
আসন্ন নির্বাচনের আগে শ্রম আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন। সংগঠনটি বলেছে, শ্রমিক স্বার্থ, শ্রম খাত ও জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই সংশোধিত শ্রম আইন কার্যকর করা জরুরি।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর হাতিরপুলে ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের প্রয়াত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আতিউল ইসলামের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আসন্ন শ্রম আইন সংশোধন অধ্যাদেশ–২০২৫ ও শ্রমিকের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসলিমা আখতার। তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। আলোচনায় অংশ নেন সহসাধারণ সম্পাদক আলিফ দেওয়ান, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর সাহা, বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতির সভাপতি বাচ্চু ভূঁইয়া, পুস্তক বাঁধাই শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ সোহেলা রুমি প্রমুখ।
এর আগে সকালে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ও সংগঠনের কার্যালয়ে প্রয়াত নেতা শাহ আতিউল ইসলামের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে তাসলিমা আখতার বলেন, ‘নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে অবশ্যই শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে। শ্রমিক স্বার্থ, শ্রম খাত ও জাতীয় অর্থনীতির বিকাশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, গণ–অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতায় শ্রম আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যেন শ্রমিকদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটায়।
তাসলিমা আখতার বলেন, প্রয়াত শাহ আতিউল ইসলাম শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম, যিনি সংগঠন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নারী-পুরুষ শ্রমিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এমন এক সময় শ্রম আইন সংশোধনের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে আছি, যখন অতীতের সব অন্যায় ও বৈষম্য দূর করে একটি মর্যাদাপূর্ণ শ্রমনীতি প্রণয়ন সম্ভব।’
লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন শ্রম আইন সংশোধন সংক্রান্ত ১৩টি নির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এর মধ্যে প্রধান দাবিগুলো হলো নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে অধ্যাদেশ জারি, শ্রমিকের প্রাণহানির বিচার ও ক্ষতিপূরণ, বাংলা ভাষার ব্যবহার ও বৈষম্যহীন ভাষা, ন্যূনতম মজুরি ও স্থায়ী শ্রম কমিশন, ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন সহজ করা, যৌন হয়রানিবিরোধী ধারা সংশোধন, প্রসূতিকালীন ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, পরিদর্শন ও লাইসেন্স নবায়ন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, শ্রমিকের প্রাপ্য লভ্যাংশ ও কল্যাণ তহবিল, শ্রমিক ইতিহাস সংরক্ষণ, আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, বেতন-মজুরি ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ও সামাজিক সুরক্ষা ও তথ্যপ্রাপ্তি।
গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর সাহা বলেন, রানা প্লাজার পর থেকে আইন সংস্কারের নামে শ্রমিকদের অধিকারের ওপর নতুন শর্ত চাপানো হয়েছে। এই অধ্যাদেশে যেন শ্রমিকের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হয়, সেটাই আজকের প্রত্যাশা।