
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, ওই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ দূতবাসের জন্য কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়নি।
বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়নের মধ্যে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ২০ থেকে ২৫ জন বিক্ষোভকারী দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা বাংলাদেশবিরোধী স্লোগানের পাশাপাশি বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেন বলে দূতাবাস কর্মকর্তারা জানান।
এই ঘটনার খবর বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হলে আজ রোববার দিল্লিতে সাংবাদিকেরা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চান। তিনি যে জবাব দেন, তার লিখিত রূপ নিজের এক্স হ্যান্ডলে প্রকাশ করেন।
রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালানো হচ্ছে। বাস্তবতা হলো সেদিন প্রায় ২০–২৫ জন যুবক বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে জড়ো হয়ে ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসের নির্মম হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দেন। তাঁরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষারও দাবি জানান।’
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর মরদেহে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এরই মধ্যে অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে ভারতে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দীপু দাস হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র ব্যানারে গতকাল বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ হয়।
জয়সোয়াল বলেন, বিক্ষোভ চলাকালে হাইকমিশনের বেষ্টনী ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা বা নিরাপত্তাঝুঁকি সৃষ্টির কোনো ঘটনা ঘটেনি। কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ওই ঘটনার ছবি ও ভিডিও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জয়সোয়াল বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারত বিদেশি মিশন ও দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে একাধিকবার অনুরোধ জানালেও দিল্লি তাতে সাড়া দিচ্ছে না। আবার দিল্লিতে থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য–বিবৃতি প্রচার নিয়েও ঢাকা অসন্তুষ্ট। এ নিয়ে গত এক বছরে দুই দেশেই হাইকমিশনারদের তলব–পাল্টা তলবের ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির ওপর ওপর ভারত নিবিড় দৃষ্টি রাখছে জানিয়ে জয়সোয়াল বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় আমাদের গভীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরছেন। দীপু দাসের বর্বর হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য আমরা জোরালো অনুরোধ করেছি।’
এদিকে দিল্লিতে হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি আজ বিকেলে ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘হিন্দু চরমপন্থী ২৫ বা ৩০ জনের একটা দল এত দূর পর্যন্ত আসতে পারবে কেন, এমন একটা সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) এলাকার মধ্যে? তাদের আসতে দেওয়া হয়েছে তাহলে? নরমালি (স্বাভাবিকভাবে) তাদের আসতে পারার কথা না। তারপর তারা হিন্দু নাগরিককে হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিয়ে চলে গেছে, তা কিন্তু নয়। আরও অনেক কিছু বলেছে, সেটা আমরা জানি।’
ওই ঘটনার পর দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের পরিবার ঝুঁকি অনুভব করছে বলেও জানান তিনি।