Thank you for trying Sticky AMP!!

ইসলামী ব্যাংক থেকে কেন পর্যবেক্ষক সরিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংকটিতে ২০১০ সাল থেকে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।২০২০ সালে ওই পর্যবেক্ষককে সরিয়ে নেওয়া হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংক লোগো

ঋণ অনিয়মের আশঙ্কায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ব্যাংকটির বিভিন্ন সভায় অংশ নিতে শুরু করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপের হাতে চলে যায়। এরপর ২০২০ সালের মার্চে ওই পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক (তৎকালীন) গভর্নর ফজলে কবির ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক রাখার পক্ষে ছিলেন না। যদিও এখনো অন্য ছয়টি ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত পর্যবেক্ষক রয়েছে। এর বাইরে নতুন করে আরও কয়েকটি ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে।

Also Read: ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’

মালিকানা বদলের পর ইসলামী ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন বিবেচনায় পর্যবেক্ষক সরিয়ে নিল, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ এ কথাও বলছেন এখন, অনিয়মের সুযোগ করে দিতেই ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কাগুজে কোম্পানির নামে যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটি থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের আদলেই। ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ অনিয়মের ঘটনা সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের চেয়েও ভয়াবহ বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকটি থেকে কী পরিমাণ অর্থ এখন পর্যন্ত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা অনুসন্ধানে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন দল।

এদিকে ইসলামী ব্যাংক থেকে কেন পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তার যথাযথ কোনো উত্তর দিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো মন্তব্য না করার নীতি নিয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদের কাছে গতকাল সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়ার পর ব্যাংকটি থেকে কাগুজে কোম্পানি খুলে অর্থ বের করা শুরু হয়। প্রথমে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এই অনিয়ম শুরু হয়। ফলে পাঁচ বছরে এই শাখার ঋণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বের হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।

Also Read: ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিলেন সাবেক চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ারও

চট্টগ্রামে ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শাখা থেকে একই প্রক্রিয়ায় টাকা বের করা হয়। আর ২০১৭ সাল থেকে খাতুনগঞ্জ শাখার দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের ঋণসংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পাশাপাশি দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া প্রধান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তাও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। এভাবে ২০ থেকে ৩০ কর্মকর্তা মিলে ব্যাংকটিতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আর ব্যাংকটির পরিচালকেরা বেশির ভাগ একটি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হওয়ায় তারাও এতে সমর্থন দেয়।

ব্যাংকটির ঋণের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কাগুজে কোম্পানিগুলোর নামে সর্বোচ্চ ঋণের পরিমাণ ছিল দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু কম। কারণ, ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধন ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এর ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৫০৪ কোটি ঋণ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। আর ওই পরিমাণের কম ঋণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার দরকার হয় না। তাই কাগুজে কোম্পানিগুলোর ঋণের পরিমাণ ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

Also Read: কাগুজে কোম্পানি খুলে যেভাবে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ

গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ বের করে নেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়।

এদিকে দেশের একটি বাণিজ্যবিষয়ক ইংরেজি পত্রিকায় ইসলামী ব্যাংকের আরও ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়। আর গতকাল বুধবার একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশ হয়, ইসলামী ব্যাংক থেকে একাই ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ।

Also Read: ইসলামী ব্যাংকে 'শান্তিপূর্ণ' বদল