দেশি সফটওয়্যারে ভ্যাট এবং বিদেশি সফটওয়্যারে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অসন্তুষ্টি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সফটওয়্যার সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর বিদেশি কিছু সফটওয়্যারে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সফটওয়্যার খাতটি বিকশিত হওয়ার এই সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাটও বাড়তি বোঝা তৈরি করবে। আর কিছু সফটওয়্যার দেশে তৈরি সম্ভব না এবং সেগুলো ছাড়া এই খাত চলবেও না। তাই বাড়তি শুল্ক সফটওয়্যারের ব্যয় বাড়িয়ে দেবে।
জাতীয় সংসদে গত বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। তাতে সফটওয়্যার উৎপাদন পর্যায়ে ও ‘কাস্টমাইজেশন’ সেবার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদেশি কিছু সফটওয়্যারের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। অন্য ক্ষেত্রে হারটি ২৫ শতাংশ। শুল্ক ফাঁকি রোধে হারটি সব ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাটও বসবে।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্রেইন স্টেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাইসুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, সফটওয়্যারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট এবং আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপের ফলে সবার খরচই বাড়বে।
বেশি অসন্তোষ তৈরি হয়েছে আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে। সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সব সফটওয়্যার দেশে তৈরি হয় না, সেটা বিবেচনা করা উচিত। এখানে হয়তো বোঝার ভুল ছিল। দেশীয় শিল্পকে গুরুত্ব দিতে বা সুরক্ষা দিতে যা-ই বলা হোক না কেন, এটা ভুল ব্যাখ্যা।
■ সফটওয়্যার উৎপাদন পর্যায়ে ৫% ভ্যাট আরোপ।
■ বিদেশি সফটওয়্যারে শুল্ক ৫% থেকে বাড়িয়ে ২৫% করা হয়েছে।
■ বিদেশি সফটওয়্যারের ওপর ১৫% ভ্যাটও বসবে।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পরিচালক রাশাদ কবির প্রথম আলোকে বলেন, সফটওয়্যার ব্যবহারে খরচ এখন অনেক বেড়ে যাবে। দেশীয় সফটওয়্যার যেমন ব্যবহৃত হচ্ছে, তেমনি আমদানিনির্ভরতাও আছে। তিনি আরও বলেন, সাইবার নিরাপত্তার জন্য সফটওয়্যার বাংলাদেশে তৈরি হয় না। যেখানে সাইবার নিরাপত্তাকে এখন অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। খরচ বেড়ে গেলে অনেকেই সাইবার নিরাপত্তায় অনীহা দেখাবে, যা দেশের জন্য ভালো হবে না।
বাংলাদেশে সফটওয়্যার তৈরির অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা দিতে বিদেশি সফটওয়্যারে শুল্ক আরোপের একটি
দাবি ছিল।
বিষয়টি নিয়ে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানি পর্যায়ের সফটওয়্যারে ওপর শুল্ক আরোপের দাবি আমাদেরই ছিল। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারে আমরা ছাড় দিতে বলেছিলাম। কারণ, এগুলো দেশে তৈরি হয় না।’ তিনি বলেন, ‘এই সফটওয়্যার ছাড়া নড়াচড়াও যাবে না এবং এগুলো ঠিক নিত্যপণ্যের মতো। এগুলো আমাদের প্রতিযোগী না। সরকার নতুন এই নীতি আরোপ করলে তা দেশীয় শিল্পের কোনো উপকারে আসবে না।’
এবারের বাজেটে অনলাইনে পণ্য বিক্রির সংজ্ঞায় মার্কেটপ্লেসের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। একে স্বাগত জানিয়েছেন ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা। শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশ ভ্যাট আইনে মার্কেটপ্লেসের সংজ্ঞাকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি স্বচ্ছ ব্যবসা কাঠামো প্রদানের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
দারাজ বাংলাদেশের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস বলেছেন, মার্কেটপ্লেসের স্বীকৃতি দিয়ে সরকার ভ্যাট আইনে এর কার্যক্রম সুস্পষ্ট করেছে। এতে এ খাতসংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস, খুচরা বিক্রেতা, পরিবহনকারী, তাদের নিজ নিজ ভ্যাট প্রদান ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানবে।