আহসান এইচ মনসুর
আহসান এইচ মনসুর

বিশেষ সাক্ষাৎকার: আহসান এইচ মনসুর

অর্থ পাচারের প্রমাণ দিতে হবে বাংলাদেশকেই

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সম্পদ জব্দ, এসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া, অর্থ পাচার এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। ১২ জুন লন্ডন সময় রাত ১০টায় দ্য ডরচেস্টার হোটেলে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম।

প্রশ্ন

আপনি এবার লন্ডনে কেন এলেন?

আহসান এইচ মনসুর: আমি এবার লন্ডনে এসেছি কতগুলো উদ্দেশ্য নিয়ে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে পাচারকৃত অর্থ ফেরত নেওয়া। এ ছাড়া আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করা। আর তৃতীয় কারণ হলো আমাদের কিছু কারিগরি সহায়তা বা টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে কথাবার্তা বলা। আর পাচার করা অর্থ ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে আবার দুটি দিক আছে। একটা হচ্ছে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কথা বলা। এখানকার ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টিকরাপশন কো–অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসিসি) আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে এবং আমাদের সহায়তা দিচ্ছে। আমাদের সঙ্গে তাদের মিটিং হয়েছে, যা খুবই গঠনমূলক ও প্রয়োজনীয়। তারা কী করেছে আমরা জানি, ভবিষ্যতে কী করবে, সেটাও আমাদের কিছুটা আভাস দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন

আমরা তো তিনজনের কথা জানি, যাঁদের সম্পদ এনসিএ জব্দ করেছে। এর বাইরে আর কারও সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগের কথা কি আপনার জানা আছে?

আহসান এইচ মনসুর: এটা এখনই আমার পক্ষে বলাটা ঠিক হবে না, এটা তাদের ব্যাপার। তারা তো প্রমাণের ভিত্তিতেই কাজ করবে। সিদ্ধান্তটা ব্রিটিশ সরকারের। তবে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের নিষেধাজ্ঞা বা স্যাংশনটা আরেকটু ব্যাপক হবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা। যেমন সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ক্ষেত্রে আংশিকভাবে স্যাংশন আরোপ করা হয়েছে, এটা পুরোপুরিভাবে হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আমরা মনে করি। এর আওতায় ভবিষ্যতে আরও কিছু পরিবার সম্পৃক্ত হতে পারে, সে সম্ভাবনাটাও আছে। এসব ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত আমরা কী তথ্য দিতে পারছি, কী ধরনের অনুরোধ বা রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছি, সেটার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। তারা সবকিছু পর্যালোচনা করে যদি বিবেচনা করে যে আদালতে দেওয়ার মতো তাদের হাতে যথেষ্ট সাক্ষ্য–প্রমাণ আছে, তাহলেই আদালতে যাবে। অর্থাৎ একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে করতে হয়। আদালতে বিচারককে বোঝাতে হবে যে কেন আমরা সম্পদ জব্দ করতে চাইছি। তাদের কাছে সেই পরিমাণ তথ্য আছে বলেই তারা এখন পর্যন্ত কয়েকজনের সম্পদ জব্দ করেছে। ভবিষ্যতে তথ্য আরও বেশি এলে আরও করতে পারবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং এনসিএ যে সম্পদ জব্দ করেছে, সেখানে আমাদেরও একটা ভূমিকা আছে। সে ভূমিকাটা আমরা পালন করছি।

# বিদেশে যেসব সম্পদ জব্দ হয়েছে, সেগুলোর উৎস যে বাংলাদেশি অর্থ—সেটা আমাদেরই প্রমাণ করতে হবে। # অর্থ পাচার যে বন্ধ হয়ে যাবে, পুরোপুরি তা নয়। তবে আমি মনে করি, ব্যাপকভাবে অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে। বিশেষ করে যেটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হতো, সেটা বন্ধ হয়েছে। # আমার লক্ষ্য মামলা না, টাকা আদায়। বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত না নিলে দেশেরই ক্ষতি। # সরকার বদল হয়ে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এখন অবশ্য একটু অন্য রকম পরিস্থিতি। তার আগপর্যন্ত কিন্তু তারা খুবই সমর্থনমূলক ছিল। # আমরা কিন্তু আগাচ্ছি, রপ্তানি বেড়েছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে, রিজার্ভ বেড়েছে, বিনিময় হার স্থিতিশীল, মূল্যস্ফীতি কমছে—এই ধারাটা বজায় রাখতে পারলে আমাদের আর পরমুখাপেক্ষী হতে হবে না।
প্রশ্ন

জব্দ করা সম্পদ কি দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব?

আহসান এইচ মনসুর: এটা তো অবশ্যই সম্ভব। এখন যে সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, এটা হচ্ছে প্রথম ধাপ। অর্থাৎ সম্পদটা যেন ক্ষয় হয়ে না যায়, সম্পদটা যেন আবার লিকুইডেটেড মানে বিক্রি হয়ে আরেক জায়গায় চলে না যায়, সেটা ঠেকানোটাই হচ্ছে প্রাথমিক দায়িত্ব। এই পর্যায়ে আমরা আছি। আর এটা শুধু যে লন্ডন বা ইউকেতে হতে হবে তা নয়, এটা তো আমাদের অন্যান্য জুরিসডিকশনও করতে হবে। এটা কিন্তু আমরা ব্রিটিশ সরকারের মাধ্যমেও যেতে পারব। কারণ, তাদের সঙ্গে আবার মিউচুয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট আছে। সুতরাং ব্রিটিশ সরকার যদি তাদের দেশে সম্পদ সংযুক্ত বা অ্যাটাচ করে, তারা এর মাধ্যমে অন্য দেশে থাকা সম্পদও অ্যাটাচ করতে পারবে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিট্যান্সের মাধ্যমে।

প্রশ্ন

এখানে এনসিএ যে সম্পদগুলো জব্দ করেছে, সেসব যে বাংলাদেশ থেকে অর্জিত টাকা দিয়ে অর্জন করা, সেটা কীভাবে প্রমাণ করবে বাংলাদেশ?

আহসান এইচ মনসুর: এটা প্রমাণ করার দায়িত্ব আমাদের এবং এটা বাংলাদেশকেই করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ার একটি অংশ বাংলাদেশে হতে হবে। সেটা হচ্ছে আমাদের টাকা কীভাবে তারা আত্মসাৎ করেছে, সেটা প্রমাণ করা। যেমন ধরেন বেক্সিমকো। তারা যত টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, সেই টাকাটা গেল কোথায়, বাংলাদেশে যদি আমরা তাদের সম্পদ দেখি, তা ১০ ভাগের ১ ভাগ। তাহলে বাকি ৯০ ভাগ সম্পদ কোথায় গেল? আর আমরা এখন দেখছি লন্ডনে তাদের ব্যাপক সম্পদ। তাহলে সম্পদটার উৎস কী? সেই প্রশ্ন করবে তারা। সম্পদের উৎসটা তো দেখাতে হবে, হঠাৎ করে কীভাবে লন্ডনে অর্থটা এল? তাহলে দুয়ে দুয়ে চার হয়ে যাচ্ছে। এভাবে আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে আমাদের টাকা থেকেই এই সম্পদগুলো অর্জন করা। এখন এই প্রমাণটা আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং এই প্রমাণগুলো আমাদের দিতে হবে ব্রিটিশ সরকারকে। তাহলে তারা কোর্টে সেগুলো উপস্থাপন করতে পারবে।

আমরা ব্রিটিশ সরকারের মাধ্যমেও যেতে পারব। কারণ, তাদের সঙ্গে আবার মিউচুয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট আছে। সুতরাং ব্রিটিশ সরকার যদি তাদের দেশে সম্পদ সংযুক্ত বা অ্যাটাচ করে, তারা এর মাধ্যমে অন্য দেশে থাকা সম্পদও অ্যাটাচ করতে পারবে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিট্যান্সের মাধ্যমে।
প্রশ্ন

আমরা তো লন্ডনের শুধু সম্পদ জব্দের কথা জানতে পারছি। লন্ডন ছাড়াও কানাডা, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশে অর্থ পাচার হয়েছে। এসব দেশ নিয়ে আপনারা কী করছেন?

আহসান এইচ মনসুর: আমরা এসব দেশেও উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা সিঙ্গাপুরে গিয়েছি, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা দুবাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, সেখানেও গিয়েছি। দুবাই ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকার বদল হয়ে যাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এখন অবশ্য একটু অন্য রকম পরিস্থিতি। তার আগপর্যন্ত কিন্তু তারা খুবই সমর্থনমূলক ছিল। এখন নতুন সরকার আসার পর তারা নিজেরাই একটু টালমাটাল অবস্থায় আছে, বিভিন্ন অর্গানাইজেশন এখন কাজ করছে না। সেখানকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট আমাদের অনেক প্রত্যাশা দেখিয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের বাংলাদেশে আসারও কথা ছিল। পরে তা বাতিল হয়ে যায়। নতুন সরকার আসার পর এ বিষয়ে আর ফলোআপ করা হয়নি এবং এখনো কিন্তু তাদের প্রশাসনিক পরিবর্তনগুলো শেষ হয়নি। যারা এখনো পদগুলো ধরে আছে, তারা কিন্তু আগের সরকারের এবং তারা জানে যে তারা হয়তো এক মাস পরে থাকবে না। এসব অনিশ্চয়তার কারণে ওখানে একটু সমস্যা হচ্ছে আমাদের জন্য। আমরা ঠিক মসৃণভাবে আগাতে পারছি না। কিন্তু অন্যান্য দেশে আমরা কথাবার্তা বলছি।

প্রশ্ন

বিভিন্ন দেশের জব্দ হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বাধাগুলো আসলে কী?

আহসান এইচ মনসুর: প্রমাণ সংগ্রহে আমাদের দুর্বলতা আছে। কাজটা অত সহজ নয়। কারণ, বাংলাদেশে কোনো দিনও আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে কোনো সম্পদ সেভাবে আনতে পারিনি। কাজেই আমাদের অভিজ্ঞতার অভাব আছে। আমাদের যেসব তদন্ত সংস্থা আছে, তারা তো একসঙ্গে কাজ করে না। আমরা সেটাকে দূর করার জন্য জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম করে দিয়েছি। তাদের বলেছি, তোমরা একসঙ্গে কাজ করো, একই রুমে বসে কাজ করো, সবকিছু শেয়ার করো। আমাদের তদন্তকারী সংস্থা চারটা: বিএফআইইউ আছে, সিআইডি আছে, দুদক আছে, এনবিআরে সিআইসি (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল) আছে। এগুলো যে যার মতো কাজ করে। একসঙ্গে কাজ করার প্রবণতা নেই। আমরা এই কালচারটাকে বদল করার চেষ্টা করছি। তো যাহোক, আমাদের দুর্বলতা আছে, এটা অস্বীকার করে কোনো লাভ নেই। এটা কাটানোর জন্য আমরা কারিগরি বা টেকনিক্যাল সহায়তাও নিচ্ছি। যেমন ব্রিটিশ সরকার বেশ কিছু অভিজ্ঞ লোক দিচ্ছে আমাদের। আমাদের টিমের সঙ্গে বসে তারা কীভাবে সাক্ষ্য–প্রমাণগুলোর ডকুমেন্টেশন করতে হবে, সেটা তাদের দেখিয়ে দিচ্ছে, শিখিয়ে দিচ্ছে। হাতে–কলমে সব শিখিয়ে দিচ্ছে। এই সহায়তা আমরা পাচ্ছি। বিশ্বব্যাংকের স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভ (স্টার) টিমও আমাদের যথেষ্ট সহায়তা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা অনেকখানি এগিয়েছি। এ কারণে আমরা আজকে যুক্তরাজ্যে এই পরিবর্তনটা দেখতে পাচ্ছি।

প্রশ্ন

দুবাই বা কানাডার মতো দেশে বাংলাদেশের পাচার করা অর্থে বাড়ি কিনেছেন কিংবা ব্যবসা করেছেন, সেসব তথ্য আপনাদের কাছে আছে? এ রকম কিছু নাম বা তালিকা কি প্রকাশ সম্ভব?

আহসান এইচ মনসুর: আমাদের কাছে কিছু কিছু তথ্য তো আছেই। এখানে দুটো জিনিস করতে হবে। একটি হচ্ছে একই লোক বা পরিবার, তাদের দেশের ভেতরে সম্পদ আছে, দেশের বাইরেও আছে। দেশের ভেতরেরগুলো তো মোটামুটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা চেষ্টা করছি এগুলোর তালিকা তৈরি করতে, যাতে এসব সম্পদ কেউ বিক্রি করতে না পারে। কাজটি অনেকটাই হয়ে গেছে। বাইরে যেগুলো আছে, সেসব ক্ষেত্রে আমাদের আইনি প্রতিষ্ঠান বা ল ফার্মগুলোর সহায়তা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক ল ফার্মগুলো ওই তথ্যগুলো অ্যাসেট ট্রেসিংয়ে যুক্ত করতে পারবে। আমাদের দেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তারা কোনো দিন অ্যাসেট ট্রেসিং করতে পারবে না। কার কোথায় কোথায় অ্যাসেট আছে, তারা সেটা জানে না।

আমাদের টিমের সঙ্গে বসে তারা কীভাবে সাক্ষ্য–প্রমাণগুলোর ডকুমেন্টেশন করতে হবে, সেটা তাদের দেখিয়ে দিচ্ছে, শিখিয়ে দিচ্ছে। হাতে–কলমে সব শিখিয়ে দিচ্ছে। এই সহায়তা আমরা পাচ্ছি। বিশ্বব্যাংকের স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভ (স্টার) টিমও আমাদের যথেষ্ট সহায়তা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা অনেকখানি এগিয়েছি। এ কারণে আমরা আজকে যুক্তরাজ্যে এই পরিবর্তনটা দেখতে পাচ্ছি।
প্রশ্ন

আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের এই প্রক্রিয়া কি শুরু হয়েছে?

আহসান এইচ মনসুর: আমরা এখনো কাউকে নিয়োগ দিইনি, কিন্তু আমরা সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছি। কী প্রক্রিয়ায় আমরা তাদের নিয়োগ দেব, এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি। এ ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি অনেকখানি এগিয়ে গেছি।

প্রশ্ন

তাদের সঙ্গে কাজের প্রক্রিয়া কেমন হবে?

আহসান এইচ মনসুর: আমরা চেষ্টা করছি লিটিগেশন ফান্ডিং (লিটিগেশন ফান্ডিং বা থার্ড পার্টি লিটিগেশন ফাইন্যান্সিং হলো একটি আর্থিক প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোনো বিনিয়োগকারী বা বিশেষায়িত ফান্ডের মতো কোনো তৃতীয় পক্ষ থেকে নেয়, যারা মামলার সফল হলে লাভের একটি অংশ পায়) করতে। এই ফান্ডিংয়ের ধরনটা হচ্ছে ইনভেস্টর সাক্ষ্য–প্রমাণগুলো দেখে বুঝবে, তারা এখানে অর্থ দেবে কি না। সম্মত হলে তারাই মামলা পরিচালনার ফিগুলো দিয়ে দেবে। এতে যদি টাকা উদ্ধার হয়, তারা হয়তো ৮০ টাকা আমাকে দেবে, ২০ টাকা তারা রাখবে। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। এই প্রক্রিয়াতেই আমরা আগাচ্ছি।

প্রশ্ন

লন্ডনভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস–এর একটি রিপোর্টে দেখলাম, আপনি বলেছেন যে কম গুরুতর অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে আর্থিক সমঝোতা করবেন। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।

আহসান এইচ মনসুর: আমাদের এখানে প্রধানত দুই প্রকারের মামলা হয়। যেমন ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) ও দেওয়ানি (সিভিল)। ফৌজদারি মামলায় আপস করা যায় না, শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। ১০০টি মামলার মধ্যে হয়তো ১০টির বেশি ফৌজদারি মামলা হবে না। ফৌজদারি মামলা বিদেশে করাটা খুব কঠিন এবং জটিল। এতে অনেক তথ্য-উপাত্ত লাগবে। কিন্তু দেওয়ানি মামলা করাটা সহজ। আমাদের একটা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তে যেতে হবে। প্রতিটি পরিবারভিত্তিক যেসব তথ্য এবং উপাত্ত আছে, সেগুলো দেখতে হবে। পরীক্ষা করতে হবে আইনগতভাবে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য–উপাত্ত আছে কি না, যা দিয়ে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। যদি যথেষ্ট পরিমাণ না থাকে, তাহলে দেওয়ানি মামলায় যেতে হবে। এই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন একমাত্র অভিজ্ঞ আইনজীবীরা, যাঁরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের আমরা মতামত নিতে পারব। এই সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে তখন আমরা দ্রুত আগাতে পারব। সাধারণভাবে বলা যায়, ক্রিমিনাল কেসের সংখ্যা হবে হয়তো ১০-১২ শতাংশ। আর বাকিগুলো কিন্তু সিভিল কেসই হতে হবে। আমি যদি প্রশ্ন করি ইংল্যান্ডে এ ধরনের কতগুলো মামলা চালু আছে বর্তমানে? সব মিলিয়ে এখানে ৮০টির মতো আছে। আমরাই যদি ১০-১৫টির বেশি দিই, তারা কি নেবে? তারা নেবে না। তা সারা দুনিয়া থেকে আসা ৮০টি মামলা। এক বাংলাদেশ থেকে তো তারা ৮-১০টির বেশি দিতে পারবে না। কাজেই বোঝা চাপিয়ে লাভ নেই। তারা আমাদের বলে দিয়েছে, আমরা কিন্তু ৮-১০টির বেশি হ্যান্ডল করতে পারব না। কাজেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন মামলাগুলো আমরা ক্রিমিনালে যাব, বাকিগুলো সিভিলে দিতে হবে। দেওয়ানি বা সিভিলে যেখানে দিতে হবে, সেখানেও দুটি বিকল্প পথ আছে। একটি হচ্ছে যে আমি মামলা শেষ পর্যন্ত নেব, আরেকটি হচ্ছে যদি অন্য পক্ষ আমার সঙ্গে আপস করতে চায়, তাহলে আমি আপসের দিকে যাব কি না। এটাও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার। এগুলো সবই আমাকে বাস্তবসম্মত হয়ে করতে হবে। কেননা আমার লক্ষ্য হচ্ছে টাকা আদায় করা। এভাবে যদি কাজ করতে পারি, সরকার টাকাটা যদি নিয়ে আসতে পারে, তাহলে একটা ভালো সমাধান হবে। কেননা, ওই মামলা করে বছরের পর বছর লইয়ারের ফি দিয়ে আমার কি লাভ। আমরা যদি ঠিকমতো বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত না নিই, তাহলে দেশের ক্ষতি ছাড়া ভালো হবে না।

সম্মত হলে তারাই মামলা পরিচালনার ফিগুলো দিয়ে দেবে। এতে যদি টাকা উদ্ধার হয়, তারা হয়তো ৮০ টাকা আমাকে দেবে, ২০ টাকা তারা রাখবে। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। এই প্রক্রিয়াতেই আমরা আগাচ্ছি।
প্রশ্ন

এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার কি বন্ধ হয়েছে?

আহসান এইচ মনসুর: অর্থ পাচার যে বন্ধ হয়ে যাবে পুরোপুরি, তা নয়। তবে আমি মনে করি, ব্যাপকভাবে অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে। বিশেষ করে যেটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হতো, সেটা বন্ধ হয়েছে। বড় যে দুর্নীতিগুলো হতো, সেটা বন্ধ হয়েছে। এটা আমি কেন বলছি? আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহটা দেখেন। অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে বলেই কিন্তু রেমিট্যান্স বেড়েছে। এমন নয় যে বিদেশে আমাদের বাঙালি ভাইয়েরা আমাদের হঠাৎ করে ৩০ শতাংশ বেশি দিচ্ছে, তাদের বেতন তো আর ৩০ শতাংশ বাড়েনি। আসলে সে সাধারণত যেটা পাঠায়, সেটাই পাঠাচ্ছে। তাদের আয় থেকে একটা বড় একটা অংশ পাচার হিসেবে বের হয়ে চলে যেত। দেখা যেত তার গ্রামের বাড়িতে টাকা দিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু টাকাটা আসলে হুন্ডির মাধ্যমে দুবাই থেকে নিউইয়র্কে চলে গেল বা দুবাইয়ের অর্থ দুবাইতে রয়ে গেল বা দুবাই থেকে লন্ডন চলে এল। এই জিনিসটা এখন কম হচ্ছে বা হচ্ছে না। সে কারণে রেমিট্যান্স বেড়ে গেছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধিটা আমাকে বলছে যে টাকা পাচার কমেছে। পুরোপুরি বন্ধ না হলেও কমেছে। পুরোপুরি বন্ধ কোনো দিনও হবে না। এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। কিছু লোক তাদের টাকা নিয়ে যাবে। এটাকে আমরা ঠেকাতে পারব না। কীভাবে ও কেন নেবে, সেটা আমি বলি। হয়তো বাবা-মা মারা গেছেন, তাঁর সম্পত্তিটা আছে, সেটা তিনি বিক্রি করে টাকাটা কী করবেন, সেটা তো নিজের কাছে নিয়ে যাবেন। তিনি হয়তো লন্ডনেই থাকেন। এটা তাঁর অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ নয়। এই টাকাটা নিজের কাছে নেওয়ার কোনো আইন বাংলাদেশে নেই। এই পাচারটা আমি ঠেকাতে পারব না। এটা বলে লাভ নেই।

প্রশ্ন

তাহলে অর্থ পাচার কমাতে হলে দেশে কোন ধরনের আইনি ব্যবস্থা বা সংস্কার প্রয়োজন?

আহসান এইচ মনসুর: প্রধানত অর্থ পাচারের সোর্সগুলো কী কী। একটা হচ্ছে রাষ্ট্রব্যবস্থার দুর্নীতির কারণে, সেটা পলিটিক্যাল করাপশন। আমরা জানি এভাবে দুর্নীতি কত হয়েছে। এই দুর্নীতি ভবিষ্যতেও যে হবে না, এমন কোনো কথা নেই, হতে পারে। দুই নম্বর হচ্ছে প্রশাসনের করাপশন। ব্যাপকভাবে ঘুষ খাওয়া হয়। একেকজন তার সে অর্থ আছে, সেটা পুলিশের লোক হোক, সিভিল সার্ভিসের লোক হোক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাব-রেজিস্ট্রার হোক—তারা তো কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে, এখনো বানাচ্ছে। এখন এ টাকাগুলো কোথায় যাবে। বড় একটা অংশ তাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে লেখাপড়া করে, সেখানে চলে যাবে। আবার আমাদের ছেলেমেয়েরা যারা বিদেশে চলে যাচ্ছে, বাবা-মা মারা যাচ্ছে, জমিগুলোকে বিক্রি করে নিয়ে চলে যাচ্ছে। এগুলো ঠেকানোর উপায় বের করতে হবে। এখানে আইন করে আপনি ঠেকাতে পারবেন না। এটা বন্ধ করতে প্রথমেই রাজনৈতিক দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এ জন্য জবাবদিহির ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে হবে। গুড গভর্ন্যান্স আনতে হবে, যে প্রচেষ্টা সরকার আংশিকভাবে নিচ্ছে। পরবর্তী সরকারকে এটা অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমান সরকারের পক্ষে তো এটা করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া প্রশাসনের যে কাঠামোগত দুর্বলতা ও দুর্নীতি, সেটা বন্ধ করার দায়িত্বও তো সরকারের। এখন আগামী সরকার এটাকে ভালোর দিকে নেবে না আবার খারাপের দিকে নেবে, সেটা একটা বিষয়। পরের বিষয়টি আরও বড় চ্যালেঞ্জ। সেটা হচ্ছে একটা রাষ্ট্র হিসেবে এই দেশ যদি আমার সম্পদের নিরাপত্তা দিতে না পারে, আমার জানমালের নিরাপত্তা যদি দিতে না পারে, নাগরিকের চাকরির ব্যবস্থা যদি না করতে পারে, তাহলে ছেলেমেয়েরা তো এখানে লেখাপড়া করেও চাকরি পাবে না। সুতরাং তারা যেখানে যাবে, তার সম্পদও তার কাছেই যাবে। কথাটা হচ্ছে, অলওয়েজ ওয়েলথ উইল ফলো ওনার অব ওয়েলথ। আইন করে ঠেকানো যাবে না; বরং সম্পদের মালিককে যদি আমি দেশে ফেরত নিয়ে আসতে পারি, ওয়েলথও ফেরত আসবে। আমাদের চ্যালেঞ্জ অনেক রকমের: রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ, প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। আমাকে এখানে চাকরি সৃষ্টি করতে হবে, বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, আমাকে আমার সম্পদের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমি একটা জমি কিনব, আরেকজন দখল করে নেবে, তাহলে তো আমার এখানে আমি টাকা খাটাব না। আমি টাকাটা নিয়ে ওখানে খাটাব। এগুলো ঠিক করতে না পারলে আমি যতই বলি অর্থ পাচার বন্ধ করলাম, সেটা মিথ্যা বলা হবে।

প্রশ্ন

সবশেষে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাচ্ছি।

আহসান এইচ মনসুর: অর্থনীতিতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। এই সরকার যখন এল বা আমিও এলাম গভর্নর হিসেবে, আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দু-তিনটা। একটা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। দুই নম্বর হচ্ছে বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। দুটোই পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিনিময় হার যদি অস্থিতিশীল হয়, অবমূল্যায়ন ঘটে, তাহলে মূল্যস্ফীতিও চলে যাবে আকাশের দিকে। এটার সঙ্গে আবার অর্থনীতিতে আস্থাহীনতাও সৃষ্টি হয়। বিনিময় হার যদি স্থিতিশীল থাকে, তাহলে আস্থাও থাকে। অস্থিতিশীল বিনিময় হারে আস্থা থাকে না। তিন নম্বর হচ্ছে আমাকে একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বাড়াতে হবে। এটা আস্থা সৃষ্টি করবে এবং বিনিময় হারকে স্থিতিশীলতা দেবে, সঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমাবে। এই তিনটাও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং তিনটা চ্যালেঞ্জকেই আমাকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এখন যদি আমি বলি যে এখানে আমাদের অর্জন কী? অবশ্যই খুব ভালো অর্জন বলে আমি মনে করি। এক নম্বর হচ্ছে আমি যখন আসি, বিনিময় হার সরকারিভাবে ১১৮ টাকা থেকে ১২০ টাকা ছিল। এখন তা ১২৩ টাকা। মানে অল্প বেড়েছে। রিজার্ভ কি কমেছে। না, রিজার্ভ বেড়েছে এবং সামনে ব্যাপকভাবে আরও বাড়বে বলেই আশা করছি। তিন নম্বর, মূল্যস্ফীতি কি বেড়েছে না কমেছে? হ্যাঁ, হয়তো আশানুরূপভাবে কমেনি। এটা এখনো ৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে আছে। যদিও আমার ধারণা ছিল এটা ৭-৮ শতাংশে চলে আসবে। এটা আসেনি এখনো, ভবিষ্যতে চলে আসবে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ দশমিক ৫, সেটা এখন হয়েছে ৮ দশমিক ৫। কতখানি কমল? ৬ শতাংশ। আমরা কিন্তু আগাচ্ছি। নন–ফুড বা খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও কমেছে। ১২ শতাংশ ছিল, এটা সাড়ে ৯–এর মতো আছে। ফুড যেহেতু কমে আসছে, নন–ফুডও কমবে।

বিনিময় হার আমরা তো বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। কোনো পরিবর্তন হয়েছে? হয়নি। মানুষের আস্থা চলে আসছে। আমাদের ইকোনমিক পারফরম্যান্সটা কী? আমাদের রপ্তানি কি বাড়েনি? ১০ শতাংশ হিসাবে বাড়ছে, যা খুবই ভালো। বর্তমান বিশ্বের যে পরিস্থিতি, তাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিন্তু অনেক। আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। তাহলে আমরা কতখানি সম্পদ পেলাম। আমরা গত বছরের চেয়ে এ বছর রেমিট্যান্স পেয়েছি অতিরিক্ত ৭ বিলিয়ন ডলার। আর রপ্তানি থেকে পাচ্ছি অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ অতিরিক্ত ১২ বিলিয়ন আমার হাতে আসছে। অনেক অর্থ। এই ধারাটাকে যদি আমরা বজায় রাখতে পারি, তাহলে তো আমাদের পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না।

আমি মনে করি যে আমাদের অর্জন হয়েছে। পাকিস্তানে যখন আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি করে বিনিময় হারকে বাজারমুখী করে দেওয়া হলো, তাদের মুদ্রা চলে গিয়েছিল ৩৬০–এর ওপরে। পরবর্তী সময়ে ২৮৪ হয়, বর্তমানে তা ২৮০। অথচ আমরা করেছি আমাদের সময়মতো। আইএমএফ আমাকে প্রেশার দিল এক্সচেঞ্জ রেট ঠিক করার জন্য। আমরা তো করিনি। ছয়, সাত, আট মাস অপেক্ষা করেছি। কারণ, পরিস্থিতি ভালো হতে হবে। কেননা, এটা আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার মতো অবস্থা। আমি যখন আগুনে ঢুকব, হাতে অগ্নিনির্বাপণযন্ত্রটা নিয়ে ঢুকতে হবে। আর সেটা হচ্ছে স্থিতিশীলতা। মানুষের আস্থাটা তৈরি করতে হবে। আমি আট মাসে আস্থাটা তৈরি করে নিলাম। এই বাজার এখন স্থিতিশীল। আমি একটা ডলারও বিক্রি করিনি। বিনিময় হারের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

 আইএমএফ যদি আমাকে বলত পাঁচ মাস বা ছয় মাস আগে তুমি বিনিময় হার ব্যবস্থা বাজারের ওপর ছেড়ে দাও, এটা হয়তো ১৫০ টাকা যেত, যেটা মানুষের ধারণা ছিল। যেটা ছেড়ে দিলে ১৫০ টাকায় চলে যাবে, সেটা তো আমি করিনি। আমি নিজে তাদের বলেছি যে আমরা করব না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি সন্তুষ্ট যে বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। যখন আমরা সন্তুষ্ট হলাম, বললাম যে এখন আমরা করব। এ কারণে বাংলাদেশের যে বিনিময় হারের উদারীকরণ হলো, সেটা সঠিক সময়ে হয়েছে। কোনো নড়নচড়ন হয়নি, যা আইএমএফও বিশ্বাস করতে পারেনি। তারপর তো এক মাস হয়ে গেল। সুতরাং এখন তারা মানছে যে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে এবং বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।

Attribution

বিনিময় হার আমরা তো বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। কোনো পরিবর্তন হয়েছে? হয়নি। মানুষের আস্থা চলে আসছে। আমাদের ইকোনমিক পারফরম্যান্সটা কী? আমাদের রপ্তানি কি বাড়েনি? ১০ শতাংশ হিসাবে বাড়ছে, যা খুবই ভালো। বর্তমান বিশ্বের যে পরিস্থিতি, তাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিন্তু অনেক।