Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশ ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ধারে পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংক ঘাটতি থেকে হঠাৎ উদ্বৃত্তে

  • গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২৫.৩৫ শতাংশ ছিল ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোয়।

  • গত বছরের মার্চে মোট আমানতে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর হিস্যা ছিল ২৭.০২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তারল্য–সহায়তায় ইসলামি ধারার পাঁচটি ব্যাংক বড় ঘাটতি থেকে হঠাৎ বড় ধরনের উদ্বৃত্ত অবস্থায় এসে গেছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোকে নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনমতে, তারল্য উদ্বৃত্ত হলেও শরিয়াহভিত্তিক এসব ব্যাংক আমানতে পিছিয়ে পড়েছে। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে যে হারে আমানত বেড়েছে, ইসলামি ব্যাংকগুলোতে সে হারে বাড়েনি। মূলত শরিয়াহভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংকে সংঘটিত নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর আমানতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে সংকট থেকে উদ্বৃত্ত অবস্থায় আসা পাঁচ ব্যাংকের বাইরের অন্য ব্যাংকগুলো হচ্ছে আইসিবি ইসলামিক, এক্সিম, শাহ্‌জালাল ইসলামী, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।

শরিয়াহ ব্যাংকগুলো আমানতে পিছিয়ে পড়েছে। প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে যে হারে আমানত বেড়েছে, ইসলামি ব্যাংকগুলোতে সে হারে বাড়েনি।

কয়েকটির দায় পড়ছে সবার ওপর

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে সার্বিক আমানত বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহ্‌ভিত্তিক ১০টি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ইসলামি সেবাকেন্দ্রিক আমানত হচ্ছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছিল ইসলামি ধারার ব্যাংকে।

গত বছরের মার্চে মোট আমানতে ইসলামি ধারার হিস্যা ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। তখন ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ২৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ধারার আমানত ছিল ৪ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা।

এদিকে আমানতে পিছিয়ে পড়লেও ঋণ বা বিনিয়োগে থেমে নেই শরিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংক। গত বছরের মার্চে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ২৮ দশমিক ১৫ শতাংশ ছিল ইসলামি ধারার, যা গত ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

একটি ইসলামি ধারার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকটি ইসলামি ব্যাংকের অনিয়মের দায় পড়েছে এই ধারার সব ইসলামি ব্যাংকের ওপর। এর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিশ্চুপ থাকায় সবার জন্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে জন্য আমানতকারী অনেকেই অন্যান্য ব্যাংকে চলে যাচ্ছেন।

ঘাটতি থেকে হঠাৎ উদ্বৃত্তে

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ৬৫৮ কোটি টাকার তারল্যঘাটতি ছিল। তবে গত ডিসেম্বর শেষে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। একই সময়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। অথচ গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটিতে তারল্যঘাটতি ছিল প্রায় ৮২৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তারল্যঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ইউনিয়ন ব্যাংকের তারল্যঘাটতি ছিল ৪৮৩ কোটি টাকা, তবে ডিসেম্বর শেষে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় ২০০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে তারল্য উদ্বৃত্ত হয় ৪০০ কোটি টাকা, এর আগে সেপ্টেম্বরে ঘাটতি ছিল ৪৬৫ কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বার্ষিক আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে ২০২৩ সালের শেষ কার্যদিবসে এই পাঁচ ব্যাংকসহ মোট ৭টি বেসরকারি ব্যাংককে কোনো জামানত ছাড়াই প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতেই তারল্য উদ্বৃত্ত হয় পাঁচ ইসলামি ব্যাংকে।

এসব ব্যাংক অনেক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত নগদ জমার হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার হার (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে পারছিল না। এসএলআরের জন্য এসব ব্যাংকের কাছে যেসব ট্রেজারি বিল ও বন্ড ছিল, তা বন্ধক রেখে ধার করা টাকা খরচ করে ফেলেছিল। নতুন করে ধার নেওয়ার কোনো উপায় বা উপকরণ তাদের হাতে ছিল না। কেবল আগে নেওয়া ধারের মেয়াদ বাড়াচ্ছিল। শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের আন্তব্যাংক লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরিচালিত চলতি হিসাবও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছিল। তবে সম্প্রতি কোনো কোনো ব্যাংকের উন্নতি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ইসলামি ধারার অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ৭০৫ কোটি টাকা ও আল আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকে প্রায় দেড় শ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল।