Thank you for trying Sticky AMP!!

খতিয়ে দেখা হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকের শতকোটি টাকার বেশি ঋণের তথ্য

ইসলামী ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলের নির্ধারিত সময়সূচি গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। তবে ব্যাংকটি পরিদর্শনে যে পরিস্থিতি ধরা পড়েছে, তাতে ওই সময়ে পরিদর্শন শেষ করতে পারেনি। এ জন্য পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছেন কর্মকর্তারা, এবার কোনো নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়নি।

পরিদর্শক দলের কর্মকর্তারা আলোচনায় থাকা সব ধরনের কোম্পানির ঋণের হিসাব খোলার বিবরণী থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি ১০০ কোটি টাকার বেশি যত ঋণ দেওয়া হয়েছে, তাদের তথ্য চেয়েছে। ১০ কোটি টাকার বেশি পে–অর্ডারের মাধ্যমে যেসব টাকা বের করা হয়েছে, তারও নথি চেয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করবেন কর্মকর্তারা।

পরিদর্শন শেষ না হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুখ খুলতে চাইছে না। এ জন্য সংস্থাটির মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

Also Read: আতঙ্কে ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন গ্রাহকেরা: মুখ্য সচিব

ঠিক হচ্ছে নথিপত্র, বসছে সাইনবোর্ড

এদিকে যেসব কোম্পানির ঋণ অনিয়মের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেসব কোম্পানির নথিপত্র পূর্ণাঙ্গ করতে শুরু করেছে ইসলামী ব্যাংক। কারণ, আগে যাচাই–বাছাই না করে দিনে দিনে কোম্পানি খুলে টাকা ছাড় করা হয়েছে। পাশাপাশি যেসব ঠিকানা ব্যবহার করে টাকা বের করা হয়েছে, তাতেও বসানো হচ্ছে সাইনবোর্ড।

গত ২৩ নভেম্বর বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিস। তবে এই ঠিকানা ব্যবহার করে মার্টস বিজনেস লাইন, মেডিগ্রিন ইন্টারন্যাশনাল ও এসএস স্ট্রেইট লাইন ইন্টারন্যাশনালের নামে বের করা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ থেকে ১০ নভেম্বর মার্টস বিজনেস লাইন ও মেডিগ্রিন ইন্টারন্যাশনালকে দেওয়া হয় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

আলোচনায় আসার পর নাবিল গ্রুপের অফিসে এই তিন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। তবে নাবিল গ্রুপের ওয়েবসাইটে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম নেই।
এ নিয়ে জানতে নাবিল গ্রুপের এমডি মো. আমিনুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

Also Read: ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’

তারল্যে বিশেষ নজর

ব্যাংকটির ঋণ অনিয়মের বিষয় আলোচনায় আসার পর ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় তারল্য ব্যবস্থাপনায় তদারকি বাড়িয়েছে। প্রতিদিন দুই বার সব শাখাকে টাকা জমা ও উত্তোলনের তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইতিমধ্যে সব শাখার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে অনলাইনে সভা করেছেন। এতে কেউ যাতে টাকা চেয়ে ফেরত না যান, তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভ্রান্তিতে পড়ে কেউ টাকা তুলে নিতে চাইলে, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ গ্রাহকদের পাশাপাশি বড় করপোরেট গ্রাহকেরাও ব্যাংকটির সঙ্গে সম্পর্ক গুটিয়ে নিতে চাইছেন। আবার বিতরণ করা ঋণ ফেরত আনতে নিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন একটি ব্যাংক থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে একটি গ্রুপ।

Also Read: বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার হয়েছে: গভর্নর

চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। ৩১ অক্টোবর যা ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বরে আমানত ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। এখন ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকে আমানতের সাড়ে ৯ শতাংশ সিআরআর (নগদ জমার হার) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমার হার) রাখতে হয়। ফলে ইসলামী ব্যাংক নতুন করে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে।

তারল্য–সংকট এড়াতে ব্যাংকটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এক শাখার হিসাবে অন্য শাখায় টাকা জমা ও উত্তোলনে মাশুল ছাড় দিয়েছে ব্যাংকটি। যা ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। আগে এক শাখার গ্রাহক ওই জেলার অন্য শাখায় এক লাখ টাকা জমা বা উত্তোলন করলে তাঁকে ২২৫ টাকা মাশুল দিতে হতো। আর এক জেলা থেকে অন্য জেলার শাখায় এক লাখ টাকা জমা ও উত্তোলনে মাশুল দিতে হতো ৩০৫ টাকা।
এসব নিয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Also Read: পণ্য আনতে ঋণে উদার ইসলামীসহ তিন ব্যাংক, আমদানি যৎসামান্য

গত ২৪ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ বের করে নেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়। এর পরের দিন একটি বাণিজ্যবিষয়ক ইংরেজি পত্রিকায় ইসলামী ব্যাংকের আরও ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়।

Also Read: ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিলেন সাবেক চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ারও