Thank you for trying Sticky AMP!!

এলএনজি টার্মিনাল করতে চায় রাশিয়া

তিন দিনব্যাপী রাশিয়া-বাংলাদেশ আন্তসরকার কমিশনের চতুর্থ অধিবেশন গতকাল শেষ হয়েছে। তবে প্রটোকল সই হয়নি।

বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানি করতে চায় রাশিয়া। দেশটি বাংলাদেশে যৌথভাবে এলএনজি টার্মিনালও স্থাপন করতে আগ্রহী। দীর্ঘদিন থেকে ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ। মস্কোর সঙ্গে আলোচনা এগোলে রাশিয়া হবে এলএনজি আমদানির জন্য বাংলাদেশের তৃতীয় উৎসস্থল। এলএনজির পাশাপাশি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসও (এলপিজি) বাংলাদেশে রপ্তানি করতে চায় রাশিয়া।

তিন দিনব্যাপী (১৩-১৫ মার্চ) বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসংক্রান্ত রাশিয়া-বাংলাদেশ আন্তসরকার কমিশনের চতুর্থ অধিবেশনে এসব আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো প্রটোকল সই ছাড়াই গতকাল বুধবার শেষ হয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে অনুষ্ঠিত অধিবেশনের আলোচনা।

অধিবেশনের একটি পর্যায়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রকল্পের নির্মাণকাজে রাশিয়ার ঠিকাদার দেরি করলে জরিমানা দিতে হয় বাংলাদেশকে। দেশটির সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে এমন একটি ধারা রয়েছে। এ কারণে রাশিয়াকে ইতিমধ্যে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা জরিমানা দিয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তির এ ধারা সংশোধন নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

রপ্তানি বাণিজ্যে শুধু পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভর করলেই চলবে না, রাশিয়া একটা বড় গন্তব্যস্থল হতে পারে। তবে দুই পক্ষেরই ছাড় দিতে হবে।
কাজী শফিকুল আযম, সাবেক ইআরডি সচিব

ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনে রাশিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন আন্তসরকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাশিয়া ফেডারেশনের ফেডারেল এজেন্সি ফর ফিশারিজের প্রধান ইলিয়া ভি শেসতাকভ। আর বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান।

‘বাংলাদেশের পক্ষে আমি সভাপতিত্ব করেছি’—এটুকু ছাড়া বৈঠকের কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি সচিব শরিফা খান। তবে ইআরডি গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উভয় দেশের আর্থিক, বাণিজ্য, শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আণবিক শক্তি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী, ভূতত্ত্ব গবেষণা, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবহন ও শিক্ষা খাতের সহযোগিতা নিয়ে অধিবেশনে আলোচনা হয়েছে। বিষয়গুলোতে উভয় দেশের অর্থবহ স্বার্থ বজায় রাখার পাশাপাশি পারস্পরিক সহযোগিতা গভীর করার বিষয় উঠে এসেছে।

রাশিয়া-বাংলাদেশ আন্তসরকার কমিশনের প্রথম অধিবেশনে নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রূপপুরের মতো এত বড় একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাশিয়া, ফলে দেশটির সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্ব লাগবে। রপ্তানি বাণিজ্যে শুধু পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভর করলেই চলবে না, রাশিয়া একটা বড় গন্তব্যস্থল হতে পারে। তবে দুই পক্ষেরই ছাড় দিতে হবে। বড় দেশ হিসেবে রাশিয়া দেবে বেশি ছাড়, কূটনৈতিক আলোচনাটা এভাবে এগিয়ে নিতে হবে।’

সূত্রগুলো জানায়, রাশিয়া তার মুদ্রা রুবলের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এ ছাড়া যৌথভাবে সার কারখানা, জ্বালানি পরিশোধন কারখানা এবং চামড়া ও চামড়াজাত কারখানা স্থাপন করতে চায় দেশটি। কৃষি ও প্রাণিসম্পদ এবং কৃষি খাতের জন্য গবেষণাগার তৈরিও তাদের আগ্রহের বিষয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারেও রাশিয়া ইতিবাচক।

অন্যদিকে বাংলাদেশ চায় রাশিয়ায় পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক সুবিধা এবং তৃতীয় দেশের পরিবর্তে সরাসরি দেশটিতে পণ্য রপ্তানি করার সুযোগ। সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেন করার সুযোগও বাংলাদেশের অন্যতম চাওয়া। রাশিয়ার ‘স্পুতনিক’ নামের বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হওয়ার বিষয়ে পাঁচ বছর ধরেই কথা হচ্ছে। অধিবেশনে এগুলোসহ মোট ৩৩টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে প্রটোকল সই হয়নি।

অধিবেশনে মস্কোর দলে দেশটির পররাষ্ট্র, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি, পরিবহন, মৎস্য, বিজ্ঞান ও উচ্চশিক্ষা ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। আর ঢাকার দলে ছিলেন বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা।

আলোচ্য বিষয়গুলো নিয়ে হওয়া আলোচনাকে সিদ্ধান্তের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো ফোরাম এটি নয়।

সূত্রগুলো জানায়, এ কারণেই বাংলাদেশ চায় সিদ্ধান্তের পর্যায়ে নিয়ে যেতে রাশিয়ার উচ্চপর্যায়ের কোনো দল ঢাকায় আসুক। অধিবেশনে অংশ নেওয়া রাশিয়ার দলটিও এতে সম্মতি জানিয়েছে। আগামী মাসে না পারলেও তার পরের মাসেই রাশিয়ার উচ্চপর্যায়ের দলটিকে ঢাকায় চায় বাংলাদেশ।

২০১৭ সালের ১ মার্চ গঠিত হয় বাংলাদেশ-রাশিয়া আন্তসরকার কমিশন। আন্তসরকার কমিশনের প্রথম অধিবেশন মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে।

কমিশনের কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরে বাংলাদেশে গঠিত হয় কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্টস স্টেট (সিআইএস)-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই)। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯১-৯৩ সময়ে যে ১১টি দেশ হয়, এগুলোকেই একসঙ্গে বলা হয় সিআইএস।

সিআইএস-বিসিসিআই সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলাম।

তাই সে ব্যাপারে ইতিবাচক কিছু শুনতে চেয়েছিলাম। এটা হলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে এবং নিশ্চিতভাবে রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে এর চেয়ে বড় বড় বিষয়েরও নিষ্পত্তি হয়। আশা করছি এটাও হবে।’