এক বছরে দাম দ্বিগুণ

আমদানি কমেছে, বিক্রিও কম তবু হাজার ছাড়াল জিরার দাম

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে জিরার আমদানি হয়েছে ৩২ হাজার ৯৩ টন। গত চার বছরের মধ্যে এ আমদানি সর্বনিম্ন।

জিরা
জিরা

দেশে ডলার-সংকটের কারণে আমদানি কমেছে জিরার। গত এক বছরে আমদানি-নির্ভর এই পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। তাতে কমেছে বেচাকেনা। সাধারণত কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে জিরার মতো মসলার দাম ওঠানামা করলেও, এবার আমদানি কমে যাওয়ায় কোরবানির পরও জিরার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। গত এক মাসে জিরার দাম আরেক দফা বেড়েছে। তাতে প্রতি কেজি জিরার দাম এক হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।

রাজধানী ও চট্টগ্রামের মসলার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে এখন দুই ধরনের জিরা পাওয়া যায়। দুটিই আমদানি করা জিরা। মানের তারতম্যের কারণে দামও একটু কমবেশি। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা জিরার প্রতি কেজি খুচরা দাম ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা। আর অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা জিরার দাম প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা। ঈদের পর এই দুই ধরনের জিরার দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, সদ্যবিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে জিরা আমদানি হয়েছে ৩২ হাজার ৯৩ টন। আর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) আমদানি হয়েছিল ৪০ হাজার ১৯৯ টন; অর্থাৎ গত এক বছরের ব্যবধানে জিরার আমদানি কমেছে ৮ হাজার ১০৬ টন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে জিরা আমদানি হয়েছিল ৪১ হাজার ৬৪৬ টন। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয় ৩৬ হাজার ৬১৪ টন। এনবিআরের এ তথ্য অনুযায়ী, গত চার অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম জিরা আমদানি হয়েছে সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে।

বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ডলার-সংকটে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে সমস্যা হওয়ায় আমদানি কমেছে। আবার ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাতে আমদানি খরচও বেড়েছে। এ কারণে দামও বেড়েছে বাজারে। বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে কমেছে জিরার বেচাকেনাও। তাতে বড় ধরনের সংকটের শঙ্কা কম।

মসলা আমদানিকারকেরা বলছেন, গত বছর ডলার-সংকট শুরু হওয়ার পর দেশের বাজারে জিরার আমদানি কমতে শুরু করে। আর ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ বেড়ে যাওয়ায় জিরার দামও বেড়ে যায়। আবার আন্তর্জাতিক বাজারেও জিরার দাম ছিল বাড়তি। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে দেশের বাজারেও জিরার দাম সময়-সময় বেড়েছে। এখন এসে সেটা হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেল। আমদানি করা জিরা গুঁড়া করে বিক্রি করে দেশের বড় বড় বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। গুঁড়া জিরার দাম এখন প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুঁড়া জিরার দামও গত এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছরের এই সময়ে বাজারে প্রতি কেজি জিরার দাম ছিল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। সেই জিরা এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। অথচ এক মাস আগে দাম ছিল ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকা কেজি। টিসিবির হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ১৩৫ শতাংশ।

রাজধানীর শাহজাহানপুর বাজারের ফেনী জেনারেল স্টোরের মালিক আজহার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জিরার মূল্যবৃদ্ধির ফলে বেচাকেনা কমে গেছে।

আমদানির তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবচেয়ে বেশি জিরা আমদানি হয় ভারত থেকে। প্রতিবছর দেশের মোট চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ জিরা ভারত থেকে আমদানি করা হয়। বাকি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আমদানি হয় তুরস্ক, মিসর, সিরিয়া, পাকিস্তান, কম্বোডিয়ার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে। তবে গত অর্থবছরে এই চিত্র উল্টে গেছে। গত অর্থবছরে জিরার ৯৭ শতাংশই আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তুরস্ক থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র তিন শতাংশ।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, জিরার বাজার এখন স্থলবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের হাতে। ভারতের বিকল্প যেসব বাজার রয়েছে, সেখানে জিরা পাওয়া যাচ্ছে কম। উৎস কমে যাওয়ায় আমদানি কম হয়েছে। তাতে জিরার দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। আবার আমদানি কমার প্রভাব পড়েছে লবঙ্গের দামেও।

টিসিবির তথ্য বলছে, গত বছরের এই সময়ে বাজারে লবঙ্গের দাম ছিল প্রতি কেজি ৯৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এখন এ দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি কেজি দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। সংস্থাটির হিসাবে বছর ঘুরতেই লবঙ্গের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।