হাতিরপুল বাজারে বড় বড় গলদা চিংড়ির দাম কেজিপ্রতি ৯০০ টাকা। পলাশী বাজারে একই আকারের চিংড়ির দাম চাওয়া হচ্ছে ১ হাজার টাকা। নিউমার্কেটের কাঁচাবাজারে ওই চিংড়ির দাম ৮০০ টাকা করে। সুপারশপে গেলে ওই চিংড়ি দেবে আরেক লাফ—১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি। আর কারওয়ান বাজারে গেলে একই গলদা চিংড়ির দাম পড়ছে কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা।

রাজধানীর মাছের বাজারগুলোতে স্থান ও পরিবেশভেদে এভাবেই দামের ওঠা-নামা। আবাসিক এলাকার বাজারগুলোতে দাম বেশি। আবার লাগোয়া আড়ত আছে—এমন বাজারে দাম বেশ কম। কিন্তু সুপারশপে একই আকারের মাছ বিক্রি হচ্ছে বাজারের তুলনায় কিছুটা বেশি দামে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মান ভালো হওয়ার কারণেই বেশি দাম রাখা হচ্ছে।
হাতিরপুল বাজারে বড় আকারের মাগুর মাছের দাম হাঁকা হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা। ছোট আকারের কই পড়ছে কেজি ১৮০ টাকা। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকা। এক কেজি পাবদার দাম পড়ছে ৬০০ টাকা।
মাছ ব্যবসায়ী ফয়েজ মিয়া বলেন, সোয়ারীঘাট, নিউমার্কেট ও কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি দরে মাছ কিনে আনেন তাঁরা। ক্রেতা বুঝে বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। তবে খুব বেশি তফাত হয় না। ক্রেতাভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা পার্থক্য হয়।
ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে থাকেন সুফিয়া ইকবাল। হাতিরপুল বাজার থেকেই বেশির ভাগ সময় মাছ কেনেন তিনি। তবে মাঝেমধ্যে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছ থেকেও কেনেন। তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ ক্রেতাদের কাছ থেকে একটু কম দামে মাছ পাওয়া যায়।
এ কথার সত্যতাও পাওয়া গেল। ভূতের গলিতে মো. নাঈম হোসেন বড় পাতিলে মাছ বিক্রি করেন। এক কেজি মাগুর মাছ ৪৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ ১০ মিনিটের হাঁটাপথের দূরত্বে হাতিরপুল বাজারে একই আকারের মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা। নাঈম জানান, সকালে নিউমার্কেটের মাছের আড়ত থেকে মাছ কিনে এখন বিক্রি করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন পলাশী বাজারে কাতল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকায়। আছে দুই আকারের মাগুর মাছ। ছোটগুলোর দাম পড়বে কেজি ৫০০ টাকা, বড়গুলোর দাম ৬০০ টাকা। এক কেজি রিঠা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ছোট আকারের একেকটি ইলিশ। মাঝারি সাইজেরগুলোর দাম প্রতিটি ৬০০ টাকা।
মো. রমজান মিয়া বিক্রি করছেন পাঁচমিশালি মাছ। ডালায় রাখা নানা ধরনের মাছের মধ্যে রয়েছে চিংড়ি, কই, মলা-ঢেলা, পাবদা ইত্যাদি। কেজিপ্রতি দাম হাঁকা হচ্ছে ৬০০ টাকা। রমজান বলেন, সোয়ারীঘাট থেকে এভাবেই মাছ কিনেছেন। এগুলো দেশি মাছ বলে দাবি করেন তিনি।
নিউমার্কেটের মাছের বাজারে দাম কিছুটা কম। তেলাপিয়ার কেজি এখানে ১৩০ টাকা। ছোট আকারের রুই মাছের কেজি ১৮০ টাকা। তবে আকার বড় হলে তা দাঁড়াচ্ছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। এক কেজি পাবদা মাছের দাম এখানে ৫০০ টাকা। মাঝারি আকারের প্রতিটি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
এই বাজারে ৩০ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করছেন মো. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট বাজার গড়ে ওঠায় এই বাজারের অবস্থা কিছুটা পড়ে গেছে। ক্রেতা আসে কম। তাই দামও কিছুটা কম। মজিবুর জানান, সাধারণত যে আড়তে দাম কম পান, সেখান থেকেই মাছ কেনেন তাঁরা। এতে করে কিছুটা কম দামে বিক্রি করতে পারেন।
একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক আবু সালেহ নিউমার্কেট বাজার থেকে মাছ কিনছিলেন। তিনি বলেন, তাজা মাছের দাম কিছুটা কম বলেই এখান থেকে কেনেন।
তবে সুপার শপগুলোতে মাছের দাম বাজারের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। রাইফেলস স্কয়ারের আগোরায় ঘুরে দেখা যায়, ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৪৭০ থেকে ২১৫০ টাকা। ১ কেজি তেলাপিয়া মাছের দাম ২১০ টাকা। মাঝারি আকারের গলদা চিংড়ির দাম কেজিপ্রতি ৮৪৫ টাকা। আবার বড় সাইজের চিংড়ির দাম প্রতি কেজি ১৪০০ টাকা। হাতিরপুল বাজারে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকায় বিক্রি হওয়া একই আকারের রুপচাঁদা মাছ এই সুপারশপে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।
আগোরার শাখা ব্যবস্থাপক রাশেদ কবির বলেন, মাছের মান ভালো হওয়ায় কিছু মাছের দাম একটু বেশি। তবে বেশির ভাগ মাছই বাজারের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। রাশেদ জানান, উৎপাদক পর্যায় থেকে প্রতিদিনই মাছ সংগ্রহ করেন তাঁরা। নিজস্ব গ্রেড বা মান অনুযায়ী মাছগুলোই বিক্রি করা হয়। এগুলো সমান ওজনের হয়।
কারওয়ান বাজারে মাছের সবচেয়ে কম দাম পাওয়া গেছে। কই বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। রুই মাছের কেজি ২৫০ টাকা। বড় আকারের এক কেজি গলদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। এক কেজি কাচকি মাছের দাম ২৫০ টাকা। আর পাবদা মাছ মিলবে ৪০০ টাকায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শতদল দাশ দাবি করেন, এই বাজারে মাছের দাম সবচেয়ে কম। তবে ঈদের পর থেকে বিক্রেতা বেশি না আসায়, ইদানীং ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না।