
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পর্যটকদের ভুটানে প্রতি রাত অবস্থানের জন্য ওই দেশের সরকারকে মাশুল দিতে হয় ১৫ মার্কিন ডলার। দক্ষিণ এশিয়া ছাড়া বিশ্বের অন্য দেশের জন্য প্রতি রাতের মাশুল ১০০ ডলার।
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভুটান ভ্রমণের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির ঢাকা সফররত প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে। এ ছাড়া বৈঠকে ভুটান এখন মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বৈঠকে ভুটানের ফরেন অ্যাফেয়ার্স ও এক্সটার্নাল ট্রেড মিনিস্টার ডি এন ধুনগায়েল; ইন্ডাস্ট্রি, কমার্স অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট মিনিস্টার লায়েন পো নামগায়েল দর্জি এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুবই চমৎকার। বাণিজ্য বাড়লে বিদ্যমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা নতুন মাত্রা যোগ করবে। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তি (পিটিএ) রয়েছে। ভুটান এখন মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভুটান সরকার প্রতি রাত অবস্থানের জন্য টেকসই উন্নয়ন মাশুল অর্থাৎ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি (এসডিএফ) হিসেবে তা নিচ্ছে। বাংলাদেশিরা এ সুযোগ নিয়ে ভুটান ভ্রমণের সুযোগ নিতে পারেন। বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশিদের ভুটান ভ্রমণে আগ্রহী করতে পদক্ষেপ নিতে পারে।
কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেরিং তোবগে। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতিমধ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভুটান সরকার তাদের দেশে ‘গেলেফু’ নামক একটি জীববৈচিত্র্য নগর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রস্তাবিত নগরটি ভুটানের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করে তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত ও টেকসই অবকাঠামো তৈরি করা হবে। এ নগর নির্মাণে যেসব নির্মাণ উপকরণের দরকার পড়বে, সেগুলো বাংলাদেশ থেকে আমদানির আগ্রহ রয়েছে তাদের।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় চূড়ান্ত বিজয় আসার আগেই ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভুটান। এ কথা স্মরণ করে ভুটানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। দেশটির সঙ্গে এফটিএ করা প্রসঙ্গে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আসন্ন বাংলাদেশ-ভুটান সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। এ সময় তিনি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও বেশি বাণিজ্য সফর ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পরামর্শ দেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভুটানে মূলত তৈরি পোশাক, খাদ্যসামগ্রী, প্লাস্টিক, ওষুধ, গৃহসজ্জা সামগ্রী, বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি হয়। ভুটান থেকে বাংলাদেশ সবজি ও ফলমূল, খনিজ দ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী, বোল্ডার পাথর, পাল্প, রাসায়নিক আমদানি করে।