বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক

শ্রম অধিকারের দুর্বলতা দূর করার তাগিদ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার নীতি ঘোষণার দুই সপ্তাহ পর প্রথমবার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সভা করেছে সরকার। এতে ব্যবসায়ী নেতারা নতুন এই নীতি নিয়ে সরাসরি শঙ্কার কথা না বললেও শ্রম অধিকারবিষয়ক যেসব আইনি দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো ধাপে ধাপে সংশোধন করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকে ব্যবসায়ীদের পণ্য রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখার তাগিদ দেওয়া হয়।

সচিবালয়ে গতকাল সোমবার ‘শ্রম অধিকারসংক্রান্ত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’র বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য এ বৈঠক আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শ্রমসচিব এহছানে এলাহী, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রমুখ।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আইনের সংশোধনসহ বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে। ফলে বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আসার মতো কোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নেই ।
তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব

বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির আরও উন্নতি চায় যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) তা চায়। বাংলাদেশ এ চাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আইনের সংশোধনসহ বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে। ফলে বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আসার মতো কোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নেই।

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসার আশঙ্কা করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবারও বলেছি যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই।’

যুক্তরাষ্ট্র গত ১৬ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় নতুন নীতি ঘোষণা করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ নীতি প্রকাশকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যাঁরা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন, ভয় দেখাবেন, তাঁদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির বিষয়ে ২২ নভেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে ‘শঙ্কা’ প্রকাশ করে বাণিজ্যসচিবকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন এ নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ। কারণ, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের ওপর আরোপের সুযোগ রয়েছে। দূতাবাসের সেই চিঠির পর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বৈঠকে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি নিয়ে আমি শঙ্কিত নই। আমরা শ্রম আইন লঙ্ঘন করছি না। কেউ যেন শ্রম আইন লঙ্ঘন করতে না পারে, সেটি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা জানান, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেটি কিছুটা শিথিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকের মোট সংখ্যা তিন হাজার পর্যন্ত হলে শতকরা ২০ ভাগ এবং ৩ হাজারের বেশি হলে শতকরা ১৫ ভাগ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য না হলে সেই শ্রমিক সংগঠন নিবন্ধন পাবে না। বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩-এ ধারা যুক্ত করা হয়। তারপরও এই ধারা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে শ্রমিকদের স্বাক্ষরের হারটি আরও কমানো যায় কি না, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, শ্রম অধিকার পরিপালনে বাংলাদেশ যথেষ্টই অগ্রগামী। কিছু বিষয় আছে প্রক্রিয়াধীন। ফলে ওয়াশিংটনের চিঠি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যৌক্তিকভাবে বললে বলব ‘না’। তবে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা ভিন্ন কথা।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকারবিষয়ক নীতি ঘোষণার পর গত ২০ নভেম্বর দেশের শীর্ষ কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

এদিকে গতকালের বৈঠকের বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছি। একই সঙ্গে শ্রম ইস্যুতে সংস্কারকাজ যেন অব্যাহত থাকে, সেই প্রস্তাবও দিয়েছি।’