
শ্রম উপদেষ্টা বলেছেন, নতুন শ্রম অধ্যাদেশ, আইএলওর তিন কনভেনশন অনুসমর্থন, ৪৮ হাজার শ্রমিকের নামে মামলা প্রত্যাহারসহ অনেক সংস্কার করা হয়েছে।
সংস্কারের মাধ্যমে এক বছরে দেশের শ্রম খাতকে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে নতুন মর্যাদায় উন্নীত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শ্রমিক, মালিক ও সরকার মিলে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করার ফলে তা সম্ভব হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আজ সোমবার ঢাকায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ‘এক বছরের অর্জন ও সাফল্য’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে শ্রম খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরেন শ্রম উপদেষ্টা। এতে শ্রমসচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া সভাপতিত্ব করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এক বছরে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ করা হয়েছে। এতে গৃহকর্মী ও কৃষিশ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার, প্রসূতি ছুটি ১২০ দিনে নির্ধারণ, শ্রমিকদের কালোতালিকা ভুক্ত করা নিষিদ্ধ, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে ২০ জন সদস্যের সম্মতি এবং ভবিষ্যৎ তহবিল বাধ্যতামূলক করাসহ যুগান্তকারী সংস্কার আনা হয়েছে।
এ ছাড়া ‘কর্মহীন শ্রমিকদের সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০২৫’ চালু করা হয়েছে। পোশাক খাতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ৭টি শিল্প খাতের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আরও ২১টি খাতকে এ কাঠামোয় আনার প্রক্রিয়া চলছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ অনুসমর্থন করে আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাটিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ, যারা আইএলওর ১০টি মৌলিক কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এক বছরে বেক্সিমকো গ্রুপের ৩১ হাজার ৬৬৯ শ্রমিক-কর্মকর্তার পাওনা পরিশোধে ৫৭৫ কোটি টাকা ঋণসহায়তা, নাসা গ্রুপের ১৭ হাজার ১৩৪ শ্রমিক-কর্মচারীর ৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পরিশোধ, পাওনা পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া মালিকদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারির উদ্যোগ গ্রহণ, ৩৪৭টি নতুন ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন ও ৪৮ হাজার শ্রমিকের নামে দায়ের হওয়া ৪৪টি রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, ৩ হাজার ৪৫৩ শিশুকে শ্রম থেকে প্রত্যাহার করা, ১১ হাজার ৬৯১টি পরিদর্শন ও ১৬টি মামলা দায়ের, পোশাক খাতে ৩৪৭টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন এবং ১ হাজার ২৭০ নারী শ্রমিককে ৩২ কোটি ৬৫ কোটি টাকার মাতৃত্বকালীন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় তহবিল ও শ্রমিককল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ২২ হাজার ৯৪৮ শ্রমিক ও পরিবারকে ৮০ কোটি টাকার বেশি চিকিৎসা, মৃত্যু ও শিক্ষাবৃত্তি বাবদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থায়নে ১ হাজার ৭৫৫ জন কর্মহীন শ্রমিককে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা সহায়তা করা হয়েছে। এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিমের মাধ্যমে ৮১ জনকে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা।
এক বছরে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৫ দেশের সমন্বয়ক নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। রাজশাহীতে চালু করা হয়েছে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। ময়মনসিংহে নতুন শ্রম আদালত স্থাপন এবং শ্রম আদালতগুলোতে ১৩ হাজার ১৩টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবে, শ্রম আইনে যুক্ত করা এমন ধারাকে স্বাগত জানায়নি পোশাক খাতের মালিকপক্ষ, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকেও তারা এতে রাজি হননি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, মালিকপক্ষের চাওয়ার তুলনায় সামান্য হেরফের হয়েছে। আর মালিকপক্ষ তো শ্রম আইনের সংশোধনই চায়নি।