লাখো কোটি ডলারের ‘উইন্ডফল’ মুনাফা করছে বড় কোম্পানিগুলো

বড় তেল কোম্পানিগুলো গত বছর বিপুল মুনাফা করেছে
রয়টার্স

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের ৭২২টি বৃহত্তম কোম্পানি সম্মিলিতভাবে বছরে এক লাখ কোটি ডলারের বেশি মুনাফা করছে। অর্থাৎ এই কোম্পানিগুলো অত্যধিক মুনাফা করেছে, যা ব্যবসার জগতে ‘উইন্ডফল প্রফিট’ হিসেবে পরিচিত।

উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর এক গবেষণার সূত্রে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর দিয়েছে। তাদের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে এই কোম্পানিগুলো ১ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলার মুনাফা করেছে। গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে তাদের মুনাফা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার কোটি ডলার।

মূলত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে অক্সফাম ও একশনএইডের গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। তারা বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চার বছরে এসব কোম্পানি সম্মিলিতভাবে যে মুনাফা করেছে, তার চেয়ে ৮৯ শতাংশ বেশি মুনাফা করেছে গত দুই বছরে।

কোনো কোম্পানির মুনাফা তখনই উইন্ডফল মুনাফা হিসেবে আখ্যায়িত হবে, যখন তার মুনাফার পরিমাণ আগের চার বছরের গড় মুনাফার চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বেশি হবে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত বছর জ্বালানি কোম্পানিগুলো উইন্ডফল মুনাফা করেছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০০০ বৃহৎ কোম্পানির তালিকায় স্থান পাওয়া ৪৫টি জ্বালানি কোম্পানি ২০২১ ও ২০২২ সালে গড়ে ২৩৭ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ খাতে শতকোটিপতির সংখ্যা ৯৬ জনে উন্নীত হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে তাদের সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৩২ বিলিয়ন বা ৪৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা গত বছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার বেশি।

কোভিড ও তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালে বিশ্বের ৫৮টি দেশের অন্তত ২৫ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। অথচ এ সময়ে বিশ্বের অনেক খাদ্য ও বেভারেজ কোম্পানি, ব্যাংক ও ওষুধ কোম্পানি বিপুল মুনাফা করেছে।

এসব কারণে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গ্রিডফ্ল্যাশনের অভিযোগ আনা হয়েছে, অর্থাৎ পণ্যের মূল্য অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দেওয়া।

একশনএইড ও অক্সফামের গবেষণায় আরও যা যা পাওয়া গেছে সেগুলো হলো—

  • ১৮টি খাদ্য ও বেভারেজ কোম্পানি ২০২১ ও ২০২২ সালে গড়ে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে। ২০২২ সালে বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য বেড়েছে ১৪ শতাংশ।

  • গত দুই বছরে ২৮টি ওষুধ কোম্পানি বছরে গড়ে ৪৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে। এ ছাড়া ৪২টি বড় খুচরা দোকান ও সুপারমার্কেট মুনাফা করেছে গড়ে ২৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।

  • ৯টি অ্যারোস্পেস ও প্রতিরক্ষা কোম্পানি ৮০০ কোটি ডলার উইন্ডফল মুনাফা করেছে।

অক্সফামের অ্যাডভোকেসি বিভাগের প্রধান ক্যাটি চক্রবর্তী দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘এই ধরনের অতি মুনাফা কেবল অনৈতিক নয়, বরং এ থেকে বোঝা যায়, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা মুনাফা করছে, অথচ যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের লাখ লাখ মানুষ খাবার কিনতে ও পরিষেবা মাশুল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।’

ক্যাটি চক্রবর্তী আরও বলেন, বিষয়টি যখন এমন হয় যে ১৮টি খাদ্য ও বেভারেজ কোম্পানি যে মুনাফা করছে, তা যদি পূর্ব আফ্রিকার ক্ষুধার্ত মানুষের জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় সহায়তার দ্বিগুণ হয়, তখন বলতে হয় সরকারকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।