ব্যাংকের নতুন পর্ষদ ও এমডি হিসেবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর একটা বিষয় নিশ্চিত করি যে কেউ টাকা তুলতে এসে ব্যাংক থেকে ফেরত যাবে না। আমাদের ব্যাংকের এটিএম থেকে ইউসিবির গ্রাহকদের পাশাপাশি অন্য ব্যাংকের গ্রাহকেরাও নির্বিঘ্নে টাকা তুলতে পারবেন। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, তাঁদের সুযোগ-সুবিধা কমবে না, কেউ চাকরি হারাবেন না। সব সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। মূলত এই দুই পদক্ষেপ ব্যাংকটিকে বড় সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করে।
এই দুই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আমরা নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছি। শুরুর দিকে অনলাইনে প্রতিদিন সভা করা হতো। পরে সরাসরি ১৬টি অঞ্চলে গিয়ে আমরা টাউন হল সভা করি। এই সভাগুলোতে জানিয়ে দেওয়া হয়, ব্যাংকের এমন বড় কোনো ক্ষতি হয়নি, যা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব হবে না। যে সমস্যা হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ আদায়ে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে বলা হয়। এ ছাড়া কাউকে অযাচিত কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এর ফলে শুধু প্রথম ৪ দিনে ৪০৯ কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। আমরা শুরু থেকে একাধিক ক্যাম্পেইন হাতে নিই। কর্মকর্তারা এসব ক্যাম্পেইনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ফলে গত ৬ মাসে ৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমরা যখন দায়িত্ব নিই, তখন ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) করতে পারছিল না। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকের আগের পরিচালকদের বিষয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে অনেক বড় করপোরেট গ্রাহক ব্যাংক থেকে আমানত উঠিয়ে নেয়। ফলে একটা সংকট তৈরি হয়েছিল। তবে অল্প দিনেই সেই সংকট দূর হয়। যেসব আমানত তুলে নেওয়া হয়েছিল, তার একটি বড় অংশ আবার ব্যাংকে ফেরত আসে।
নেতৃত্ব বদলের পর প্রথম তিন মাস ছিল আমাদের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার সময়। আমরা সেটাতে শতভাগ সফল হই। এরপরের ছয় মাস হলো প্রবৃদ্ধি অর্জনের। আমরা সেটাও অনেকটা করতে পেরেছি। আমরা নিয়মিত ভিত্তিতে কর্মকর্তা, গ্রাহকদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান করছি, যা আমাদের প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
আগের মেয়াদে ব্যাংকের যে ক্ষতি হয়নি, তা বলা যাবে না। আগে খেলাপি ঋণ ছিল ৭ শতাংশের মধ্যে, যা বেড়ে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এসব ঋণ এক বছরে আদায় করা যাবে না। নানা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা শেষ হতে তিন বছর সময় লেগে যাবে। তবে আমরা থেমে নেই। নতুন আমানত আসছে। আমরা উপযুক্ত খাতে তা বিনিয়োগ করে যাচ্ছি। এর ফলে ব্যাংক সমস্যা থেকে ঘুরে প্রবৃদ্ধির দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ, এমডি, ইউসিবি