
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে আপনাদের সামনে তুলে ধরবে, কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
প্রতিবছর ডিসেম্বর মাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় একাত্তরের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম আর চূড়ান্ত সাফল্যের এক মহাকাব্যিক অধ্যায়। কিন্তু বিজয়ের এই উদ্যাপন কি কেবলই আমাদের? পৃথিবীতে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। বৈশ্বিক ইতিহাসে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির আত্মসমর্পণের স্মরণে রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলো ৯ মে পালন করে ‘বিজয় দিবস’; পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশ পালন করে ৮ মে ‘ভি-ই ডে’ (Victory in Europe Day)। আফগানিস্তান, ক্রোয়েশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনামসহ আরও অনেক দেশে রয়েছে বিজয়ের দিন, যা তাদের নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। প্রতিটি বিজয় দিবসই বহন করে জাতিগত মুক্তি ও সার্বভৌমত্বের ভিন্ন ভিন্ন কাহিনি। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে আপনাদের সামনে তুলে ধরবে বিশ্বজুড়ে উদ্যাপিত হওয়া এমন নানা বিজয়ের কাহিনি। আমাদের এই বিজয় মাসজুড়ে আসুন আমরা জানার চেষ্টা করি—ইতিহাসের কোন বাঁকে দাঁড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য জাতি তাদের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল, আর কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বিজয় মানে কি শুধুই নতুন করে স্বাধীনতা পাওয়া? নাকি বহু আগে হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকে বুকের ধনের মতো আগলে পুনরায় ফিরিয়ে আনাও এক মহাবিজয়? ১ ডিসেম্বর ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন দেশ পর্তুগাল সে প্রশ্নেরই উত্তর দেয়। এদিন তাদের ‘স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার দিবস’ (Restoration of Independence Day)।
ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায়, ১৫৮০ থেকে ১৬৪০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬০ বছর পর্তুগাল ছিল স্প্যানিশ শাসনের অধীন। তাদের নিজস্ব রাজা ছিল না, সার্বভৌমত্ব ছিল না। কিন্তু পর্তুগিজরা তাদের স্বকীয়তা ভোলেনি। ১৬৪০ সালের ১ ডিসেম্বর ৪০ জন অকুতোভয় বিপ্লবী—যাঁদের ইতিহাসে ‘দ্য ফোরটি কন্সপিরেটরস’ বলা হয়—তাঁরা এক দুঃসাহসিক অভ্যুত্থান ঘটান। লিসবনের রাজপ্রাসাদে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে তাঁরা স্প্যানিশ গভর্নরকে উৎখাত করেন এবং ডিউক অব ব্রাগানজাকে ‘চতুর্থ জন’ হিসেবে রাজা ঘোষণা করেন।
রক্তক্ষয়ী সে মুহূর্তেই অবসান ঘটে দীর্ঘ ছয় দশকের পরাধীনতার। পর্তুগালের আকাশে আবারও ওড়ে তাদের নিজস্ব পতাকা।
বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি, ১৯৭১ সালেও আমরা লড়েছিলাম আমাদের হারিয়ে যাওয়া অধিকার ও আত্মপরিচয় ফিরে পেতে। পর্তুগালের এই ১ ডিসেম্বরের বিজয় আমাদের শেখায়—স্বাধীনতা একবার হারালে তা ফিরে পাওয়া কঠিন, কিন্তু অদম্য সাহস আর দেশপ্রেম থাকলে কোনো বিদেশি শক্তিই চিরস্থায়ী হতে পারে না। আজকের দিনে পুরো পর্তুগাল সেই বিপ্লবীদের স্মরণ করে, যাঁরা তাঁদের হারানো মুকুট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।