Thank you for trying Sticky AMP!!

পোশাক খাতের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর তদবির

ফাইল ছবি

পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি নিজেও পোশাক খাতের ব্যবসায়ী। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের রপ্তানি আয়ের চিত্র পর্যালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী এক চিঠিতে অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছর শেষে আয়ের প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের চেয়েও কমতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাই অর্থমন্ত্রীকে পাশে চান তিনি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী গত ২৮ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে এসব কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রী পোশাক খাতের এই পরিস্থিতির জন্য ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার শক্তিশালী অবস্থানকে দায়ী করেন। এ জন্য তিনি শুধু পোশাক খাতের জন্য ডলারের বিপরীতে পাঁচ টাকা অবমূল্যায়নের সুপারিশ করেছেন। সেটিকে বিবেচনায় নিলে শুধু পোশাক খাতের জন্য প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়াবে ৯০ টাকার কাছাকাছি। এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় পোশাক খাতের জন্য একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের চিত্রটি খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতেই আমি যা বলার বলেছি। অর্থমন্ত্রী বিদেশে রয়েছেন। ফিরে এলে সাড়া পাওয়ার আশা রাখি।’ শুধু পোশাক খাতের জন্য সুবিধা চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য খাত যদি যৌক্তিক দাবি তুলে ধরতে পারে, তবে তারাও দাবি জানাতে পারে।

চলতি অর্থবছরে পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। ৪ মাসে রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। নভেম্বরে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এসব তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আশঙ্কা হচ্ছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্থর ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

মূল্যভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অন্যদের সঙ্গে টিকে থাকতে না পারার কারণেই বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন টিপু মুনশি। তিনি বলেন, সাত বছর ধরেই ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান শক্তিশালী ও স্থিতিশীল রয়েছে। অথচ একই সময়ে ভারতীয় রুপি ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, ভিয়েতনামের ডং ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে।

>

চলতি অর্থবছরের জন্য পোশাক খাতের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৮২০ কোটি ডলার
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, রপ্তানি হবে ৩ হাজার ১৯০ কোটি ডলার
চলতি অর্থবছরের শেষে ৭ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে

বাণিজ্যমন্ত্রী সাত বছর ধরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল দাবি করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। ২০১২ সালে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮১ টাকা। ব্যাংকিং চ্যানেলে বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৮৫ টাকা হয়েছে।

পোশাক খাতের জন্য ‘আরএমজি ফরেন কারেন্সি রিয়েলাইজেশন প্রোগ্রাম’ নামে একটি কর্মসূচি চালুর পরামর্শ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীকে তিনি লিখেছেন, পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা চলতে থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে ৭ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। তাতে এ খাতের রপ্তানি আয় দাঁড়াবে ৩ হাজার ১৯০ কোটি ডলার।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পোশাক খাতের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সে হিসাবে ২৫ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৭৯৮ কোটি ডলার। এই অঙ্কের ওপর ডলারপ্রতি পাঁচ টাকা অতিরিক্ত বিনিময় হার দাবি বাণিজ্যমন্ত্রীর। এতে লাগবে ৩ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছর থেকে পোশাক খাতের জন্য নতুন করে ১ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। বাজেটে এ জন্য ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পোশাক খাতের জন্য বিভিন্ন সুবিধা চলমান। এগুলো কতটা কাজে লাগছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এগুলোর বরং ত্বরিত মূল্যায়ন দরকার। কারণ, একটি সুবিধা দেওয়ার পর এ খাত আরেকটি সুবিধা চেয়ে আসছে।

যতটা না বিনিময় হারের কারণে প্রবৃদ্ধি কমছে, তার চেয়ে বেশি বৈশ্বিক কারণে কমছে বলে মনে করেন গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়েই চাহিদা কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ খুব কাজে দেয় না। রাজস্ব আদায় যেখানে কম হচ্ছে, সেখানে এই সময়ে চার হাজার কোটি টাকার কর্মসূচি হাতে নেওয়ার বাস্তবতায় সরকার আছে কি না, সেটাও একটা বড় বিষয়।