শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজারে কারসাজি

জেনেক্স ইনফোসিসের ৯ পরিচালককে সোয়া ৯ কোটি টাকা জরিমানা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসের ৯ জন পরিচালকের প্রত্যেককে ১ কোটি ৩ লাখ টাকা করে মোট ৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর বাইরে একই ঘটনায় জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে আলাদাভাবে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯ ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠানকে ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে সোনালী পেপারের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গতকাল বুধবারের সভায় এই জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএসইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। একই সভায় তালিকাভুক্ত একমি পেস্টিসাইডের প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে অনিয়মে জড়িত ১৫ ব্যক্তি ও ৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ারের ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। একমি পেস্টিসাইডের প্রি-আইপিও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোম্পানির বাস্তব আর্থিক চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং-এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি একই কোম্পানির আইপিওর অর্থ ব্যবহারসংক্রান্ত নিরীক্ষায় যথাযথ তথ্য নিশ্চিত করতে না পারায় আরেক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান শফিক বসাক অ্যান্ড কোং-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বা এফআরসিতে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া বেশ কয়েকটি কোম্পানির আর্থিক অনিয়মের তথ্য নিরীক্ষা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে না ধরায় বেশ কিছু নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজার–সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম পাঁচ বছরের জন্য কেন নিষিদ্ধ করা হবে না—তার ব্যাখ্যা তলবের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এ হক অ্যান্ড কোং, আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং, সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং, ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং।

বিএসইসি জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী পেপারের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির ঘটনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এই কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় কোম্পানিটি। এ কারণে জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান টি আই এম নুরুল কবির, ভাইস চেয়ারম্যান প্রিন্স মজুমদার, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ জালাল উদ্দিন, পরিচালক চৌধুরী ফজলে ইমাম, হাসান শহীদ সারওয়ার, মোহাম্মদ আদনান ইমাম, নিলুফার ইমাম, রোকেয়া ইসলাম ও জহরুল সৈয়দ বখতকে ১ কোটি ৩ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এসব পরিচালকের মধ্যে টি আই এম নুরুল কবির, রোকেয়া ইসলাম ও জহরুল সৈয়দ বখত ছিলেন কোম্পানিটির পর্ষদে নিযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালক। আর হাসান শহীদ সারওয়ার ছিলেন ওরাকল সার্ভিসেসের মনোনীত পরিচালক। এসব পরিচালকের বাইরে জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

টাকা ছাড়া প্লেসমেন্ট শেয়ার

কোনো টাকা পরিশোধ না করে একমি পেস্টিসাইডের প্লেসমেন্ট শেয়ারের ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়ার জন্য ছাগল–কাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত কারাবন্দী মতিউর রহমানসহ নয়জন প্লেসমেন্টধারী, কোম্পানিটির চার পরিচালক ও দুই কর্মকর্তা এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দুদকে প্রতিবেদন প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ ঘটনায় যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে প্রতিবেদন পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে তাঁরা হলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান শান্তা সিনহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউর রহমান সিনহা, পরিচালক আহসান হাবিব সিনহা ও কে এম হেলোয়ার, কোম্পানি সচিব সবুজ কুমার ঘোষ ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী ছাগল–কাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমান, আফজাল হোসেন, তফাজ্জল হোসেন ফরহাদ, জাভেদ এ মতিন, আঞ্জুমান আরা বেগম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সারওয়ার, তৌহিদা আকতার, রুহুল আজাদ ও রানু ইসলাম। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বিক্রমপুর পটেটো ফ্ল্যাক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বেঙ্গল অ্যাসেটস হোল্ডিংস, চিটাগং পেস্টিসাইডস অ্যান্ড ফিশারিজ, হেরিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ও এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট (এমডিএ)।