উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমান সরকার অর্থনীতিতে যে সংকটগুলো পেয়েছিল, এখনো তার বেশির ভাগ রয়ে গেছে। যেমন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের দুর্দশা ইত্যাদি। অর্থনীতিতে এখনো কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হয়নি। প্রবৃদ্ধি মন্থর, বিনিয়োগে খরা, কর্মসংস্থানে স্থবিরতা, রপ্তানিতে ভাটা এখনো।
তবে বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্যে কিছুটা স্বস্তি তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন রিজার্ভ ছিল ২০ বিলিয়ন ডলার, এখন তা বেড়ে ২৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাজারে ডলারের জোগান বেড়েছে। যার বড় কারণ প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বেড়েছে। অর্থ পাচার কমে যাওয়ার কারণেই মূলত প্রবাসী আয় বেড়েছে। পুরোনো অর্থ পাচারকারীরা চলে গেছে, কিন্তু অন্য কেউ যেন অর্থ পাচার করতে না পারে—তার জন্য নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা।
নানা উদ্যোগের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমানো সম্ভব হলেও মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের যন্ত্রণা পুরোপুরি লাঘব করা যায়নি। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো এখনো কষ্টে আছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হলেও গন্তব্য অনেক দূরে।
আর্থিক খাতের দুর্দশা কাটতে কাজ শুরু হয়েছে। আর্থিক খাতের দুর্দশা কাটানোর নানা উদ্যোগের ফলাফল কী হবে, তা এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে গত এক বছরে দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে। এসব খাতে যেসব বিষফোড়া ছিল, তা আগের মতোই আছে, ব্যথাও কমেনি। বড় কোনো চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু কাজ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সার্বিকভাবে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা বলা যাবে না। এ কারণে প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত আছে। নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, বিনিয়োগ–খরা কাটেনি। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বাধা ছিল, সেগুলো দূর করা যায়নি।
এ অবস্থায় সার্বিকভাবে অর্থনীতি সচল রাখা সব সময় চ্যালেঞ্জের। অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কার যত দ্রুত ও চতুরতার সঙ্গে শেষ করা যায়, ততই ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে সংস্কার উদ্যোগ নিলে তাতে বাধা আসে। যেমন রাজস্ব খাতের সংস্কারের উদ্যোগের সময় এনবিআরে আন্দোলন হলো। কঠোরভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রতিরোধ এল। এসব প্রতিরোধ হলো অপতথ্যের ভিত্তিতে। সরকারকে অপতথ্যের বিপরীতে সঠিক তথ্য দিতে হবে।
সংস্কারের জন্য শুধু সদিচ্ছাই যথেষ্ট নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। কোনো সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হলে একশ্রেণির আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ীরা তাতে বাধা তৈরি করেন। তাই সংস্কারের জন্য সরকারের সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা থাকাটাও জরুরি।
জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক, ঢাকা কার্যালয়।