কোনো নির্দিষ্ট দেশে কাজের জন্য বেশি সংখ্যায় শ্রমিক গেলে ওই দেশে শ্রমিকের অতিরিক্ত সরবরাহ তৈরি হয়। ফলে একসময় প্রবাসী শ্রমিকদের গড় মজুরি কমে যায়। তাই শুধু নিম্ন দক্ষতার শ্রমিক না পাঠিয়ে বিভিন্ন খাতে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারলে এই আশঙ্কা আর থাকে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থাপিত একটি তাত্ত্বিক গবেষণা প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়। গবেষণার শিরোনাম ছিল—ছোট অর্থনীতির দেশের প্রবাসী আয় ও প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব।
গবেষণাটি উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব মোরশেদ। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস।
তাত্ত্বিক গবেষণায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির দ্বৈত প্রভাব তুলে ধরা হয়। এতে দেখানো হয়, দাম বাড়লে হোস্ট (তেল উৎপাদনকারী) দেশগুলো জ্বালানি তেল বিক্রি করে বেশি লাভবান হয়। তাদের মোট দেশজ আয় (জিডিপি) ও শ্রম চাহিদা বাড়ে। আর বাংলাদেশের মতো হোম (শ্রম রপ্তানিকারক) দেশগুলো দীর্ঘ মেয়াদে উৎপাদন, ভোগ ও ব্যয়ের সংকোচনের মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে দেশীয় শ্রমিক ও নতুন অভিবাসনপ্রত্যাশী উভয়ের জীবনমান কমে যায়।
এ কে এম মাহবুব মোরশেদ বলেন, তেলের দাম বাড়ার পরপরই মধ্যপ্রাচ্যসহ তেলসমৃদ্ধ দেশে উৎপাদন বাড়ে, শ্রমঘণ্টা বাড়ে। তাতে এই সংশ্লিষ্ট খাতের প্রবাসী শ্রমিকদের আয় বৃদ্ধি পায়। আবার মজুরি বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত কাজের সুযোগ পেয়ে বিদ্যমান প্রবাসীরা বেশি পরিমাণে শ্রম দেন। সব মিলিয়ে প্রথম ধাক্কায় প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে।
অন্যদিকে তেলের মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শ্রম রপ্তানিকারক দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে। মাহবুব মোরশেদ বলেন, উচ্চ মূল্যে আমদানি করা জ্বালানি উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়, শিল্পে ব্যয় বাড়ে, ভোগ কমে।