বাজেট প্রতিক্রিয়া

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বাজেট দাবি সিআইডিডির

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন চায় সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ (সিআইডিডি)। সে লক্ষ্যে তারা সরকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও জনগণকে উজ্জীবিত করা এবং পাশাপাশি সরকারকে নীতি পরামর্শ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে তারা।

শনিবার ঢাকার একটি স্থানীয় ক্লাবে সিআইডিডি ‘প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ বাজেট’-এর ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা ট্রাস্টি সৈয়দ নুরুদ্দিন আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে সিআইডিডির আদর্শ ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।

সিআইডিডির মহাসচিব ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম মফিজুল ইসলাম ‘মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বাজেট চাই’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করতে পারছে না, রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে সার আমদানি করতে পারছে না; আবার ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। আমদানি কাঁচামালের দাম বেড়ে যাচ্ছে, জাহাজ ভাড়া বাড়ছে, আসছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রার বন্যা। আছে বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা। এসব তথ্য একত্র করলে দাঁড়ায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তেড়ে আসতে পারে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি।

জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলির সূত্রে সৈয়দ নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বছর খাদ্যের দাম বাড়লেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু আগামী বছর বাজারে খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। যে পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, তাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র, কর্মহীন বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কে নেবে এদের দায়িত্ব। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেখা যায়, রাষ্ট্র কখনো এদের দায়িত্ব নেয়নি। মূলত নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র নাগরিকের কল্যাণে অধিকতর দায়িত্ব নিতে শুরু করে। তখনই বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার মতো কর্মসূচিগুলো চালু হয়। পরবর্তীকালের বাজেটগুলোতে এসব কর্মসূচির আওতা ও সুবিধার মাত্রা ধীরে ধীরে বেড়েছে।

সরকার অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছে, সন্দেহ নেই। তা সত্ত্বেও আসন্ন উচ্চ মূল্যস্ফীতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে মফিজুল ইসলাম কিছু সুপারিশ করেছেন। বয়স্ক ব্যক্তি, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অক্ষম ও অসচ্ছল ব্যক্তির জনপ্রতি মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির জনক জে এম কেইন্স এবং নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেন মফিজুল ইসলাম। বলেন, কেইন্স ও অভিজিৎ উভয়েই প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। সেটা হলো, দরিদ্র মানুষের হাতে টাকা দাও, সেটা কাজের বিনিময়ে হোক, আর সরাসরি অর্থদান হোক। গরিব মানুষ তাদের সিংহভাগ অর্থ কেনাকাটায় ব্যয় করে। ফলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি সচল থাকে।