
ভারতের বহুজাতিক কোম্পানি আইশারের নতুন দুটি সিরিজের ছয় ধরনের ট্রাক দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে রানার মোটরস লিমিটেড। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সিরিজ দুটি হচ্ছে—আইশার প্রো ২০০০ ও আইশার প্রো ৬০০০। দেশের আসন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্যিক পরিবহনগুলো (ট্রাক) তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রানার মোটরস।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় এসব ট্রাকের আনুষ্ঠানিক বাজারজাতকরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, ভলভো আইশার কমার্শিয়াল ভেহিকেলের দক্ষিণ এশিয়া ও আসিয়ান অঞ্চলের প্রধান শান্তনু শ্রীবাস্তব, রানার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসাইন প্রমুখ।
সুইডেনের ভলভো গ্রুপ ও ভারতীয় আইশার মোটরসের যৌথ উদ্যোগ ভিই কমার্শিয়াল ভেহিকেল লিমিটেড (ভিইসিভি) আইশার ব্র্যান্ডের ট্রাকগুলো তৈরি করছে। বাংলাদেশে এসব ট্রাকের পরিবেশক হলো রানার মোটরস।
রানার মোটরস জানায়, ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এসব ট্রাক বাজারে ছাড়া হয়েছে। এরপর ব্যবহারকারীদের পরামর্শের আলোকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে ছাড়া হয়েছে। নতুন এসব ট্রাক ক্রেতাদের সার্বিক সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হবে বলে আশা করছে কোম্পানিটি।
রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘নতুন নতুন প্রযুক্তির সুবাদে অটোমোবাইল বা গাড়িশিল্পে প্রতিনিয়ত বড় পরিবর্তন আসে। সেই ধারাবাহিকতায় ভলভোর সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ট্রাক বাজারে আনছি আমরা। আশা করছি, এসব ট্রাক দেশের আমদানি-রপ্তানি, খাদ্যসামগ্রী ও অবকাঠামো নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
হাফিজুর রহমান খান জানান, চালকদের উপযোগী করে বানানো নতুন এসব ট্রাক চলবে স্মার্ট পদ্ধতিতে। ফলে ট্রাকগুলোর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমবে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমবে। নতুন এ দুটি সিরিজের ট্রাক ছাড়া বিদ্যমান সিরিজের ট্রাকগুলোয়ও স্মার্ট প্রযুক্তি সংযোজন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ভলভো আইশার কমার্শিয়াল ভেহিকেলের দক্ষিণ এশিয়া ও আসিয়ান অঞ্চলের প্রধান শান্তনু শ্রীবাস্তব বলেন, ‘স্মার্ট দেশ গড়তে আমাদের স্মার্টফোন ও স্মার্ট টেলিভিশনের মতো স্মার্ট ট্রাকও প্রয়োজন। সেই চিন্তা থেকেই বাংলাদেশে ব্যবহারের উপযোগী করে নতুন ট্রাকগুলো তৈরি করা হয়েছে। এতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী নকশা ও জ্বালানিসাশ্রয়ী ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এসব ট্রাক দেশের সংকীর্ণ (ন্যারো) সড়কেও চলতে সক্ষম হবে।
রানার মোটরস জানায়, দেশের গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে ৪ দশমিক ৯ টন থেকে ৪৯ টন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের নেক্সট জেনারেশন ট্রাক রয়েছে আইশারের। বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে বাণিজ্যিক যানবাহনের বাজার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল, সমুদ্রবন্দর ও উড়ালসড়কের মতো মেগা প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে আইশার ট্রাক। নতুন সিরিজের ট্রাকগুলোও আসন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় অবদান রাখবে।
বাজারে নতুন আসা ২০০০ সিরিজের দুটি ট্রাক রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আইশার প্রো ২০৪৯ ও আইশার প্রো ২০৫৫ সিটি। অন্যদিকে ৬০০০ সিরিজের ট্রাক চারটি হচ্ছে আইশার প্রো ৬০৩১এইচ, আইশার প্রো ৬০৩১টি, আইশার প্রো ৬০৪৯ ও আইশার প্রো ৬০২৫ টিএম।
রানারের কর্মকর্তারা জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গাড়িগুলো বিশেষ নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও চালকদের উপযোগী করে বানানো হয়েছে। যেমন আইশার প্রো ৬০৩১টি ট্রাকটি দেশের সবচেয়ে বড় ডাম্প ট্রাক। এটি নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বালু, পাথর ও স্ক্র্যাপ বহন করে। ২৮০ হর্সপাওয়ারসম্পন্ন ট্রাকটি ২০ কিউবিক মিটার পণ্য বহনে সক্ষম। এটিতে রয়েছে ইন্টেলিজেন্ট ড্রাইভার ইনফরমেশন সিস্টেম (আইডিআইএস) প্রযুক্তি। ট্রাকটি ঠিকভাবে চলছে কি না কিংবা কোনো স্থানে কোনো ত্রুটি রয়েছে কি না, তা চালককে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানাবে এ প্রযুক্তি।
আইশার প্রো ৬০২৫ টিএম ট্রাকটি মূলত নির্মাণকাজের রেডি মিক্স কংক্রিট (ট্রানজিট মিক্সার) বহনের গাড়ি। রানার মোটরসের কর্মকর্তাদের দাবি, এটি দেশের মধ্যে সর্বাধিক বিক্রীত ট্রানজিট মিক্সার ট্রাক। এটি আইডিআইএস প্রযুক্তিসম্পন্ন ৭ কিউবিক মিটার পণ্য বহনে সক্ষম। ট্রাকটি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে।