টেসলা পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি
টেসলা পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ ইলেকট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি

টেসলার ১০০ কোটি ডলারের শেয়ার কিনলেন ইলন মাস্ক

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক নিজের পকেট থেকে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ব্যয় করে টেসলার শেয়ার কিনেছেন। ফলে টেসলার শেয়ারে প্রাণ ফিরেছে। মাস্কের এই শেয়ার কেনার ফলে চলতি বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে টেসলা।

গত শুক্রবার এই শেয়ার কেনাবেচা হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নথিতে এ তথ্য প্রকাশিত হয় সোমবার। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিইওদের বা প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। সাধারণত বিশেষ ব্যবস্থা ব্যবহার করে কম দামে শেয়ার নেওয়ার ধারাই প্রচলিত, কিন্তু মাস্ক সরাসরি বাজারদরে এই শেয়ার কিনেছেন।

খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোমবার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে টেসলার শেয়ারের দাম ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। যদিও দিনের শেয়ারের দাম বাড়ার হার ৪ শতাংশে স্থির হয়। কিন্তু ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সেটাই যথেষ্ট ছিল। ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান আইভস বলেন, এটি মাস্কের পক্ষ থেকে বড় উদ্যোগ। বিনিয়োগকারীরা বাজারে এমন সংকেত পেয়ে দারুণ খুশি।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্কের জন্য ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ব্যয় তেমন কোনো বিষয় নয়। এই বিনিয়োগের ফল তিনি হাতেনাতে পেয়েছেন। সোমবার টেসলার শেয়ারদর বেড়ে যাওয়ায় এক দিনেই মাস্কের সম্পদমূল্য বেড়েছে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৫৮০ কোটি ডলার।

উত্থান-পতনের বছর

গত বছর মার্কিন নির্বাচনের পর টেসলার শেয়ারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কোম্পানির জন্য সুবিধা বয়ে আনবে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি টেসলার শেয়ারদর রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে; কিন্তু এর পর থেকেই শেয়ারের দাম কমতে থাকে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মাস্কের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা বিতর্ক সৃষ্টি করে। এর প্রভাবে চলতি বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে টেসলার বিক্রি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়ে। একই সঙ্গে চীনের বিওয়াইডিসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ইভি কোম্পানিগুলোর বিক্রি বাড়তে থাকে।

এর ওপর চলতি মাসের শেষে ইভি ক্রেতাদের জন্য ৭ হাজার ৫০০ ডলারের করছাড়ের সুবিধা শেষ হতে যাচ্ছে। ফলে তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রি বাড়লেও বছরের বাকি সময় কঠিন যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

সম্ভাব্য এক লাখ কোটি ডলারের প্যাকেজ

গত সপ্তাহে টেসলা মাস্কের জন্য নতুন বেতনকাঠামো প্রস্তাব করেছে। বিক্রয় ও বাজারমূল্যের লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে তাঁকে এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত সুবিধা দেওয়া হতে পারে। তবে এর জন্য কোম্পানির বাজার মূলধন দুই ট্রিলিয়ন বা দুই লাখ কোটি ডলারে উঠতে হবে; বর্তমানে তা ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার।

টেসলার পর্ষদ বলছে, মাস্ককে টেসলার কাজে মনোযোগী রাখা জরুরি। কিন্তু তিনি একসঙ্গে স্পেসএক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি এক্সএআই ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একআসেরও প্রধান। রাজনীতিতেও সক্রিয় আছেন তিনি।

সমালোচকেরা বলছেন, মাস্কের বিপুল সম্পদ ও প্রভাব বৈষম্যের প্রতীক হয়ে উঠছে। নতুন আমেরিকান পোপ লিও চতুর্দশ এক সাক্ষাৎকারে মাস্কের প্রস্তাবিত বেতনকাঠামোর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘যদি অর্থই একমাত্র মূল্য হয়, তবে সমাজ বড় সংকটে আছে।’

আরও নিয়ন্ত্রণ চান মাস্ক

সোমবারের এই শেয়ার কেনাবেচায় মাস্ক ২৬ লাখ নতুন শেয়ার পেলেও টেসলায় তার মালিকানা বাড়ল ১ শতাংশের কম। বর্তমানে তিনি কোম্পানির ১২ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক। তাঁর লক্ষ্য অন্তত ২৫ শতাংশ শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

মাস্ক সতর্ক করে বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ না পেলে এআই–বিষয়ক উদ্যোগের কিছুটা টেসলা থেকে এক্সএআইয়ে সরিয়ে নেবেন। গত জানুয়ারি মাসে তিনি নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছিলেন, ‘২৫ শতাংশ ভোটাধিকার না থাকলে আমি টেসলার বাইরে এআই-রোবোটিকস নিয়ে কাজ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব।’