করোনার ডামাডোলে সাদা হলো ১০ হাজার কোটি কালোটাকা
করোনার ডামাডোলের মধ্যেও কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাননি তাঁরা। করোনারা মধ্যেই গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসেই ১০ হাজার ২২০ কোটি কালোটাকা সাদা করে ফেললেন তাঁরা। এই সুযোগ নিয়েছেন ৭ হাজার ৬৫০ জন। শুধু ডিসেম্বর মাসেই ৪ হাজার ২৯২ জন কালোটাকা সাদা করেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এবারের মতো এমন ঢালাও সুযোগ আর তেমন একটা আসেনি। জমি, ফ্ল্যাট কেনা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কিংবা ব্যাংক বা নিজের কাছে নগদ টাকাও সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে বালিশের তলায় লুকিয়ে রাখা টাকাও সাদা করার সুযোগ মিলেছে। কালোটাকা সাদা করলে অর্থের উৎস জানতে চাইবে না এনবিআর। এমনকি অন্য কোনো কর্তৃপক্ষও এই সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভয়ে যাঁরা এত দিন কালোটাকা সাদা করেননি, তাঁরা এবার এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি।
আজ সোমবার চলতি বছরের রিটার্ন জমা ও অপ্রদর্শিত আয় ঘোষণার হিসাব দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে এনবিআর। সেখানে কালোটাকা সাদা টাকা করার সাড়াকে ‘অভূতপূর্ব হিসেবে অভিহিত করেছে এনবিআর। বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে চলতি অর্থবছরে সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে বিশেষ সুযোগ দেয়। এ সুযোগে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছেন সম্মানিত করদাতারা।
এবারের মতো এমন ঢালাও সুযোগ আর তেমন একটা আসেনি। জমি, ফ্ল্যাট কেনা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কিংবা ব্যাংক বা নিজের কাছে নগদ টাকাও সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে বালিশের তলায় লুকিয়ে রাখা টাকাও সাদা করার সুযোগ মিলেছে।
কিন্তু এনবিআরের এই ধরনের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এনবিআর হয়তো কিছু টাকা কর পেয়েছে বলে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। কিন্তু সংবিধানে এই ধরনের আয়কে সুস্পষ্টভাবে অবৈধ বলা হয়েছে। এনবিআরের মনোভাব হলো—চুরি করেন, তারপর আমাদের কাছে আসেন, আমরা তো আছি।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এই ধরনের সুযোগ দেওয়ার বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা বা যে ব্যাখ্যা দেওয়া হোক না কেন, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এতে অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, আর সৎ করদাতাদের কর দেওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি এই ধরনের সুযোগ বন্ধ করার দাবি জানান।
এ বছর দুটি উপায়ে কালোটাকা সাদা হয়েছে। প্রথমত, ফ্ল্যাট, জমি বা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা বা নগদ টাকার ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা হয়েছে। অপরটি হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। ফ্ল্যাট ও জমি কেনার সময় এলাকায় ও আয়তনভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিতে হয়।
আর নগদ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়েও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আছে। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯এএএএএ ধারায় এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ৬ মাসে ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা এই সুযোগ নিয়েছেন। তবে নগদ টাকা সাদা করার প্রবণতা বেশি বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে এনবিআর রাজস্ব পেয়েছে ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
আয়কর অধ্যাদেশের ১৯এএএ ধারা অনুযায়ী, যত টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হবে, তার ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। গত ৬ মাসে ২০৫ জন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী এই সুযোগ নিয়েছেন। এনবিআর পেয়েছে প্রায় ২৩ কোটি টাকার কর।
কালোটাকা সাদা করার দুটি সুযোগই আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে। যাঁরা এই সুযোগ নেবেন, তাঁরা সংশোধিত রিটার্ন জমা দিয়ে কিংবা আগামী বছর রিটার্ন জমার সময় তা ঘোষণা করতে পারবেন।
প্রায় সব সরকারের আমলেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো এ দেশের করদাতাদের সামনে এই ধরনের সুযোগ আসে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে ১৭ বার এই ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোবারই তেমন একটা সাড়া মেলেনি। সবচেয়ে বেশি সাড়া মিলেছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিল। এরপর এবারই সবচেয়ে সাড়ে সাত হাজারের বেশি করদাতা এই সুযোগ নিয়েছেন।
আরও পড়ুন
-
স্কুল, মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের
-
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মে পর্যন্ত বন্ধ
-
আগামীকালও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়
-
মিয়ানমারে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি
-
সামান্য রদবদলে নতুন টেলিযোগাযোগ আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন