড়ানো যায়। সে ক্ষেত্রে তিন জেটিতে মাসে ৩০টি জাহাজ ভেড়ানো যায়। তবে টার্মিনালে কনটেইনার রাখার জায়গা কম থাকায় একসঙ্গে দুটি অর্থাৎ মাসে ২০টির বেশি জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব নয় বলে বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন।
বন্দর সূত্র জানায়, টার্মিনালটিতে এখন মাসে গড়ে চারটি করে জাহাজ ভেড়ানো হচ্ছে। এর বড় কারণ হলো, কনটেইনার রাখার আলাদা একটি ইয়ার্ড বা চত্বরে (সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড) কাজ শুরু করতে না পারা। চুক্তি অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ সৌদি কোম্পানিটিকে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমোদন পেতে বিলম্বের কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে।
একই কারণে অর্থাৎ পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এলসিএল কনটেইনারের (একই কনটেইনারে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য নিয়ে আসা) পণ্য হাতে পেতে বিলম্ব হচ্ছে আমদানিকারকদের। আমদানিকারকদের অভিযোগের পর এখন এই ধরনের কনটেইনার খালাসের সুবিধা বাড়িয়েছে কোম্পানিটি।
এসবের বাইরে আরএসজিটি চিটাগং টার্মিনালে ঘণ্টায় কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ দ্রুত হচ্ছে। যেমন, বন্দরের হিসেবে, ঘণ্টায় টার্মিনালটিতে ১৮ বক্স কনটেইনার ওঠানো-নামানো হচ্ছে। বন্দরে অন্য টার্মিনালগুলোতে এই হার গড়ে সাড়ে ১৬ বক্স।
প্রশ্ন : বিদেশি অপারেটর বন্দর পরিচালনা করলে মাশুল বাড়বে?
উত্তর: এটা নির্ভর করে বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে চুক্তির ওপর। সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারই বন্দরের মাশুল নির্ধারণ করে। তবে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের সময় সরকার-নির্ধারিত মাশুলের চেয়ে বেশি আদায় করতে পারবে কি না বা পারলে নির্ধারিত মাশুলের চেয়ে কত বেশি আদায় করতে পারবে তা চুক্তিতে নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের চুক্তিতে সরকার-নির্ধারিত মাশুল আদায়ের কথা বলা আছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে। তবে অন্য কোনো টার্মিনালে বাড়তি মাশুল আদায় হলে সেটা রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে চুক্তিতে আছে।
অবশ্য এখন সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার মাশুল বাড়ালে বিদেশি অপারেটররাও একই মাশুল আদায় করার সুযোগ পাবে।
প্রশ্ন : বিদেশি অপারেটর নিয়ে আন্দোলনকারীদের শঙ্কা কী?
উত্তর: নিউমুরিং টার্মিনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের নিয়োগপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চাইছে সরকার। এই টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে না দেওয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলনকারীরা নানা শঙ্কার কথা বলছেন। যেমন আফ্রিকার জিবুতিতে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে টার্মিনাল পরিচালনার বিরোধের বিষয়টি তাঁরা সামনে এনেছেন। আরও একটি উদাহরণ সামনে এসেছে। যেমন নিরাপত্তার প্রশ্নে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর পরিচালনা করতে দেওয়া হয়নি। মূলত বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হলে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে উদাহরণগুলো সামনে আনছে।
প্রশ্ন : এ দুটি বিষয়ে বিস্তারিত বলা যায়?
উত্তর: বিশ্বব্যাংকের পিপিপি রিসোর্স সেন্টারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার জিবুতিতে ল্যান্ডলর্ড মডেলে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ২০০৪ সালে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জিবুতির ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়। চুক্তিতে শর্ত রাখা হয়, জিবুতি একই এলাকায় অন্য কোনো বন্দর ইজারা দিতে পারবে না। আবার ডিপি ওয়ার্ল্ডের অংশীদারি কম হলেও তাদের পক্ষ থেকে বন্দরের বোর্ড সদস্য থাকবে সিংহভাগ।
২০০৯ সালে টার্মিনালটি চালুর পর চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে একই এলাকায় আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি করে জিবুতি। এরপর ২০১৮ সালে জিবুতি সরকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি বাতিল করে। ডিপি ওয়ার্ল্ড লন্ডনের আদালতে দ্বারস্থ হয়। আদালত জিবুতি সরকারকে সুদসহ ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ এবং স্বত্ব বাবদ আরও ১৪৮ মিলিয়ন ডলার ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। জিবুতি সরকার এই রায় মানেনি।
২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর পরিচালনাকারী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান পিঅ্যান্ডও পোর্টস ডিপি ওয়ার্ল্ড অধিগ্রহণ করে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি বন্দর পরিচালনা করছিল। অধিগ্রহণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর পরিচালনার ভার ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে আসে। এরপরই বিতর্ক শুরু হয়। ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া হলে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে, সন্ত্রাসীরা ঢুকে পড়বে—এমন অভিযোগ ওঠে। এই প্রচারণা এত বেশি ছিল যে ২০০৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউস থেকে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অভিযোগের বিপক্ষে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে হয়েছে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সে দেশের ছয়টি বন্দর পরিচালনার ভার দেওয়ার পক্ষে থাকলেও রাজনৈতিক চাপে ডিপি ওয়ার্ল্ড সে সুযোগ পায়নি। এতে ডিপি ওয়ার্ল্ড বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দর পরিচালনাকারী ‘পোর্টস আমেরিকার’ হাতে পরিচালনার ভার তুলে দেয়।
বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, সেগুলো মূলত নির্ভর করবে চুক্তির ওপর। যে চারটি টার্মিনালে অপারেটর নিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলছে, সেগুলোয় এখনো চুক্তি হয়নি। চুক্তিতে যা-ই থাকবে, তা করতে পারবে বিদেশি অপারেটর।
প্রশ্ন : এই শঙ্কার বিপরীতের সরকারের বক্তব্য কী?
উত্তর: সরকারের প্রধান যুক্তি হলো, বর্তমান ব্যবস্থাপনা দুর্বল, তাই বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলো (যেমন: পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল, এপিএম টার্মিনালস, ডিপি ওয়ার্ল্ড) যুক্ত হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। বন্দরের সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানোর জন্য বিদেশি অপারেটর দরকার। এতে শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতি নয়, নেপাল ও ভুটানের মতো পার্শ্ববর্তী দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এখন যে অবস্থায় আছে, সেভাবে রেখে দিলে অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য অভিজ্ঞদের সাহায্য লাগবে। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, বন্দর ব্যবস্থাপনায় তারা বিশ্বের সেরা। তারা বিশ্বের যেসব দেশে কাজ করে, সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েনি।’
প্রশ্ন : অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ী, বন্দর বিষয়ে অভিজ্ঞ, সরকার ও আন্দোলনকারীর কী বলছেন?
উত্তর: বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদ, গবেষক, বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, সরকার ও আন্দোলনকারী পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি দিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম: দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে বিতর্কে দুই পক্ষেরই যুক্তি আছে। প্রধান উপদেষ্টা ও নৌপরিবহন উপদেষ্টার ওপর আমার আস্থা রয়েছে। তাঁরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। বিদেশি বিনিয়োগে দেশবিরোধী কিছু হবে বলে মনে করি না।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান: বন্দরের দক্ষতা বাড়লে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়বে এবং আমদানিকারকেরা লাভবান হবেন। দক্ষতা বাড়াতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া জরুরি। এতে দেশি-বিদেশি উভয় প্রতিষ্ঠানই সুযোগ পাবে। অন্যান্য দেশ কীভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করে চুক্তি করেছে, তা থেকেও শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বন্দরের বোর্ড সদস্য মো. জাফর আলম: লালদিয়ার চর ও বে টার্মিনালে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আপত্তি থাকা উচিত নয়; কারণ, সেখানে অবকাঠামো নির্মাণে প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতা দেখাতে পারবে। তবে নিউমুরিং টার্মিনালে জিটুজি বাদ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগ করা যায়। এই টার্মিনালে বিদেশি অপারেটরের চেয়ে কাস্টমসসহ অন্যান্য সংস্থার কার্যক্রমে সংস্কার আনা জরুরি।
সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক (২০০৭ সালে এনসিটি বেসরকারীকরণ-সংক্রান্ত কমিটির সাবেক সদস্য): নতুন প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগ (লালদিয়া ও বে টার্মিনাল) ভালো উদ্যোগ, তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীকে দেশীয় শেয়ারবাজারে বাংলাদেশিদের জন্য ন্যূনতম ৪০ শতাংশ অংশীদারি নিশ্চিত করা দরকার। চুক্তির সময় এমন একটি শর্ত যুক্ত করা যেতে পারে। আবার নিউমুরিং টার্মিনালে প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে। সেখানে বিনিয়োগের জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দরকার ছিল না; বরং প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে শুধু অপারেশনের (পরিচালনা) জন্য দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিলেই ভালো হতো। এতে প্রযুক্তি হস্তান্তর হবে। দেশীয়রাও শিখতে পারবে।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন: বিদেশি অপারেটর শুধু টার্মিনাল পরিচালনা করবে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই অপারেটরের। মাশুলও নির্ধারণ করবে সরকার। বিশ্বের কোনো দেশে বিদেশি অপারেটর টার্মিনাল পরিচালনা করায় নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব শঙ্কার মুখে পড়েনি। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের চেয়ে জিটুজি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়ার কারণে বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলো বাছাই করার সুযোগ হয়েছে। প্রতিযোগিতা হলে হয়তো বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলো না-ও আসতে পারত। নিউমুরিং টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ হলে কারও চাকরি যাবে না। বিনিয়োগও হবে। এখানে যাঁরা চাকরি করবেন, তাঁরা বিশ্বের নানা দেশে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে চাকরি করতে পারবেন।
অর্থনীতিবিদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য, সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: চট্টগ্রাম বন্দরে সব টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ বন্দরের ওপর নিজেদের বা জনগণের কর্তৃত্ব হুমকির মুখে পড়বে। কারণ, কোনো কারণে বিরোধ হলে বিদেশি অপারেটরদের চাপে পুরো অর্থনীতি শঙ্কার মুখে পড়তে পারে। আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড ও সিঙ্গাপুরের পিএসএ টার্মিনাল দুটি কিন্তু দুই দেশের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি, তারা নিজেদের সক্ষমতা তৈরি করে নিজের দেশে বন্দর পরিচালনা করছে। অন্য কাউকে দেয়নি। তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি দিয়ে বন্দর পরিচালনা দরকার, সেখানে ঘাটতি থাকলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেওয়া যায়। শেখ হাসিনার আমলে শুরু হওয়া বিদেশি অপারেটর নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অনুসন্ধান করার কথা ছিল। বরং অন্তর্বর্তী সরকার দরপত্র ছাড়াই এই নিয়োগ নিয়ে জোরালো তৎপরতা শুরু করেছে, যা বিস্ময়কর। এ রকম দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে পারে না এই সরকার।