ইন্টারনেটের এই যুগে ঘরে পড়ে থাকা পুরোনো সোফা সেট বা আপনার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি কাঙ্ক্ষিত দামে অল্প সময়ের মধ্যেই বিক্রি করে দেওয়ার মতো সুবিধা দিয়ে থাকে ‘বিক্রয় ডটকম’। পাশাপাশি দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসে প্রয়োজনীয় সব পণ্য কেনাবেচা করা যায় বিক্রয় ডটকমের মাধ্যমে।
২০১২ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে অনলাইন সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অনলাইন ক্লাসিফায়েড হিসেবে যাত্রা শুরু করা সাইটটিতে গাড়ি থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস, প্রোপার্টি—সবকিছুই কেনাবেচা করা যায়, এমনকি খুঁজে নেওয়া যেতে পারে চাকরি এবং মনের মতো জীবনসঙ্গীও!
গত ১০ বছরে দেশজুড়ে লাখো ক্রেতা-বিক্রেতা ও শুভানুধ্যায়ীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেসে পরিণত হয়েছে বিক্রয় ডটকম। ২০২২ সালের জুন মাসজুড়ে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি উদ্যাপন করেছে এক দশক পূর্তি।
২০১৩ সালে, অর্থাৎ বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করার এক বছরের মধ্যে ‘বিক্রয়’ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভিজিটকৃত ক্লাসিফায়েড অ্যাড সাইট এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি ওয়েবসাইটের একটি।
২০১৪ সালে ‘বিক্রয়’ প্রথম ব্যানার অ্যাডসার্ভিস নিয়ে আসে। একই বছর ‘বিক্রয়’ চালু করে প্রিমিয়াম লিস্টিং অর্থাৎ টপ অ্যাড ও বাম্প আপ সার্ভিস।
২০১৫ সালে লঞ্চ হয় বিক্রয় আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন। এ বছরই ‘বিক্রয়’ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোরবানির পশু অনলাইনে কেনাবেচার সুবিধা চালু করে।
২০১৬ সালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য মেম্বারশিপ সার্ভিস চালু করে বিক্রয়। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিক্রয় অর্জন করে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের ‘বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড’। এ বছরই মিলওয়ার্ড ব্রাউনের এক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, দ্বিতীয়বারের মতো সেরা তিনটি ওয়েবসাইটের মধ্যে জায়গা করে নেয় বিক্রয়।
২০১৭ সালে কোরবানি ঈদ উপলক্ষে বিক্রয় চালু করে ‘বিরাট হাট’ ক্যাম্পেইন, যা বর্তমানে একটি ফ্ল্যাগশিপ ক্যাম্পেইনে পরিণত হয়েছে।
২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ব্রেক-ইভেনে পৌঁছায়, যা প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় ই-কমার্স, জবস এবং ক্লাসিফায়েড ওয়েবসাইট হিসেবে নিজেদের ধরে রাখার সুযোগ এনে দিয়েছে।
২০২০ সালে ‘বিক্রয়’ নিয়ে আসে তাদের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘ডোরস্টেপ ডেলিভারি’, যার মাধ্যমে ক্রেতারা ঘরে বসেই পেতে পারেন পছন্দের পণ্যের ডেলিভারি। করোনাকালে লকডাউনের কঠিন পরিস্থিতিতে অসংখ্য ব্যবসায়ীর পাশে দাঁড়িয়েছিল বিক্রয়, যখন অনলাইনে কেনাবেচাই ছিল একমাত্র উপায়।
২০২১ সালে বিক্রয় নতুন আঙ্গিকে ও নতুন ইউজার ইন্টারফেসে নিয়ে আসে BikroyJOBS, যা পার্টটাইম, এন্ট্রি লেভেল এবং তরুণ শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান খুঁজে পেতে সহায়তা করে।
বিক্রয়ের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি আকারের ব্যবসাগুলোর জন্য অনলাইনে কেনাবেচা করার সমাধানের পাশাপাশি রয়েছে আধুনিক ও ক্রমবর্ধমান ই-কমার্স প্রযুক্তি সম্পর্কে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। দীর্ঘ এক দশকে প্রতিষ্ঠানটির প্রাপ্তির ঝুলিতে যোগ হয়েছে বেশ কিছু বর্ণিল অর্জন।
২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮—পরপর তিন বছর অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে শীর্ষে থাকার কারণে সোমরা এমবিএল লিমিটেডের ‘অনলাইন ব্র্যান্ড হেলথ: মার্কেট রিসার্চ রিপোর্ট’–এর ফলাফলের ভিত্তিতে বিক্রয় ‘টপ অব মাইন্ড’ স্থান অর্জন করে।
বিক্রয়ে রয়েছে নতুন এবং ব্যবহৃত পণ্যের এক বিশাল সমাহার, যা দেশের যেকোনো প্রান্তে বসে অনলাইনে কেনাকাটা করে তুলেছে আরও সহজ। দেশজুড়ে প্রোপার্টি, গাড়ি, মোটরবাইক এবং মোবাইল কেনাবেচায় ‘বিক্রয়’ অন্যান্য যেকোনো প্ল্যাটফর্মের তুলনায় যেমন এগিয়ে রয়েছে, তেমনি নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে বিশ্বস্ত একটি ট্রেডিং পোর্টাল হিসেবে।
অনলাইন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বিনোদন থেকে শুরু করে কেনাকাটা এমনকি চাকরি খোঁজার জন্য দিন দিন আরও বেশি ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে পড়ছেন। গ্রাহকদের এসব চাহিদার কথা মাথায় রেখে ‘বিক্রয়’ বিভিন্ন সময়ে নিয়ে এসেছে সময়োপযোগী কিছু উদ্যোগ ও আয়োজন।
যার মধ্যে রয়েছে কোরবানি উপলক্ষে অনলাইন গরুর হাট ‘বিরাট হাট’, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশপ্রেমীদের নিয়ে গল্প লেখার প্রতিযোগিতা ‘আই লাভ বাংলাদেশ’ এবং অনলাইন গাড়ির মেলা ‘অটো ফেয়ার ২০২২’-এর মতো কয়েকটি ব্যতিক্রম আয়োজন।
বর্তমানে বিক্রয়ে রয়েছে প্রায় ২০০ নিবেদিত কর্মী। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এবং যেকোনো সমস্যার সমাধানে বিক্রয়ে কাজ করছে প্রায় ১০০ জন কাস্টমার সার্ভিস অপারেটর। বিক্রয় সব সময়ই সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি এবং গ্রাহকদের চাহিদার সংমিশ্রণে সর্বোত্তম সেবা প্রদানের চেষ্টা করে আসছে।
সর্বোপরি আমাদের দেশে অনলাইনকেন্দ্রিক কেনাবেচা, ব্যবসা কিংবা নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রয় ডটকম একটি পরিচিত নাম। গত এক দশকজুড়ে বিক্রয় বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে, অনলাইনে পণ্য বিক্রয় ও কেনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।