মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল

সাক্ষাৎকারে এমজিআই চেয়ারম্যান

যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি ১০-১২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। সরকারি প্রতিনিধিদলের বাইরে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা দেশটির রপ্তানিকারকদের সঙ্গেও দফায় দফায় আলোচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রে সেই আলোচনায় ব্যবসায়ীদের পক্ষে অংশ নেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। শুল্ক কমানোর ঘোষণার পর এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ মিলাদ

প্রশ্ন

পাল্টা শুল্ক কমাতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ভূমিকা কী ছিল?

মোস্তফা কামাল: যুক্তরাষ্ট্র সফরের এক সপ্তাহ আগে সরকার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করে। এরপর থেকেই আমরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে দফায় দফায় এখানকার রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা বৈঠক থেকেই আমাদের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের টেলিফোন করে বিষয়গুলো জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বেসরকারি খাতের আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও অংশ নিয়েছেন।

প্রশ্ন

গত দুই দিনে কাদের সঙ্গে আলোচনা হলো? কেমন সাড়া পেয়েছেন?

মোস্তফা কামাল: গত দুই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সঙ্গেই মূলত আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার প্রথম প্রহরে) যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রপ্তানিকারক কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়। এর বাইরে এলপিজি, ভূট্টা, তুলা রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা বিষয়টি খুবই ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। পণ্য আমদানিতে আমাদের অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দিয়েছে।

প্রশ্ন

তাৎক্ষণিকভাবে পণ্য আমদানির কোনো সমঝোতা হয়েছে?

মোস্তফা কামাল: যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠকে পণ্য আমদানির জন্য কয়েকটি সমঝোতা হয়েছে। আমরা এই সমঝোতা করেছি, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে আমাদের উদ্যোগ যে বাস্তবসম্মত তা প্রমাণের জন্য এই সমঝোতা করেছি। যেমন, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে আমি ১৩০ মিলিয়ন বা ১৩ কোটি ডলারের ৩ লাখ টন সয়াবিন বীজ আমদানির সমঝোতা চুক্তি করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন বীজের মান ভালো। আবার দর–কষাকষি করে প্রতিযোগিতামূলক দামও পেয়েছি। ফলে তাৎক্ষণিক সমঝোতা করা সহজ হয়েছে। পণ্য আমদানিতে আরও কয়েকটি সমঝোতা হয়েছে।

প্রশ্ন

সমঝোতা ও অঙ্গীকার মিলে আমদানি কত বাড়তে পারে?

মোস্তফা কামাল: সয়াবিনবীজের উদাহরণ দিই। আমরা বছরে বিভিন্ন দেশ থেকে ২৪-২৫ লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানি করি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হতো সাত-আট লাখ টন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই আমদানি ১৫-২০ লাখ টনে উন্নীত করা যায়। এর বাইরে ভুট্টা, গম, এলপিজি, তুলাসহ অন্যান্য পণ্য রয়েছে। সব মিলিয়ে আমদানি কয়েক বিলিয়ন ডলার বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, বাংলাদেশে বছরে শুধু কৃষিপণ্য আমদানি হয় ১৫ বিলিয়ন ডলারের।

প্রশ্ন

পাল্টা শুল্ক কমিয়ে আনার উদ্যোগে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মোস্তফা কামাল: যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমাতে বিশ্বের অনেক দেশ কিন্তু লবিস্ট নিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। এর পরও বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক কমে প্রতিযোগী অনেক দেশের সমান ও ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো দেশের চেয়ে নিচে নেমে এসেছে। এটা একটি বড় অর্জন। এ জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানসহ অনেকে ভূমিকা রেখেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের অনেক সংস্থার কর্মকর্তারা ফেব্রুয়ারি থেকে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও আমদানির সমঝোতা ও অঙ্গীকার করে বিষয়টি এগিয়ে দিয়েছেন। তবে এখানে থেমে থাকলে হবে না। যুক্তরাষ্ট্র কৃষিপণ্য রপ্তানিতে জোর দিচ্ছে। সরকারও চাইছে, দেশটি থেকে কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে। আমরাও এই উদ্যোগে সাড়া দিয়েছি। তাই পাল্টা শুল্ক আরও কমিয়ে আনা যায় কি না, তার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানিও ১০-১২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।