ক্যানসার, কিডনি, হৃদ্রোগসহ জটিল রোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বছরে চিকিৎসা ব্যয় তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া তাঁদের সাধারণ চিকিৎসা ব্যয় বছরে ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, হাটবাজারের ইজারা বাবদ আয়ের নীতিমালা সংশোধন করে দুই ক্যাটাগরিতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। নতুন নীতিমালার আলোকে একটি পরিপত্র তৈরি করা হবে। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এর আগে ২০২৩ সালের নীতিমালায় জটিল রোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় বছরে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন লাখ টাকা। আর সাধারণ চিকিৎসার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল বছরে ৭৫ হাজার টাকা।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসা ব্যয়ের বিবরণী মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।
জটিল রোগের সংজ্ঞায় নীতিমালায় বলা হয়েছে, হৃদ্রোগ, কিডনি, পক্ষাঘাত, ক্যানসার, মস্তিষ্কের সংক্রমণসহ সমজাতীয় অন্যান্য জটিল রোগকে বোঝানো হয়েছে, যা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেবেন।
সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সরকার নির্ধারিত ২৪টি বিশেষায়িত হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জটিল ও সাধারণ চিকিৎসার জন্য বাৎসরিক অনধিক এক লাখ টাকার চিকিৎসাসুবিধা দিতে পারবে। এ ছাড়া জটিল রোগের চিকিৎসা বা মুমূর্ষু রোগীর জরুরি অস্ত্রোপচারে (অপারেশন) এক লাখ টাকার বেশি প্রয়োজন হলে ওই সব বিশেষায়িত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসাবাবদ বাৎসরিক অনধিক পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কল্যাণ) জাহাঙ্গীর আলম গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যয় বাড়ানো–সংক্রান্ত নীতিমালা জারি হয়েছে। এখন পরিপত্র করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি সই হবে। এর পর থেকে এটি কার্যকর হবে।
‘ভাতার সঙ্গে দিলে ভালো হয়’
তবে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারছেন না বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধার। তাঁরা বলেন, বাৎসরিক চিকিৎসা খরচের টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। তাঁরা সরাসরি এ টাকা পান না। কত টাকা খরচ হয়, সেটা জানতেও পারেন না। সরকার হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দিয়ে ব্যয়ের বিবরণী পাঠিয়ে দেয়। এ টাকা বাৎসরিক ভাতার সঙ্গে দিলে তাঁরা বেশি উপকৃত হতেন।
কিশোরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বাৎসরিক চিকিৎসা ব্যয়ের টাকা সরকারের এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে যায়। এ টাকা মুক্তিযোদ্ধারা সরাসরি হাতে পান না। চিকিৎসা বাবদ কত বিল হয়, তা জানাও যায় না। আবার সবার পক্ষে সরকারনির্ধারিত হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয় না। এ টাকা ভাতার সঙ্গে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সংশোধিত নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের স্ত্রী বা স্বামী সরকারি টাকায় চিকিৎসাসুবিধা পাবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ২৪টি বিশেষায়িত হাসপাতালে সাধারণ ও জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য বছরে ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসাসুবিধা পাবেন। এ ছাড়া সাধারণ চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকার বেশি প্রয়োজন হলে চিকিৎসা ব্যয় বছরে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত করতে পারবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর একাধিক স্ত্রী থাকলে চিকিৎসাসুবিধা সমভাবে বিভাজিত হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী তাঁদের স্বামী বা স্ত্রীর বাইরে তাঁদের সন্তান বা অন্য কেউ এ সুবিধা পাবেন না। ২০২৩ সালের নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের স্ত্রী বা স্বামীর চিকিৎসা ব্যয়ের সুবিধা ছিল না।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর পরিচিতিমূলক দলিলপত্র মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সমন্বিত তালিকা বা এমআইএসের সঙ্গে যাচাই করে চিকিৎসাসেবা দেবে।
কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর নাম এবং তাঁদের স্ত্রী ও স্বামীর নাম সমন্বিত তালিকা বা এমআইএসে অন্তর্ভুক্ত না থাকলে তাঁরা এ নীতিমালার আলোকে চিকিৎসাসুবিধা প্রাপ্য হবেন না। নতুন নীতিমালা জারির মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে হাটবাজারের ইজারালব্ধ আয়ের ৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় নীতিমালা ২০২২ রহিত করা হয়েছে।