
চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে দেওয়ার আগে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। নিলাম প্রক্রিয়ায়ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এসব টার্মিনাল উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে দেওয়া দরকার ছিল। এখন যেহেতু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তাই এসব টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ ও সক্ষমতা নিয়ে ভবিষ্যতে সরকারকে সচেতন থাকতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনে ‘চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ: দেশ কি সঠিক পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ভয়েস ফর রিফর্ম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রেইন। গোলটেবিল আলোচনার সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মে সহ-আহ্বায়ক ও বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাসরুর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী, থাই-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি শামস মাহমুদ প্রমুখ। আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রেইনের অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ সুবাইল বিন আলম।
মূল প্রবন্ধে সুবাইল বিন আলম বলেন, দেশে কার্যত চট্টগ্রাম বন্দর একাই দেশের ৯২ শতাংশ বন্দর কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই বিলিয়ন ডলার থেকে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে যেতে দেশের অন্যান্য বন্দরের কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি ইতিবাচক। আর এসব চুক্তিতে একাধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় একক কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হবে না।
ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বড় প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দীর্ঘদিনের ঘাটতি রয়েছে। দেশে এখনো সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। আর বিদেশিদের হাতে টার্মিনাল দিলেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন চুক্তিতে এসব টার্মিনালে সক্ষমতা বাড়িয়ে বলা হলেও সেসব টার্মিনাল এলাকার নদীগুলোর নাব্যতা কম। তাই বড় জাহাজ প্রবেশে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি নদীর নাব্যতা বাড়াতে হয়, তাহলে পলি সরাতে হবে। ফলে সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বন্দর পরিচালনায় বাড়তি ব্যয় করতে হবে। ফলে প্রকল্প থেকে আয় হওয়ার বদলে বরং ভর্তুকি দিতে হতে পারে।
শামস মাহমুদ বলেন, ‘বন্দর যদি একটা কম্পিউটারের মতো হয়, তাহলে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হচ্ছে হার্ডওয়্যার; আর কাস্টমস হচ্ছে সফটওয়্যার। তবে দেশের বন্দরগুলোর কাস্টমসের জটিলতার কারণে ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা ভালো না। তাই আগে দেশের বন্দরগুলোতে এসব অভিজ্ঞতার পরিবর্তন প্রয়োজন। আর চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়ার আগে মোংলা ও পায়রা বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়া দরকার ছিল। তাহলে বাংলাদেশ ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই লাভজনক হতো।’
সভায় অন্য আলোচকেরা বলেন, এ ধরনের চুক্তির মধ্যে কিছু ব্যবসায়িক গোপনীয়তা থাকে। তা হয়তো জনগণের জন্য সব সময় প্রকাশ করা যায় না। তবে এই চুক্তির ফলে দেশের কী লাভ তা প্রকাশ করা উচিত।
গোলটেবিল আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ, এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরিন সুলতানা, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মো. আলাউদ্দিন, লজিস্টিকস ও ফ্রেইট অপারেটর প্রতিষ্ঠান সিকো গ্রুপের পরিচালক কামরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।