Thank you for trying Sticky AMP!!

বহু কারখানা বেতনই দেয়নি

মাত্র পাঁচ দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। অথচ এখনো ঈদ বোনাস পাননি দুই হাজারের বেশি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার শ্রমিক।

শত বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প

আর মাত্র তিন দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। অথচ এখনো সাড়ে পাঁচ শর বেশি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা গত জুন মাসের বেতন দেয়নি। সাবকন্ট্রাক্টিং বা ঠিকায় কাজ করা কারখানা হিসাব ধরলে সংখ্যাটি পৌঁছে যাবে হাজারের কাছাকাছি। এ ছাড়া ঈদ বোনাস পাননি দুই হাজারের বেশি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার শ্রমিক।

এদিকে বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামাও শুরু হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের লক্ষ্মীপুরা এলাকার স্টাইলক্রাফটের শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে গাজীপুর-ঢাকা মহাসড়কে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নেন। ওই কারখানার শ্রমিকদের আট মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। গত ঈদেও আন্দোলন করে বেতন-বোনাস নিতে হয়েছে তাঁদের।

শ্রমিকনেতারা বলছেন, কমপ্লায়েন্ট বা উন্নত কর্মপরিবেশের পোশাক কারখানা বেতন-বোনাস সময়মতোই দেয়। সমস্যা হয় ছোট, মাঝারি ও ঠিকায় কাজ করা কারখানাগুলোয়। দুই-তিন বছর আগে ঈদের কয়েক দিন আগে বেতন-বোনাস দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হতো। তবে সাম্প্রতিক কালে মালিকপক্ষের চাপে সময়সীমাটি একেবারে ঈদের আগের এক–দুই দিন নির্ধারণ করা হয়। তাতে কোনো কারখানা বেতন-বোনাস দিতে না পারলে সমস্যার সমাধান করা যায় না। এতে পোশাকশ্রমিকেরা ভোগান্তিতে পড়েন।

শিল্পপুলিশের তথ্যানুযায়ী, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় প্রায় ৩ হাজার ১০০ পোশাক ও বস্ত্র কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা পোশাকশিল্পমালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিজিএমইএর ৩৪৬, বিকেএমইএর ১৫২ ও বিটিএমএর ৮১ কারখানা শ্রমিকদের গত জুন মাসের বেতন-ভাতা দেয়নি। অন্যদিকে ঈদ–বোনাস দেয়নি বিজিএমইএর ১ হাজার ৩৮২, বিকেএমইএর ৪৯৫ ও বিটিএমএর ২৪২টি কারখানা। বেপজার অধীনে থাকা ইপিজেডের ২৮টি কারখানা বেতন-ভাতা দেয়নি। আর বোনাস পরিশোধ করেনি ২৪১টি কারখানা।

পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পকারখানাও তদারক করে শিল্পপুলিশ। তাদের তথ্যানুযায়ী, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় পোশাক এবং বস্ত্রসহ মোট কারখানা আছে ৭ হাজার ৮২৪টি। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জুন মাসের বেতন দেয়নি ১ হাজার ৫৩৯টি। আর বোনাস দেয়নি ৫ হাজার ৮৭৩ কারখানা। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ কারখানা বেতন দিলেও বোনাস দিয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। শুধু বৃহস্পতিবার ৫২৭টি কারখানা বেতন ও ৭১৭টি কারখানা বোনাস দিয়েছে।

জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বড় কারখানাগুলো মূল বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দিলেও ছোট ও মাঝারি কারখানা কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করে না। তাই শেষ মুহূর্তে কিছু কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সদস্য ছয়–সাতটি কারখানার বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হতে পারে। সেগুলো আমরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি। তা ছাড়া ৯০ শতাংশ কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। অধিকাংশ কারখানার বোনাস বাকি। আগামী রোববার-সোমবারের মধ্যে সব কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধ করবে।’

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সদস্য চার–পাঁচটি কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে সমস্যা হতে পারে। শেষ পর্যন্ত যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেই চেষ্টা করছি আমরা।’

তৈরি পোশাক তথা আরএমজিবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদের (টিসিসি) সভা গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। মালিক, শ্রমিক ও সরকারপক্ষের সেই সভা শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের গত জুনের বেতন ও ঈদ–বোনাস ১৯ জুলাই সোমবারের মধ্যে পরিশোধ করার আহ্বান জানান।

জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা বাবুল আখতার বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী এক মাসের বেতন পরের মাসের সাত কর্মদিবস বা ১০ তারিখের মধ্যে দেওয়ার বিধান রয়েছে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী ঈদের আগে ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে বেতন ও বোনাস প্রদানের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এতে কিছু কারখানা মালিক বেতন-ভাতা না দেওয়ার সুযোগ নিতে পারেন। কোনো কারখানা যদি বেতন-বোনাস না দেয়, তাহলে শ্রমিকেরা কোথায় যাবেন? তাঁদের রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না। সে জন্য ঈদের আগে বেতন-ভাতা পরিশোধের শেষ সময়সীমা চার-পাঁচ দিন আগে রাখা প্রয়োজন।