Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশে ফেসবুকে ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা

  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ।

  • ফেসবুক ব্যবহার করেন ৮৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।

  • ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসা করে প্রায় ৩ লাখ উদ্যোক্তা, যার অর্ধেকই নারী।

  • উদ্যোক্তারা মাসে গড়ে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করেন।

  • সম্মিলিত বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩১২ কোটি টাকা।

করোনাকালে দেশে ই-কমার্সের ব্যবসা জনপ্রিয় হয়েছে। তারপরও মহামারিতে খাতটির ৭-৮ শতাংশ উদ্যোক্তা সাফল্য পেয়েছে। তবে উদ্যোক্তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আগামী তিন বছরের মধ্যে ই-কমার্সের বাজার গিয়ে ৩০৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে দাঁড়াবে, যা দেশীয় মুদ্রায় ২৬ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার সমান।

ঢাকা চেম্বারের আয়োজনে আজ মঙ্গলবার ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ই-কমার্স ও ভোক্তা অধিকার: প্রতিবন্ধকতা ও সুপারিশ’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির।

আলোচনায় জানানো হয়, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ। তার মধ্যে ফেসবুক ব্যবহার করেন ৮৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসা করে প্রায় ৩ লাখ উদ্যোক্তা, যার অর্ধেকই নারী। উদ্যোক্তারা মাসে গড়ে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করেন। তাতে সম্মিলিত বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩১২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। তাদের কাছ থেকে যাঁরা পণ্য কেনেন, তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই শহরাঞ্চলের বসবাস করেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার অর্ডার ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। চলতি বছর ই-কমার্সের বাজারের আকার গিয়ে দাঁড়াবে ২০৭ কোটি ডলারে, যা গত বছর ছিল ১৬৪ কোটি ডলার। সেই হিসেবে এবার ই-কমার্সের বাজার বাড়বে ২৬ শতাংশ।

ই-কমার্সে থেকে পণ্য কিনতে বেশি আগ্রহ দেখান ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী মানুষ। সব মিলিয়ে ই-কমার্সের ৬১ শতাংশ পণ্যের ক্রেতাই তাঁরা। তারপর ১৬ শতাংশ পণ্য কেনেন ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষ। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষ কেনেন ই-কমার্সের ১৪ শতাংশ পণ্য। এ ছাড়া ৪৫-৫৪ বছর বয়সী মানুষ ই-কমার্সের ৫ শতাংশ পণ্য কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তাদের অধিকাংশেরই ট্রেড লাইসেন্স নেই। উদ্যোক্তাদের একটি নিবন্ধন কার্যক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হলে, তাদের আর্থিক ঋণসুবিধা পাওয়া সহজ হবে। তাতে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করাও সম্ভব হবে
সৈয়দ আলমাস কবির, সভাপতি, বেসিস

বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে অনলাইনে পোশাক বাজারের আকার ৫৯ কোটি ডলারের, যা ২০২৩ সালে ১২৪ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে। বর্তমানে ৪৫ কোটি ডলারের ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। আসবাব ও গৃহস্থালি সরঞ্জামও কম বিক্রি হচ্ছে না, প্রায় ১৯ কোটি ডলারের।

বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তাদের অধিকাংশেরই ট্রেড লাইসেন্স নেই। উদ্যোক্তাদের একটি নিবন্ধন কার্যক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হলে, তাদের আর্থিক ঋণসুবিধা পাওয়া সহজ হবে। তাতে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করাও সম্ভব হবে। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের ই-কমার্সের আওতায় নিয়ে আসতে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

দেশে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়লেও প্রতারণার ঘটনাও ঘটেছে। সেটি উল্লেখ করে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দিন। তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যবসায় অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের অধীনে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনায়নের জন্য ই-কমার্সকে ট্রেড লাইসেন্স অন্তর্ভুক্তকরণ, ই-কমার্স পরিচালনা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, অভিযোগ সেল গঠন, ঋণপ্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদান, ই-কমার্স ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকি চিহ্নিত করে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা, লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং লজিস্টিক সাপোর্টের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

Also Read: উদ্যোক্তা মন যেভাবে গড়ে তুলবেন

ই-কমার্স বাণিজ্যে সমূহ সম্ভাবনা কাজে লাগানো এবং সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি ডিজিটাল সেল গঠন করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, করোনার সংক্রমণ হ্রাসে সামাজিক দূরত্ব মানার কারণে প্রথাগত ব্যবসায়িক খাতসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসা বেড়েছে। তবে খাতটিকে টেকসই করার পাশাপাশি সেটিকে সংগঠিত ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ই-কমার্স খাতের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে তার যথাযথভাবে সমাধান না করা হলে কিছু অসৎ লোক এর অপব্যবহার করতে পারে। সেটি হলে খাতটির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ই-কমার্স খাতের ব্যবসা বিস্তৃতির গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি যথাযথ নীতিমালা করা না হয়, তাহলে ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে।

আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহা. হ‌ুমায়ূন কবির, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, পাঠাওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, দারাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদুল হক, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা জাবিন, বিএসটিআইয়ের পরিচালক (মান) নিলুফা হক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের মো. আবদুর রউফ প্রমুখ।