বাজেট–উত্তর সংবাদ সম্মেলন

পাচারের অর্থ ফেরতের উদ্যোগ সমর্থন করে না এফবিসিসিআই

জাতীয় বাজেট
প্রথম আলো

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা সমর্থন করছে না ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটি বলছে, এভাবে অর্থ পাচারকারীদের সুযোগ দেওয়া হলে দেশের সৎ ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হবেন।

বাজেট ঘোষণার পর গতকাল শনিবার সংগঠনটির মতিঝিল কার্যালয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। বাজেটে ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু দাবি পূরণ হওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান ব্যবসায়ী নেতারা। এ ছাড়া বাজেট পাসের আগে কিছু বিষয় সংযোজন-বিয়োজনের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানোর উদ্যোগের সমালোচনা করে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা (ব্যবসায়ীরা) কেউ ২৭ বা ৩৮ শতাংশ, আবার কেউ ২২ শতাংশ কর দেব। কিন্তু ওখান (বিদেশ) থেকে ফিরিয়ে আনলে মাত্র ৭ শতাংশ কর দিতে হবে। এখানে তো ছাড় (ডিসকাউন্ট) পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য এই প্রস্তাবকে আমরা সমর্থন করি না। আমি মনে করি, এতে করে যেসব সৎ ব্যবসায়ী আছেন, তাঁরা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। সরকারের মাথায় হয়তো অন্য কোনো চিন্তা আছে। তারা হয়তো এই টাকা ফিরিয়ে ডলারের সংকট কাটাতে চাইছে। কিন্তু কোনোভাবেই এ উদ্যোগ সমর্থন করা যায় না।’

বাজেটে ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু দাবি পূরণ হওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান ব্যবসায়ী নেতারা। এ ছাড়া বাজেট পাসের আগে কিছু বিষয় সংযোজন-বিয়োজনের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বাজেটে ব্যবসায়ীদের যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘একদিকে করপোরেট করে আমাদের ছাড় দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে বিভিন্নভাবে কর নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই দেওয়া-নেওয়ার হিসাব শেষে দেখা যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত ব্যালান্সটা কিন্তু অর্থমন্ত্রীর পক্ষে যাচ্ছে। বাজেটে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব বিবেচিত হয়নি। সেগুলো পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি। অগ্রিম আয়কর (এআইটি), আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর (এটি) বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেছিলাম। তার কোনো প্রতিফলন বাজেটে দেখা যায়নি।’

সুদ আয়ে কর বাড়ানো প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুদ আয়ের ক্ষেত্রে কর ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এমন হলে টাকা বালিশের নিচে থাকবে। বিদেশে চলে যাবে। এ সিদ্ধান্ত শুধু অবৈধভাবে টাকা রাখাকে উৎসাহিত করবে না, ব্যাংকে টাকা রাখার আগ্রহও কমবে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরকারকে আমরা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত করজাল সম্প্রসারণের সুপারিশ করছি। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। তাহলে করের আওতা বাড়বে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি করা ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর আরোপের সমালোচনা করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব এনবিআরে দেওয়া হয়নি। তাহলে এই প্রস্তাব কারা দিল, কাদের স্বার্থে সরকার এমন উদ্যোগ নিল?’

সংবাদ সম্মেলনে এবারের বাজেট জনবান্ধব কি না, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপার নিয়েই কথা বলার জন্য এই আয়োজন করেছি। দয়া করে যে প্রশ্ন অর্থমন্ত্রীকে করা প্রয়োজন, তা আমাকে করবেন না।’ সংবাদ সম্মেলনে ডিজিটাল মুদ্রা চালুর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে-বুঝে এফবিসিসিআই তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজোয়ান রাহমান, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রমুখ।