ভারতীয় গম
ভারতীয় গম

ভারতের নিষেধাজ্ঞা

বেসরকারি চুক্তির গমের কী হবে

চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রুবি ফুড প্রোডাক্টস গত শুক্রবার রাতে ভারতের মুম্বাইয়ের এক রপ্তানিকারকের সঙ্গে ৫৫ হাজার টন গম আমদানির চুক্তি করে। এই গম জুলাই মাসে জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর শর্ত ছিল। ব্যাংক খোলার পর ঋণপত্র খোলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল।

অবশ্য চুক্তির পরদিন শনিবার ভোরে ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের খবরে চমকে ওঠেন বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী। কারণ, শুক্রবারের তারিখ দিয়ে ভারতের গম রপ্তানির প্রজ্ঞাপন জারি হলেও তা জানা ছিল না ভারতীয় সরবরাহকারীরও। বিএসএম গ্রুপের মতো রাজশাহীর নাবিল গ্রুপও ভারত থেকে ৫৫ হাজার টন গম আমদানির চুক্তি করেছিল গত শুক্রবার। তবে ঋণপত্র খোলার সময় পায়নি তারা।

শুধু এই দুটি গ্রুপ নয়, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গম আমদানির চুক্তি করেছিল বাংলাদেশের অনেক ছোট–বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার খবরে তাদের মাথায় হাত। ভারতের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১২ মের মধ্যে ঋণপত্র না খোলায় দেশটি থেকে এসব গম রপ্তানির সুযোগ নেই।

যোগাযোগ করা হলে বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী রোববার প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তি হওয়ার পর ঋণপত্র খোলার অপেক্ষায় আছে, এমন গমের পরিমাণ আনুমানিক পাঁচ লাখ টনের কম হবে না। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ করে যদি এসব গম আমদানির ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে দুই–চার মাসে বড় কোনো সংকট হবে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সহযোগিতা করতে পারে।

শুক্রবারের তারিখ (১৩ মে) দিয়ে জারি হওয়া ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা রপ্তানিতে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে দুটি ক্ষেত্রে রপ্তানি করা যাবে—১. ইতিমধ্যে খুলে ফেলা যেসব ঋণপত্র (এলসি) বাতিলযোগ্য নয়, তার বিপরীতে এবং ২. খাদ্যঘাটতিতে থাকা দেশের সরকারের অনুরোধের বিপরীতে ভারত সরকার অনুমতি দিলে।

বাংলাদেশের সিংহভাগ গম আমদানি হতো রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। গম আমদানিতে বাংলাদেশ ভারতের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল ছিল না। দেশটি অনিয়মিতভাবে গম রপ্তানি করত। ফলন ভালো হওয়ায় বছর দুয়েক আগে গম রপ্তানি শুরু করে দেশটি। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশ দুটি থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়। ছোট–মাঝারি থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীরাও ভারত থেকে গম আমদানি শুরু করেন। এক চালানে ২০–৩০ টন করে গম আমদানি করতে থাকেন ছোট ব্যবসায়ীরা। স্থলবন্দর দিয়ে ট্রাকে, রেলে এবং সমুদ্রবন্দর দিয়ে জাহাজে করে গম আমদানি বাড়তে থাকে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৯–২০ অর্থবছরে গম আমদানিতে যুক্ত ছিল ৯৮টি প্রতিষ্ঠান। ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ায় ২০২০–২১ অর্থবছরে আমদানিকারকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭৩। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি বন্ধের আগে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৭০০টির বেশি। আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়ায় সংকটের সময়েও দেশে গমের সরবরাহ ভালো ছিল। ভারতের রপ্তানি বন্ধে সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভারত রপ্তানি শুরুর পর গম আমদানিতে অসংখ্য ছোট ব্যবসায়ী যুক্ত হয়েছিলেন, যেটি বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক। এখন রপ্তানি বন্ধ করলেও বেসরকারি চুক্তি হওয়া গমের চালান যাতে দেশে আনা যায়, সে জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা চালানো উচিত। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ হওয়ায় সরকারি আমদানির মতো বেসরকারি খাতের চুক্তির গম আমদানিতে সাড়া দেবে বলে আশা করি। উদ্যোগটা সরকার থেকেই নিতে হবে।

অবশ্য খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বেসরকারি খাত যদি গম আমদানির ব্যাপারে সহায়তা চায়, তাহলে লিখিতভাবে চাইতে হবে। আমরা অবশ্যই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সে চেষ্টা করব।’