
বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই রেটিং–২০২৪ এ জায়গা করে নেওয়া দুইটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি আইডিএলসি। টেকসই অর্থায়ন নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আইডিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম জামাল উদ্দিন।
টেকসই রেটিংয়ে জায়গা করে নেওয়ার অন্যতম শর্ত টেকসই অর্থায়ন। টেকসই অর্থায়নে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি কেমন?
এম জামাল উদ্দিন: একুশ শতকের আধুনিক ও শিল্পায়নকেন্দ্রিক বিশ্বে টেকসই উন্নয়নই নিরাপদ ভবিষ্যতের সূত্র। আইডিএলসি ফাইন্যান্স সব সময় পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পে সমর্থন দিয়ে আসছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে গ্রাহকদের টেকসই উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করছি আমরা। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ পরিবেশবান্ধব এবং মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই অর্থায়ন খাতে বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া এই সীমার বিপরীতে আইডিএলসি গত বছর ৫৮৫ কোটি টাকা পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন করেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির মোট মেয়াদি ঋণের ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া আমরা টেকসই অর্থায়ন করেছি ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকার, যা মোট ঋণ বিতরণের ৩৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।
”২০২৪ সাল শেষে আমাদের মোট টেকসই ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ছিল ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। যেখানে সাধারণ ঋণের ক্ষেত্রে খেলাপি ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।এম জামাল উদ্দিন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইডিএলসি
টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিতরণ করা ঋণের আদায় পরিস্থিতি কেমন?
এম জামাল উদ্দিন: সবুজ ও টেকসই অর্থায়নে আইডিএলসির ঋণগ্রহীতাদের সময়মতো ঋণ পরিশোধের হার বেশ সন্তোষজনক। বিশেষত, আমাদের এমন অনেক পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি বা স্কিম আছে, যেগুলোতে টেকসই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য গ্রাহকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়। এসব কর্মসূচির কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে আইডিএলসি নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে তাঁদের সহজে অর্থায়ন করতে পারে এবং গ্রাহকেরাও কম সুদে ঋণ পেয়ে ব্যবসার পরিসর বাড়াতে পারেন। সে কারণে তাঁরা সময়মতো ঋণ পরিশোধেও আগ্রহী হন। আমাদের পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচির খেলাপি ঋণের হার শূন্য শতাংশ। এটি সম্ভব হয়েছে দক্ষ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, সঠিক গ্রাহক নির্বাচন ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের কারণে। ২০২৪ সাল শেষে আমাদের মোট টেকসই ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ছিল ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। যেখানে সাধারণ ঋণের ক্ষেত্রে খেলাপি ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচকে আপনার প্রতিষ্ঠান কেমন করছে?
এম জামাল উদ্দিন: টেকসই কোর ব্যাংকিং বলতে বোঝায় পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসন (ইএসজি) নীতি অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা। যার মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধব ঋণ, টেকসই প্রকল্পে সুদে ছাড়, পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রম ইত্যাদি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি বা স্কিমের (গ্রিন রিফাইন্যান্স, টিডিএফ, এসআরইইউপি) মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৬৯ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন গ্রহণ করে আইডিএলসি। এ জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী যেমন জাইকা ও এসআরইইউপি আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। আইডিএলসিতে একটি গ্রিন ব্যাংকিং ইউনিট ও সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইউনিট আছে, যারা পরিবেশবান্ধব চর্চা দেখভাল করে। আমরা কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কম কাগজ ব্যবহার, কাগজের পুনর্ব্যবহার ও শক্তি সাশ্রয়ের জন্য সচেতন করি। আমাদের প্রধান কার্যালয় ও শাখাগুলোয় স্বয়ংক্রিয় বাতি, পানিসাশ্রয়ী কলসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশজুড়ে আইডিএলসির সেবার পরিধি কতটুকু বিস্তৃত হয়েছে?
এম জামাল উদ্দিন: আইডিএলসিতে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ স্থায়ী কর্মী রয়েছেন, যাঁরা দেশের ৪৭টি শাখা ও সেলস পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের বড় বড় শহর, উপশহর, এমনকি বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামীণ এলাকায়ও আমাদের শাখা রয়েছে। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই অর্থায়নের সুবিধা ছড়িয়ে দিতে আমরা ১০টি সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স হেল্প ডেস্ক চালু করেছি। সেখানে নতুন ও পুরোনো গ্রাহকদের সেবার তথ্য জানানো হয়। ২০২১ সালে মুঠোফোনে আর্থিক সেবার প্ল্যাটফর্ম বিকাশের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা বিকাশ ডিপিএস নামে সহজ, ঝামেলাহীন ডিজিটাল সঞ্চয় প্রকল্প চালু করি। এই সঞ্চয় প্রকল্প নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি গ্রাহক এই উদ্যোগে উপকৃত হয়েছেন।
আপনাদের সিএসআর উদ্যোগ সমাজে কতটুকু ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে?
এম জামাল উদ্দিন: আইডিএলসির করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম বাস্তবায়নে এমন কৌশল নির্ধারণ করা হয়, যাতে তা সমাজে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। আমাদের উদ্যোগগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী, শিশু, রোগী ও দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে সহায়ক। আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও নার্সিং কলেজে প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছি। যার মাধ্যমে তাঁরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আত্মনির্ভরশীল হয়ে পরিবার ও সমাজে অবদান রাখার পথ তৈরি হচ্ছে।