Thank you for trying Sticky AMP!!

বেশি দামে চাল-গম আমদানির যে ব্যাখ্যা দিলেন খাদ্যমন্ত্রী ও সচিব

সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার

বিদেশ থেকে বেশি দামে চাল-গম কেনার ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন।

খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বেশি দামে বিদেশ থেকে চাল-গম কেনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের ‘ব্যাখ্যা’ দেন খাদ্যমন্ত্রী ও খাদ্যসচিব। এ সময় তাঁরা বিদেশ থেকে কী পরিমাণ খাদ্যশস্য কেনা হচ্ছে, সেই তথ্যও জানান।

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাল-গমের দাম ওঠানামা করে। গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে তিন ডলার কম দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ কেনার জন্য যখন দর-কষাকষি করে, তখন দাম বেশি ছিল। বিশেষ করে একসঙ্গে পাঁচ থেকে সাতটি জাহাজে করে গম এনে খালাস করে রাখার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। দরপত্র অনুযায়ী, মাসে দুটির বেশি জাহাজ খালাস করা যাবে না। যার প্রতিটিতে ৫০ হাজার টন থাকে। তাই রাশিয়ার গম এনে খালাস করতে জানুয়ারি পর্যন্ত চলে যাবে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দাম আরও বেশি হবে।

Also Read: সরকার রাশিয়ার গম কিনছে বেশি দামে

তখন সাংবাদিকেরা জানতে চান, মন্ত্রণালয় যেদিন রাশিয়ার কাছ থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, সেই ২৪ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ছিল প্রতি টন ৩২৪ ডলারের কাছাকাছি। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আনুমানিক ব্যয় দাঁড়ায় প্রতি টন ৩৮০ ডলারের মতো। সেখানে সরকার ৫ লাখ টন গম কিনছেন টনপ্রতি ৪৩০ ডলার দরে। এটি একটি প্রশ্ন। আরেকটি প্রশ্ন হলো, ভিয়েতনাম থেকে যে সেদ্ধ চাল প্রতি টন ৫২১ ডলার দরে কেনা হচ্ছে, তা ভারত থেকে কিনলে কম দাম হতো। আবার ভিয়েতনাম সেই চাল সরাসরি দিচ্ছে না। থাইল্যান্ডের মাধ্যমে দিচ্ছে। তো সেখানে থাইল্যান্ড থেকে কিনলেও প্রতি টনে ৫০ থেকে ৬০ ডলার কম হতো। এর ফলে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ড থেকে সরাসরি চাল কেনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। একবার না একাধিকবার। তারা এত দিনে সাড়া দিয়েছে যে কী নমুনা, কী দাম, কীভাবে নেবেন, জাহাজ কোথায় ইত্যাদি। আগে একসময় থাইল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করার পরও তারা চাল দেয়নি বলে একটি মতবিরোধ আছে। তারপরও তারা এগিয়ে এসেছে। থাইল্যান্ড থেকে চাল নেওয়ার জন্য এখনো সরকার প্রস্তুত। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারণ, সরকারের আমদানির লক্ষ্য শুধু সাড়ে পাঁচ লাখ টন নয়, আরও অনেক বেশি। আবার গুণগত মানের কারণেও ভিয়েতনামের চালের দাম বেশি থাকে।

এই পর্যায়ে খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, থাইল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, প্রথমে দরদস্তুর হবে, তারপর পাঁচ থেকে ছয় মাস পর চাল দিতে পারবে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য হলো অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর। সেখানে দরদস্তুর পাঁচ থেকে ছয় মাস পর দিলে কী করে হবে!

রাশিয়ার গমের প্রসঙ্গ আবার উঠলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রাক্কলিত দরের চেয়ে সাত ডলার কমে কেনা হচ্ছে।’ খাদ্যসচিব বলেন, এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার। কারণ, যেহেতু কথাটি এসেছে। একটি পত্রিকায় নেতিবাচক প্রতিবেদন হয়েছে। আসলে কিছু তথ্যের ভুল-বোঝাবুঝি আছে।

ইসমাইল হোসেন বলেন, তাঁরা আলাপ–আলোচনায় বসেছিলেন ২৪ আগস্ট। সেদিন রাশিয়ার গমের দাম ছিল প্রতি টন ৩৩০ ডলার থেকে ৩৩৭ ডলার। এখানে সরকার ৪৩০ ডলারে চুক্তি করেছে সব নিয়মকানুন মেনে। এ ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয় জানা দরকার। বিষয়গুলো হলো—গম সরবরাহ করা হবে এলসি খোলার পর পর্যায়ক্রমে চার মাসব্যাপী।

সেখানে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় ছিল। কিন্তু এলসি খুলতে দেরি হচ্ছিল। তাই আরও এক সপ্তাহ দেরি হতে পারত। এ অবস্থায় গড় দর ধরে দাম ঠিক করা হয়। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তখন তারা চুক্তিমূল্যেই সরবরাহ করবে।

দূরত্বের কারণে জাহাজ ভাড়া বেশি হওয়ার কথাও জানান খাদ্যসচিব। তিনি বলেন, এই অংশে জাহাজও অপ্রতুল। যুদ্ধের মধ্যে অনিশ্চয়তার কারণে জাহাজভাড়া ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আবার সাইলোর ধারণক্ষমতা এমন নয় যে পাঁচ লাখ টন কাল এনেই নামিয়ে পরদিন রক্ষণাবেক্ষণ করবে।

Also Read: প্রয়োজনে অতিরিক্ত কিছু খাদ্যশস্য কিনে রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

আর গত বছরের অভিজ্ঞতা হলো, জাহাজ খালাসের জন্য ১০ থেকে ১২ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সবকিছু বিবেচনায় প্রতিযোগিতামূলক দরে সরকার এই সুযোগ নিয়েছে। সরকার এতে লাভবান হয়েছে। জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এটি প্রয়োজন ছিল।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সরকারের কাছে বর্তমানে দেশে ১৯ লাখ ৬৪ হাজার টনের বেশি খাদ্যশস্য (চাল ও গম) মজুত আছে।

সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী জানান, রাশিয়া থেকে ৪৩০ ডলার দরে (প্রতি টন) পাঁচ লাখ টন গম কেনা হচ্ছে। ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল কেনা হচ্ছে। ভারত থেকেও কেনা হচ্ছে এক লাখ টন চাল। মিয়ানমার থেকেও দুই লাখ টন চাল কেনা হচ্ছে। তবে সেটি এখনো অনুমোদন হয়নি। সরকারের লক্ষ্য হলো, ১০ লাখ বা রাখার জায়গা থাকলে তারও বেশি খাদ্যশস্য কেনা। এটি করা হবে আমনের সঙ্গে সমন্বয় করে।