Thank you for trying Sticky AMP!!

মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’

নগদ ডিজিটাল ব্যাংককে আইনি ছাড়

একক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারবে না—ব্যাংক কোম্পানি আইনে এমন বিধান রয়েছে। তবে কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় থাকা নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এ ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পাচ্ছে। নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছে সাত উদ্যোক্তা। তাদের মধ্যে ছয়টি কোম্পানি ও একজন ব্যক্তি উদ্যোক্তা। এই সাত উদ্যোক্তার মধ্যে তিন প্রতিষ্ঠানেরই আছে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার। কিন্তু সরকার বলছে, ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ না করার আইনি নিষেধাজ্ঞা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ধারণ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে সরকারের সম্মতি জানিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ (ক) (১) ধারার বিধান পরিপালন থেকে নগদ ডিজিটাল ব্যাংককে অব্যাহতি দেওয়া হলো। ওই ধারায় শেয়ার ধারণ সম্পর্কে বলা আছে।

সংঘ স্মারক (এমওএ) অনুযায়ী, নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের (ফেসভ্যালু) মোট ১২ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১২৫ কোটি টাকা।

নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের সাত উদ্যোক্তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি ও ব্লু হ্যাভেন ভেঞ্চারস এলএলসি ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস প্রাইভেট লিমিটেডের হাতে রয়েছে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার। ১২৫ কোটি টাকা মূলধনের মধ্যে ১০৭ কোটি ২৫ লাখ টাকাই এই তিন কোম্পানির অর্থায়ন।

বাকি চার উদ্যোক্তার মধ্যে জেন ফিনটেক এলএলসির ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ট্রু-পে টেকনোলজিস এলএলসির ৪ কোটি টাকা ও ব্যক্তি উদ্যোক্তার কাছে রয়েছে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার। আর একমাত্র দেশি কোম্পানি ফিনটেকচুয়াল হোল্ডিংসের হাতে রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার।

ছাড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ কথা বলতে রাজি হননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে ছাড়টা নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পেয়েছে, তা পাওয়ার এখতিয়ার আছে। এমনকি অন্য ডিজিটাল ব্যাংকও একই ধরনের ছাড় পাওয়ার অধিকার রাখে। এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন সরকারকে এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে।’

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারায় বলা আছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করতে পারে যে এ আইনের সব বা কোনো বিশেষ বিধান, কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংক–কোম্পানি বা সব ব্যাংক কোম্পানির ক্ষেত্রে, সাধারণভাবে বা প্রজ্ঞাপনে নির্ধারিত কোনো মেয়াদ কালে প্রযোজ্য হবে না।’ 

নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ শতাংশের বেশি শেয়ার রাখার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকে গেছে বলে আমরা শুনেছি। এখন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির কথা। আর নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানার প্রায় পুরোটাই বিদেশি কোম্পানির। কারণ, আমরা বৈদেশিক বিনিয়োগ আশা করছি।’

আগামী জুলাইয়ের মধ্যে নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা হবে বলে জানান তানভীর আহমেদ।

ডিজিটাল ব্যাংকের খুঁটিনাটি
দেশে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে গত বছরের ২৫ অক্টোবর নগদ লিমিটেড ও কড়িকে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তার আগে গত বছরের জুনে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকলেও কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না। মুঠোফোন অথবা ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করেই গ্রাহকদের ব্যাংক সেবা দেওয়া হবে। ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে প্রয়োজন হবে ১২৫ কোটি টাকা আর পরিচালক হতে লাগবে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা।

ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দিতে পারবে না। সেবা দিতে হবে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে ভার্চ্যুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য চালু করা যাবে। তবে লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। অবশ্য এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না। বড় ও মাঝারি শিল্পে ঋণ দেওয়াও বারণ। শুধু ছোট ঋণ দেওয়া যাবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে ডিজিটাল ব্যাংককে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ছাড়তে হবে। আইপিওর পরিমাণ হতে হবে স্পনসরের প্রাথমিক অবদানের ন্যূনতম পরিমাণের সমান। এ ব্যাংক স্থাপনে উদ্যোক্তাদের অর্ধেককে হতে হবে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বাকি অর্ধেককে হতে হবে ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।

ডিজিটাল ব্যাংককেও প্রচলিত ব্যাংকের মতো সময়–সময় বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ন্যূনতম নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) বজায় রাখতে হবে।