
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যেমন গণহত্যার এক দগদগে স্মৃতি আছে, তেমনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার বুকে ও আঁকা আছে এক ভয়াবহ ক্ষত। আজ আমাদের ধারাবাহিক আয়োজনে জানব কম্বোডিয়ার সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো পেরিয়ে বিজয়ের পথে যাত্রার গল্প। যদিও তাদের আনুষ্ঠানিক ‘বিজয় দিবস’ (ভিক্টোরি ডে) বা মুক্তি দিবস পালিত হয় ৭ জানুয়ারি, কিন্তু সেই বিজয়ের মূল প্রস্তুতি ও চূড়ান্ত আক্রমণের সূচনা হয়েছিল এই ডিসেম্বর মাসেই।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল—মাত্র চার বছর। কিন্তু এই সময়টুকু কম্বোডিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়। পল পটের নেতৃত্বাধীন ‘খেমার রুজ’ বাহিনী দেশটি দখল করে এক নারকীয় শাসন কায়েম করে। তাদের চরমপন্থী মতাদর্শে শহরগুলো খালি করে দেওয়া হয়; বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, এমনকি চশমা পরিহিত সাধারণ মানুষকেও হত্যা করা হয়। ধারণা করা হয়, এই গণহত্যায় দেশটির ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারায়, যা ইতিহাসে ‘কিলিং ফিল্ডস’ নামে কুখ্যাত।
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কম্বোডিয়ার জনগণ আর প্রতিবেশী ভিয়েতনাম এই বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ডিসেম্বরের শুরুতেই গঠিত হয় ‘স্যালভেশন ফ্রন্ট’ (কাম্পুচিয়ান ইউনাইটেড ফ্রন্ট ফর ন্যাশনাল স্যালভেশন)। ২৫ ডিসেম্বর ভিয়েতনামি বাহিনী এবং কম্বোডিয়ার মুক্তিপাগল জনতা একযোগে খেমার রুজের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে। এটি ছিল মানবতার এক জরুরি লড়াই। খেমার রুজের নৃশংস বাহিনী দ্রুত পিছু হটতে বাধ্য হয়।
ডিসেম্বরের সেই অভিযানের ফলেই মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে, ১৯৭৯ সালের ৭ জানুয়ারি, রাজধানী নমপেন মুক্ত হয়। আজ আধুনিক কম্বোডিয়া সেই দুঃস্বপ্ন পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়েছে। তাদের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শোষকের ক্ষমতা যত নিষ্ঠুরই হোক না কেন, জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের কাছে তা টিকতে পারে না। বাংলাদেশের বিজয়ের মাসের মতোই কম্বোডিয়ার জনগণের কাছে ডিসেম্বর মাসটি মুক্তির দামামা বাজার মাস, যা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের সূচনা করেছিল।