সেবি কেন আদানির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের গভীরে যাচ্ছে না: রঘুরাম রাজন
২০২০ সালে ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির সম্পদমূল্য ছিল ৮৯০ কোটি ডলার। দুই বছরের মধ্যে তাঁর সম্পদমূল্য ফুলে–ফেঁপে ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ফলে হঠাৎ করে তাঁর এমন উত্থানের পেছনে কারসাজি আছে, এই সন্দেহ অনেক আগে থেকেই ছিল।
বিশেষ করে মরিশাসের কিছু কোম্পানি নিয়ে সন্দেহ ছিল ভারতের বাজার পর্যবেক্ষকদের। অভিযোগ ছিল, আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিনিয়োগ করা মরিশাসের এসব কোম্পানি ছিল কার্যত ভুয়া। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্ট সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ যখন অভিযোগ করল, গৌতম আদানির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম জালিয়াতি করে বাড়ানো হয়েছে, তখন সেই সন্দেহ আরও দানা বাঁধে।
কিন্তু ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সেবি এখনো কেন মরিশাসভিত্তিক ওসব তহবিলের প্রকৃত মালিকানা খুঁজে বের করতে পারেনি, রোববার সেই প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন। সে জন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সাহায্য প্রয়োজন কি না, সেটাও জানতে চেয়েছেন তিনি। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
এখানেই থেমে থাকেননি রাজন। স্বভাবসুলভ চাঁছাছোলা ভাষায় বলেছেন, বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও পারিবারিক কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই উৎসাহ দেওয়া উচিত, কিন্তু তারা যেন বাড়তি সুবিধা পেয়ে অন্যায়ভাবে অন্যদের পেছনে ফেলতে না পারে বা বেশি ক্ষমতাধর না হয়ে ওঠে, তা–ও খেয়াল রাখতে হবে। রঘুরাম রাজন অবশ্য আদানি গোষ্ঠীর নাম মুখে না আনলেও সরকারের সঙ্গে শিল্প গোষ্ঠীর দহরম-মহরম নিয়ে সরাসরি আপত্তি তুলেছেন।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মোদ্দাকথা হলো, কারচুপির মাধ্যমে ধনী হয়েছেন গৌতম আদানি। তাঁর মালিকানাধীন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে। এভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এই ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে নিয়মিত কটাক্ষ করছে ভারতের বিরোধী দলগুলো। সে প্রসঙ্গে রঘুরাম রাজন বলেন, নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে কোনো ব্যবসায়িক পরিবারের বাড়তি সুবিধা পাওয়ার প্রবণতা দেশের জন্য ভালো নয়।
আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ভারতের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মহলে একটি প্রশ্ন উঠেছে; সেটা হলো, পারিবারিক ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে কেন্দ্র সরকারের কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? এ প্রসঙ্গে সাবেক গভর্নরের বক্তব্য, ‘বিষয়টি কোম্পানির পরিচালনায় নজরদারির নয়; বরং সরকার ও শিল্পের মধ্যে অস্বচ্ছতা হ্রাস ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে নিজেদের কাজ ঠিকমতো করায় উৎসাহ দেওয়ার। তাঁর বার্তা, ‘প্রতিটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ করে দিতে হবে দক্ষতা অনুযায়ী, কারও সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে নয়।’
এদিকে শেয়ারের দরপতনের মধ্যে ঋণ পরিশোধের চাপও আদানি গোষ্ঠীর চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। ২০১৯ সালে তাদের ঋণ ছিল ১ দশমিক ১১ লাখ কোটি রুপি, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২১ লাখ রুপিতে। তবে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে আদানি গোষ্ঠী আগেভাগে কিছু ঋণ পরিশোধ করতে শুরু করেছে আর ২০২৪ সালের মধ্যে তাদের ফেরত দিতে হবে প্রায় ২০০ কোটি ডলার।
হিন্দুস্তান টাইমসের তথ্যানুসারে, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২২ পর্যন্ত আদানিরা বিদেশি মুদ্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছে। গত বছর ১১৫ কোটির বন্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আর পরের বছর আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেডের ৬৫ কোটি, আদানি গ্রিন এনার্জির ৭৫ কোটি ও ৫০ কোটি ডলারের বন্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
আরও পড়ুন
-
ভাইয়ের মনোনয়ন ফরম জমা দিতে সঙ্গে যাওয়া অতিরিক্ত ডিআইজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসির নির্দেশ
-
যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
-
নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন
-
বিরুদ্ধ মত দমনে বিভাগীয় মামলাকে ‘হাতিয়ার’ বানাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা
-
উপাচার্যের দুই ছেলে ও ভাগনির চাকরি, ভাড়ায় চলে স্ত্রীর গাড়ি