দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ছে

  • যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিনবীজ আমদানি শুরু, এ মাস থেকে নিয়মিত জাহাজ আসবে।

  • তিনটি গ্রুপ ১৯ হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি করেছে।

  • নীতি সহায়তা পেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বেড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উঠবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমিয়ে আনতে গত জুলাই মাসে দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় দুই মাসের মাথায় ব্যবসায়ীদের অঙ্গীকারের আমদানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে সয়াবিনবীজের একটি জাহাজ এসে পৌঁছেছে। ‘এমভি ইয়াংসি ইমপ্রেশন’ নামের জাহাজটি থেকে এখন চট্টগ্রাম বন্দরে সয়াবিনবীজ খালাস হচ্ছে। আগামী মাসে বন্দরে পৌঁছাবে আরও দুটি জাহাজ। অর্থাৎ এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য নিয়ে জাহাজ বন্দরে ভিড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের এ ঘোষণার আগে সরকারের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে। পাশাপাশি সফররত বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নেন। তাঁরা দেশটি থেকে পণ্য আমদানির জন্য সমঝোতা চুক্তি ও অঙ্গীকার করেছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্যঘাটতি কমলে পাল্টা শুল্ক সামনে আরও কমতে পারে। আর প্রতিযোগিতামূলক দাম পাওয়া গেলে আমদানি আরও বাড়তে পারে।

আসছে সয়াবিনবীজ

দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই মাসের শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় চার লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির তাৎক্ষণিক সমঝোতা হয়। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ১৩ কোটি মার্কিন ডলারের তিন লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির সমঝোতা করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর আরও দুই লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে এমজিআই। সব মিলিয়ে গ্রুপটি পাঁচ লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানি করছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সয়াবিন তেল ও প্রাণিখাদ্য তৈরির কাঁচামাল হলো সয়াবিনবীজ।

শিল্প গ্রুপটি জানিয়েছে, বর্তমানে গ্রুপটির যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা একটি জাহাজ থেকে ৫৭ হাজার টন সয়াবিনবীজ খালাস হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এই সয়াবিনবীজ আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে ১ লাখ ১০ হাজার টনের আরও দুটি জাহাজ বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে ১০টি জাহাজে এসব পণ্য আসবে।

জানতে চাইলে এমজিআইর চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ লাখ টন সয়াবিনবীজ আমদানি করছি আমরা। এ ছাড়া ভুট্টা, এলপিজি, গম আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আমরা। বাণিজ্যঘাটতি হ্রাস করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিতে জোর দিচ্ছি।’

মেঘনা গ্রুপ ছাড়াও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রায় ১০ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানির সমঝোতা করেছিল। গ্রুপটির সয়াবিনবীজ নিয়ে একটি জাহাজ আগামী মাসে বন্দরে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন গ্রুপটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সয়াবিনবীজ আমদানি হয় মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৮ কোটি ডলারের ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ। এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্যটি আমদানি আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

তুলাও আসবে

গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ১৯ হাজার টন তুলা আমদানির সমঝোতার চুক্তি করে বাংলাদেশের বস্ত্র খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সালমা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের কার্গিল ইনকরপোরেটের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ ডলারে ৬ হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি করে। এশিয়া কম্পোজিট একই রকম আরেকটি চুক্তি করে। এ ছাড়া মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস মার্কিন লুইস ড্রেফুস গ্রুপ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ৭ হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি করেছিল। এর মধ্যে মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস এক হাজার টন তুলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বিটিএমএর নেতারা দেশটি থেকে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানির অঙ্গীকার করেছিলেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করে রপ্তানি করলে যাতে রপ্তানিতে সুবিধা পাওয়া যায়, সেই দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের তুলার দাম অন্য দেশের তুলনায় কিছুটা বেশি হওয়ায় সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা চান এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

এনবিআরের হিসাবে, গত অর্থবছরে ৩৪৪ কোটি ডলারের কাঁচা তুলা আমদানি হয়েছে দেশে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছিল সাড়ে ২৩ কোটি ডলারের তুলা।

ঘাটতি কমার আশা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি কম, রপ্তানি বেশি। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কমলে এই হার সামনে আরও কমানোর সুযোগ আছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলওএবি) সভাপতি আমিরুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে দরকার সরকারের নীতি সহায়তা। খাতভিত্তিক নীতি সহায়তা পাওয়া গেলে দেশটি থেকে আমদানি পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।