Thank you for trying Sticky AMP!!

তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা

যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরে রপ্তানি কমেছে ২৪৪ কোটি ডলার 

গত বছর রপ্তানি কমলেও আগামী গ্রীষ্মে ভালো ক্রয়াদেশ পাবেন বলে আশা করছেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকেরা।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০২৩ সালটা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য ভালো যায়নি। এই এক বছরেই দেশটিতে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৪৪ কোটি ডলার। তবে শুধু বাংলাদেশই নয়, দেশটিতে শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য চার দেশের পোশাক রপ্তানিও কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫৪৪ কোটি ডলার। একইভাবে ভিয়েতনামের ৪০৬ কোটি, ভারতের ১৫২ কোটি ও ইন্দোনেশিয়ার ১৪২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি কমেছে। 

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। ২০২২ সালের একই সময়ে তাঁরা আমদানি করেছিলেন ৯ হাজার ৯৮৬ কোটি ডলারের পোশাক। এর মানে, বিদায়ী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি আগের বছরের চেয়ে ২২ দশমিক ০৫ শতাংশ কমে গেছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়তে থাকে। তাতে ওই বছরের জুনে দেশটির মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়। মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছানোর কারণে নিত্যপণ্য ছাড়া অন্য পণ্য কেনাকাটা কমিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা। যার প্রভাব পড়েছে দেশটিতে পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর। এসব দেশের রপ্তানি কমে যায়। 

তবে পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৩ দশমিক ১ শতাংশ। এর আগে ডিসেম্বরে বড়দিনের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। ফলে আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ পাওয়ার হার বাড়বে বলে আশা করছেন তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন। বিদায়ী বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬৩১ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৪১৮ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রপ্তানি কমেছে ২২ দশমিক ২৯ শতাংশ। 

এই বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ। বিদায়ী বছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৭২৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ বা ২৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ কম। গত বছর বাংলাদেশ থেকে মোট পোশাক রপ্তানির সাড়ে ১৭ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

গত বছর ২২৬ কোটি বর্গমিটার কাপড়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ কম। ২০২২ সালে ৩১৩ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১২ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪১৮ কোটি ডলার। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়ে ৯৭২ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। তবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে এক-চতুর্থাংশ।

জানতে চাইলে কিউট ড্রেস ইন্ডাস্ট্রিজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ বাড়ছে। পাশাপাশি কানাডা ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকেও বাড়ছে। গত বছর তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশটির বিভিন্ন গুদামে পণ্যের মজুত বেশি থাকায় ক্রয়াদেশ কম এসেছিল। তবে ইতিমধ্যে মজুত কমে যাওয়ায় ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে পোশাকের চাহিদাও বাড়ছে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গত বছর মাত্র দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত বছর ইইউতে ২ হাজার ৩৩৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড়দিনে যুক্তরাষ্ট্রে ভালো বেচাবিক্রি হয়েছে। ফলে আমাদের প্রত্যাশা আগামী এপ্রিল-মে থেকে ক্রয়াদেশ বাড়বে। ওই সময়ে মূলত আগামী বছরের গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসবে। তার আগে শীতের যে ক্রয়াদেশ এসেছে সেটিও খুব খারাপ নয়।’

আবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ফেরা যাক। দেশটিতে বিভিন্ন দেশের রপ্তানি কমলেও বাজার হিস্যায় বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের হিস্যা হচ্ছে যথাক্রমে ২১, ১৮ ও ৯ শতাংশ।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ টুকটাক আসছে। ক্রয়াদেশ কেমন এল, সেটি বোঝার জন্য আরেকটু সময় লাগবে। আগামী শীতের ক্রয়াদেশ খুব আহামরি না হলেও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ ভালো হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’