ওয়ালটনের লোগো
ওয়ালটনের লোগো

হাজার কোটি টাকা মুনাফা ওয়ালটনের, নগদ লভ্যাংশ দেবে ৫৩০ কোটি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইলেকট্রনিকস খাতের দেশীয় জায়ান্ট কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ গত অর্থবছরে হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। যদিও কোম্পানিটির মুনাফা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩২০ কোটি টাকা বা ২৪ শতাংশ কমে গেছে।

গতকাল বুধবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত জুনে সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সেই তথ্য প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। কোম্পানির প্রকাশ করা আর্থিক প্রতিবেদন থেকে মুনাফা কমে যাওয়ার এই তথ্য পাওয়া গেছে। মুনাফা কমে যাওয়ায় কোম্পানিটির লভ্যাংশের পরিমাণও কমেছে।

কোম্পানিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ মুনাফা করেছে ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। তার আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই মুনাফার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা ৩২০ কোটি টাকা কমে গেছে। মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ওয়ালটন জানিয়েছে, একদিকে কোম্পানির বিক্রি কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে আর্থিক ও পণ্য বিতরণ বাবদ খরচ। যার কারণে বছর শেষে কোম্পানির মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১৭৫ শতাংশ বা প্রতি শেয়ারে সাড়ে ১৭ টাকা করে নগদ লভ্যাংশ দেবে। এ ছাড়া দেওয়া হবে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। তাতে প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে একজন শেয়ারধারী ১০টি বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে পাবেন। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৩৫০ শতাংশ বা প্রতি শেয়ারে ৩৫ টাকা করে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

ওয়ালটন গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য নগদ যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তার জন্য কোম্পানিটিকে নগদ লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করতে হবে ৫৩০ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে কোম্পানিটি নগদ লভ্যাংশ বাবদ শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করেছিল ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ কমে অর্ধেক হয়েছে। তবে ২০২০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর এবারই প্রথম বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। তাতে কোম্পানিটিকে বোনাস লভ্যাংশ বাবদ নতুন করে প্রায় ৩ কোটি ৩ লাখ শেয়ার ইস্যু করতে হবে, আজ বৃহস্পতিবারের বাজারমূল্য (৪৮৭ টাকা) অনুযায়ী এই বোনাস শেয়ারের সর্বমোট দাম দাঁড়ায় এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই শেষে ওয়ালটনের সিংহভাগ তথা ৬১ শতাংশের বেশি শেয়ার ছিল কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। আর প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল ৩৯ শতাংশ শেয়ার। সেই হিসাবে গত অর্থবছর শেষে ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের বড় অংশই পাবেন কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। ৫৩০ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশের মধ্যে তাঁরা পাবেন ৩২৩ কোটি টাকা। বাকি ২০৭ কোটি টাকা লভ্যাংশ হিসেবে পাবেন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে মুনাফা ও লভ্যাংশ উভয়ই কমে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়। লেনদেন শুরুর প্রথম দেড় ঘণ্টায় (বেলা সাড়ে ১১টায়) কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ২ শতাংশ বা ৯ টাকার বেশি কমেছে। তাতে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য কমে দাঁড়ায় ৪৮৪ টাকায়।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে ওয়ালটন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। শুরুতে কোম্পানিটি মাত্র ১ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছেড়েছিল। পরে এ নিয়ে বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশে কোম্পানিটি আরও ৯ শতাংশের বেশি শেয়ার বাজারে ছাড়ে। সব মিলিয়ে কাগজেকলমে বর্তমানে প্রায় ৩৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকলেও তার একটি বড় অংশ রয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের হাতে, যাঁরা কোম্পানির উদ্যোক্তাও নন আবার পরিচালনায়ও নেই। তালিকাভুক্তির পর থেকে ওয়ালটন গত পাঁচ বছরে ২০০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়নি। এবারও প্রথম নগদ ও বোনাস মিলিয়ে কোম্পানিটি ১৮৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে শেয়ারধারীদের জন্য।