ডলারের আধিপত্য কি হুমকির মুখে, ইউয়ান কবে নেবে ডলারের স্থান
বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন ডলারের আধিপত্য ক্ষুণ্ন হতে শুরু করেছে, যাকে বলা হচ্ছে ডিডলারাইজেশন। তবে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জে পি মরগ্যান বলছে, ইউয়ান বা অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রা ডলারের স্থান দখল করে নেবে বা সে রকম ঝুঁকি আছে, তা নয়।
সম্প্রতি এক নোটে জে পি মরগ্যানের কৌশলবিদেরা বলেছেন, চীন অর্থনীতির আকারের দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেলেও ডলারের আধিপত্য যে হুমকির মুখে পড়বে, এমন সম্ভাবনা কম। তাঁরা ইতিহাসের আলোকে বলেছেন, এ ধরনের পরিবর্তন আসতে সময় লাগে।
জে পি মরগ্যানের কৌশলবিদেরা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতির দিক থেকে গ্রেট ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে গেছে ১৯ শতকের শেষ দিকে, কিন্তু বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলার পাউন্ডকে ছাড়িয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে। সে জন্য জে পি মরগ্যানের কৌশলবিদেরা মনে করছেন, ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, চীন ২০২০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেলেও ডলারের আধিপত্য ২১ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত থাকবে।
তার চেয়ে বড় কথা, চীন পুঁজির ওপর নিয়ন্ত্রণ ছাড়লেই কেবল ইউয়ানের দর বৃদ্ধি হবে, যার সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে।
এই বাস্তবতায় জে পি মরগ্যানের কৌশলবিদেরা মনে করছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ডলারের আধিপত্য কিছুটা ক্ষুণ্ন হতে পারে। ডলারের আধিপত্য ক্ষুণ্ন হওয়ার গতি বাড়তে পারে কেবল দুটি কারণে—এক. গ্রিন ব্যাক বা ডলারের ওপর আস্থা কমলে ও দুই. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এমন কিছু যদি ঘটে, যার কারণে অন্যান্য মুদ্রার ওপর মানুষের আস্থা বাড়তে পারে।
তবে ২০২২ সালে সামগ্রিকভাবে ডলারে আধিপত্য কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য উদ্ধৃত করে জেপি মরগ্যান দেখিয়েছে, বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের ব্যবহার গত বছর কমেছে। ২০০১ সালে যা ছিল বৈশ্বিক মোট রিজার্ভের ৭৩ শতাংশ, ২০২২ সালে তা ৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এই সময়ে ইউয়ানের হিস্যা বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
আবার জে পি মরগ্যান এই পরিসংখ্যানকে ডিডলারাইজেশন বা ডলারের আধিপত্য হ্রাসের নমুনা হিসেবে বিবেচনা করে না। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামা ও রিজার্ভের গঠনে পরিবর্তন আসার কারণে ডলারের হিস্যা কমেছে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ১ হাজার ১৩৬ টন সোনা মজুত করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪৫০ টন বেশি। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা মজুতের এই পরিমাণ গত ৫৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জে পি মরগ্যান মনে করে, দীর্ঘ মেয়াদে কেবল চীন মার্কিন ডলার ও মার্কিন অর্থনীতির প্রভাব ক্ষুণ্ন করতে চায়, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, প্রযুক্তি, জনসংখ্যার গঠন, ভৌগোলিক ও অন্যান্য প্রভাবের কারণে সেই সম্ভাবনা কম।
এই বাস্তবতায় একধরনের ত্রিমুখী মুদ্রাব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন ইউরিজোন এসএলজেডের অর্থনীতিবিদ স্টিফেন জেন। বিজনেস ইনসাইডারকে তিনি বলেন, ‘যদি ধারণা করতে হয় তাহলে বলব, ডলারের পাশাপাশি ইউরো ও ইউয়ান প্রায় সমান জায়গা পাবে। এ ধরনের ব্যবস্থা যৌক্তিক, তিন অর্থনৈতিক ব্লকের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সঙ্গেও তা মানানসই হবে’।
আরও পড়ুন
-
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ে ধরপাকড়
-
‘দালালেরা দুই-তিনবার তারিখ দিয়েছে, কথা-কাজে মিল রাখেনি’
-
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ফিরিয়ে দিলেন শহিদুল আলম
-
কারাদণ্ড হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ে যাবেন ট্রাম্প
-
লোহার খাঁচায় দাঁড়াতে হলো, অভিশপ্ত জীবনের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছি: মুহাম্মদ ইউনূস