মন্দা শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল দুর্বল ও মাঝারি কোম্পানি। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিই ছিল দুর্বল মৌলভিত্তির জেড শ্রেণিভুক্ত। আর দুটি ছিল মাঝারি মানের বি শ্রেণিভুক্ত ও তিনটি ভালো মৌলভিত্তির এ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি। দুর্বল ও মাঝারি মানের কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধিতে বাজারে লেনদেন পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।
বাজার–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে শেয়ারবাজার টানা দরপতনের ধারায় রয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণির বড় বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বাজারে। এ কারণে একদিকে বাজারে লেনদেন কমছে, অন্যদিকে ভালো শেয়ারের ক্রেতা কম। আর এই সুযোগে স্বল্প সময়ে দ্রুত লাভের আশায় কম দামি দুর্বল মানের কোম্পানির প্রতি ঝুঁকছে। তাতে এসব কোম্পানি মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা করে নিচ্ছে।
ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ছিল যথাক্রমে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বন্ড, রহিম টেক্সটাইল মিলস, রহিমা ফুড, আরএসআরএম স্টিল, অ্যাপেক্স ফুডস, বিডি ওয়েল্ডিং, বে লিজিং, মুন্নু অ্যাগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ, রিজেন্ট টেক্সটাইল ও জেনারেশন নেক্সট। এই ১০ কোম্পানির মধ্যে আরএসআরএম স্টিল, বিডি ওয়েল্ডিং, বে লিজিং, রিজেন্ট টেক্সটাইল ও জেনারেশন নেক্সট জেড শ্রেণিভুক্ত অত্যন্ত দুর্বল মানের কোম্পানি। এসব কোম্পানির মধ্যে আরএসআরএম স্টিল, রিজেন্ট টেক্সটাইল ও জেনারেশন নেক্সট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ কোম্পানি।
ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বন্ডের। এটির প্রতিটি ইউনিটের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা বা প্রায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া রহিম টেক্সটাইল মিলসের প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ৩৭ টাকা বা ১৯ শতাংশ, রহিমা ফুডের দাম ২২ টাকা বা ১৬ শতাংশ, আরএসআরএম স্টিলের দাম ৮০ পয়সা বা সাড়ে ১৪ শতাংশ, অ্যাপেক্স ফুডসের দাম ২৯ টাকা বা সোয়া ১৩ শতাংশ, বিডি ওয়েল্ডিংয়ের দাম ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ১২ শতাংশ, বে লিজিংয়ের দাম ৩০ পয়সা বা প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ, মুন্নু অ্যাগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজের দাম ৩৫ টাকা বা সোয়া ১০ শতাংশের বেশি, রিজেন্ট টেক্সটাইলের দাম ৩০ পয়সা বা প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ ও জেনারেশন নেক্সটের শেয়ারের দাম ২০ পয়সা বা ৯ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে, গত সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারে সূচক কিছুটা বাড়লেও লেনদেন প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ কমে গেছে। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫৯ কোটি টাকায়। তার আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল ৩৮৭ কোটি টাকা। ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৮৪ পয়েন্টে। গত সপ্তাহে ব্যাংক, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ–জ্বালানি, সেবা ও আবাসন এবং বিবিধ খাত ছাড়া বাকি সব খাতেরই লেনদেন কমেছে। ব্যাংক খাতের লেনদেন হওয়ার ব্যাংকগুলোর দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ২৩ শতাংশ। সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ। এ ছাড়া বিদ্যুৎ–জ্বালানি খাতের প্রায় ২০ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতের কোম্পানির সাড়ে সাত শতাংশ ও বিবিধ খাতের কোম্পানির দৈনিক গড় লেনদেন ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর বাইরে শেয়ারবাজারে বাকি ১৬টি খাতেরই লেনদেন আগের সপ্তাহের চেয়ে কমেছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর রাজনীতিতে একধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতি ও অর্থনীতির অনিশ্চয়তা যত দ্রুত কাটতে শুরু করবে, শেয়ারবাজারেও তার বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বেমিনহাজ মান্নান, পরিচালক, ডিএসই
বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থনীতি ও রাজনীতিতে একধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। এই অবস্থায় দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে রাজনীতিতে একধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তার এই আগমনে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকট কিছুটা হলেও কমবে। তাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করবে বলে আশা করছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে যে অনিশ্চয়তা ছিল, সেটিও অনেকাংশে কাটতে শুরু করেছে তার প্রত্যাবর্তনে। যার প্রভাব শেয়ারবাজারেও কিছুটা পড়েছে। এ কারণে টানা দরপতনের বাজারে গত সপ্তাহে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। রাজনীতি ও অর্থনীতির অনিশ্চয়তা যত দ্রুত কাটতে শুরু করবে শেয়ারবাজারেও তার বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হতে শুরু করবেন। তাতে নতুন বছরে বাজারকে ইতিবাচক ধারায় দেখা যাবে বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে টানা দরপতনে ঢাকার বাজারের সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও গত সপ্তাহ শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬৩–এ। খাতভিত্তিক পিই রেশিওর দিক থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড, বিদ্যুৎ–জ্বালানি ও ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যে খাতের পিই রেশিও যত কম সেই খাতটি বিনিয়োগের জন্য তত বেশি নিরাপদ। সেই বিবেচনায় সার্বিকভাবে বাজারে পিই রেশিও এখন বিনিয়োগের সবচেয়ে উত্তম পর্যায়ে নেমে এসেছে।