Thank you for trying Sticky AMP!!

৩ মাসে খেলাপি ঋণ কমল ১৪ হাজার কোটি টাকা

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমার এটাই নজির। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতীকী ছবি

দেশের ব্যাংক খাতে গত বছরের অক্টোবর–ডিসেম্বর—৩ মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ হাজার কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমার এটাই নজির। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য করোনা সংকটের সময় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় ছাড় দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। ৩ মাস পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরের হিসাবে সেটা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। আগের বছরের, অর্থাৎ ২০২১ সালের অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে অবশ্য এক বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭ হাজার ৩৮৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খেলাপি ঋণ শুধু বেড়েছে। এবার তিন মাসের হিসাবে সেটা কমল।

Also Read: কাগজে সই করলেই কি খেলাপি ঋণ কমে যাবে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এই ঋণ দিতে আইএমএফ শর্ত দিয়েছিল, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে, যাতে দেশের ব্যাংক খাত বড় ধরনের কোনো ঝুঁকিতে না পড়ে। সংস্কারের এই উদ্যোগ নেওয়ার মধ্যেই ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ যাতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে না যায়, সে জন্য গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যবসায়ীদের বিশেষ ছাড় দেয়।

ঋণ পরিশোধে কিস্তি সুবিধায় ৭৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান থেকে সরে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০ শতাংশ সীমা বেঁধে দেয়। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ায় দেশে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ও ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে এই ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

Also Read: ডলারের এক দাম, কমবে খেলাপি ঋণ

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, খেলাপি ঋণ প্রকৃতপক্ষে কমে থাকলে সেটা ব্যাংক খাতের জন্য ভালো। তবে কোন হিসাবের মাধ্যমে বা কোন পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণ কমে এসেছে, সেটাও দেখার বিষয়। তবে এটা ঠিক যে ব্যাংক খাতে এখনো বড় কিছু গ্রাহক আছেন, যাঁরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন, তা না হলে ব্যাংক খাত টিকে থাকত না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকের মতো প্রায় সমপরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোও এ ক্ষেত্রে তেমন পিছিয়ে নেই। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ৩ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ হচ্ছে ৪ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।

Also Read: ঋণ কেলেঙ্কারিমুক্ত ব্যাংক খাত কীভাবে

দেশের ব্যাংক খাতে বর্তমানে মোট ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা, যার বড় অংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলো দিয়েছে। এই ব্যাংকগুলো যে ঋণ বিতরণ করছে, তার ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ এখন খেলাপি। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২৮ শতাংশই খেলাপি। বিদেশি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৯১। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৩ শতাংশ খেলাপি।

Also Read: রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া খেলাপি ঋণ কমবে না

Also Read: খেলাপি ঋণ সরকারি ব্যাংকে ১০, বেসরকারি ব্যাংকে ৫ শতাংশে নামবে