শহীদ কবির বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্পী। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা অতিথিদের উপহার নিয়ে ভাবছিলাম। তখন শহীদ কবিরের কথা মনে হলো। আমরা শহীদ কবির এবং তাঁর সুযোগ্য সহযোগী এ এইচ ঢালী তমালের সঙ্গে কথা বললাম। শিল্পী প্রস্তাব দিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বীর শহীদ আবু সাঈদকে এচিং করার। কাজটি কঠিন ছিল। কারণ, ৮০০-১০০০টি এডিশন তৈরি করতে হবে। হাতে সময়ও ছিল কম। একটা প্লেটে হবে না, একাধিক প্লেটে করতে হবে। সেদিক থেকে সেই দুরূহ কাজটি শহীদ কবির অতি দ্রুততার সঙ্গে করেছেন। শিল্পকর্মটি নিয়ে শহীদ কবিরের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।
মতিউর রহমান: শহীদ আবু সাঈদের এচিং প্রিন্টের চিন্তা কীভাবে আপনার মাথায় এল?
শহীদ কবির: আমি ভাবলাম যে নজরুলকে নিয়ে একবার কাজ করেছি। কিন্তু এটা তো চলমান একটা ঘটনা। পুলিশের গুলির মুখে হাত প্রসারিত করে বুক পেতে আবু সাঈদ যেভাবে দাঁড়িয়েছিল, সেটাকে তো একটা প্রতীক হিসেবে নেওয়া যায়।
মতিউর রহমান: আপনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলকে নিয়ে কাজ করেছেন। আবার আবু সাঈদকে নিয়েও করলেন। এর পেছনে চিন্তা বা দর্শনটি বলুন।
শহীদ কবির: আমি কাজী নজরুল ইসলামকে দেখিনি, কিন্তু তাঁকে নিয়ে কাজ করেছি। আমি আবু সাঈদকেও দেখিনি, কিন্তু তাকে নিয়েও কাজ করেছি। তার সম্পর্কে আমার কোনো জানাশোনা ছিল না—আবু সাঈদ কার ছেলে, কোথায় তার বাড়ি। জানার দরকারও ছিল না। রাইফেলের সামনে যে ছেলেটা বিদ্রোহ করে দাঁড়িয়েছে, আমার তার রাজনৈতিক পরিচয় জানার দরকার নেই। শিল্পীর কোনো রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা শক্তি কিংবা সরকারের কাছে মাথা নত করা উচিত নয়। শিল্পী হবেন নজরুলের মতো চির উন্নত শির। আমি কখনো রাজনীতির কাছে মাথা নত করিনি। আমি শিল্পী। আমি মানবতাবাদে বিশ্বাসী। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মগ বা ফুলদানির বদলে অতিথিদের একটা শিল্পকর্ম দেওয়ার কথা চিন্তা করার জন্য আপনাকে এবং প্রথম আলোকে ধন্যবাদ। সেই শিল্পকর্ম ৮০০ জনের কাছে যাবে।
মতিউর রহমান: ধন্যবাদ শহীদ কবির। বিগত আন্দোলন, জুলাই–আগস্টের বিপ্লব–বিদ্রোহ, গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে, যার প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে থাকবে। আবু সাঈদের প্রতিকৃতি বাংলাদেশের সব ছাত্রছাত্রী, তরুণ—যাঁরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ। যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা।