
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর যে হত্যাচেষ্টার মামলাটি হয়েছিল, তাঁর মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে।
রাজধানীর পল্টন থানায় করা সেই মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করতে আজ শনিবার আদালতে আবেদন করে পুলিশ। তখন আদালত মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে তদন্তের নির্দেশনা দেন বলে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
এদিনই লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে ওসমান হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে সমাহিত করা হয়। তাঁর জন্য শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়।
ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ১৪ ডিসেম্বর রাতে মামলাটি করেছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। এজাহারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা ফয়সাল করিম মাসুদসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনা ও অর্থের জোগানদাতা পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
মামলাটি তদন্তের জন্য পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবির মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহম্মেদ।
জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ওসমান হাদি গত বছরের আগস্টে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করেন। আওয়ামী লীগ বিরোধিতার পাশাপাশি তাঁর ভারতবিরোধী বক্তব্য অনেককে তাঁর সমর্থকে পরিণত করে।
ওসমান হাদি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে তৎপর ছিলেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর প্রচার চালানোর সময় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, হাদির ওপর হামলা চালিয়েছিলেন দুজন। তাঁরা এসেছিলেন একটি মোটরসাইকেলে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানায়, ওই মোটরসাইকেলে থেকে গুলি চালিয়েছিলেন ফয়সাল করিম মাসুদ। মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন আলমগীর শেখ নামের আরেক ব্যক্তি।
ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এই পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব মিলে মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা মোসা. হাসি বেগম (৬০), ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভিন সামিয়া, সামিয়ার বড় ভাই ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা।
এ ছাড়া ফয়সালের স্ত্রীর বড় ভাইয়ের বন্ধু মো. ফয়সাল, মো. কবির, রেন্ট–এ–কার ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, সন্দেহজনক একটি মোটরসাইকেলের মালিক আবদুল হান্নান, মো. হিরন, মো. রাজ্জাক এবং হালুয়াঘাট সীমান্তে মানব পাচারকারী হিসেবে পরিচিত সিমিরন দিও ও সঞ্জয় চিসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাঁদের মধ্যে ফয়সালকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে নুরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ফয়সালকে গাড়ি ভাড়া করে দিয়েছিলেন। ফয়সালের ভাড়া উবারের গাড়িচালক হিরন ও রাজ্জাককে মামলার সাক্ষী করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের ভুল নিবন্ধন নম্বরের সূত্র ধরে ৫৪ ধারায় আবদুল হান্নানকে আটক করা হলেও তাঁকে হাদি হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার না দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।
হাদির ওপর হামলার আগে ফয়সাল করিম একাধিকবার তাঁর স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন বলে জানান র্যাবের এক কর্মকর্তা। ফলে এই ঘটনায় তাঁদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
তবে মূল হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত ফয়সাল করিম ও আলমগীর এখনো পালিয়ে আছেন। তাঁরা ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁরা যদি সীমান্ত অতিক্রম করেই, তাহলে গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ফয়সাল ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সহসভাপতি ছিলেন। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি দাউদ খান নামে নিজের পরিচয় দিতেন। তিনি থাকতেন ঢাকার আদাবর থানা এলাকায়।