
বিশ্ববাজারে আবারও নতুন রেকর্ড গড়েছে সোনার দাম। আজ সকালে এই প্রতিবেদন লেখার সময় সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৪৮৬ দশশিক ৫৬ ডলার। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামও বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী, গতকাল সোমবার এক দিনেই সোনার দাম বেড়েছে আউন্সপ্রতি প্রায় ১৪৭ ডলার। এর আগে দিনের শুরুতে সোনার দাম ইতিহাসে এই প্রথম ৪ হাজার ৪০০ ডলার পেরিয়ে যায়। যে গতিতে দাম বাড়ছে, তাতে শিগিগিরই সোনার দাম ৪ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন বাজারবিশ্লেষকেরা। খবর গোল্ড প্রাইস ডট অর্গ
হঠাৎ সোনার দাম এতটা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আগামী বছর নীতি সুদহার আরও কমাবে। সেই ধারণার ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীরা আবারও সোনার প্রতি হন্যে হয়ে ছুটতে শুরু করেছেন। পরিণামে সোনার দামের এ নতুন রেকর্ড।
চলতি বছর সোনার দাম অনেকটাই বেড়েছে। বছরের শুরুতে সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৬০০ ডলার। কিন্তু ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নীতি প্রণয়নে যেভাবে অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন, তাতে সোনার দাম রকেট গতিতে বেড়েছে। সেই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা তো আছেই। এ বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীরা সোনার মতো নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যমের দিক ছুটছেন।
এদিকে শুধু সোনা নয়, ফেডের নীতি সুদহার হার কমানোর সম্ভাবনা আছে—এ খবরে অন্যান্য ধাতুর দামও কমেছে। রুপার দামও নতুন রেকর্ড গড়েছে।
সোনার বাজার নিয়ে গবেষণা করে বুলিয়নভল্ট নামের এক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক অ্যাড্রিয়ান অ্যাশ বিবিসিকে বলেন, চলতি বছর সোনার দাম ৬৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ১৯৭৯ সালের পর আর কোনো বছরে সোনার দতাম এতটা বাড়েনি।
অ্যাশ আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যেন বাজারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন—সোনার দাম কেবল বাড়ছেই। বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে সোনার দিকে ঝুঁকছেন।
এদিকে বাংলাদেশের বাজারেও সোনার দাম নতুন রেকর্ড গড়েছে। গতকাল সোমবার ভরিপ্রতি একলাফে চার হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম পড়বে ২ লাখ ২২ হাজার টাকা। দেশের ইতিহাসে এটাই সোনার সর্বোচ্চ দর।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার কমবে—এর অর্থ হলো বন্ডের মতো বিনিয়োগ থেকে মুনাফা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় এবং ঝুঁকি ছড়িয়ে দিতে সোনা–রুপার মতো পণ্যের দিকে ঝোঁকেন।
বিশ্লেষকদের বর্তমান ধারণা হলো ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ দুই দফা সুদের হার কমাতে পারে।
সোনার চাহিদা বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ হলো বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা, মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানো ও নিজ নিজ বিনিয়োগ পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যময় করতে সোনার মজুত বাড়াচ্ছে। গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ প্রবণতা ২০২৬ সালেও অব্যাহত থাকবে।
রিবল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের নীতিপ্রণেতা আনিতা রাইট বিবিসিকে বলেন, চলতি বছর সোনার দাম ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের নীতির প্রভাব আছে। মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যম হিসেবে সোনার ওপর ভর করছেন ব্যবসায়ীরা। সে কারণে সোনার এত বাড়বাড়ন্ত।
অন্যদিকে মার্কিন ডলার দুর্বল হওয়াও সোনার মূল্যবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এতে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে সোনার দাম তুলনামূলকভাবে কম পড়ে।
অন্য মূল্যবান ধাতুগুলোর ক্ষেত্রেও বছরটি ছিল রেকর্ডের। সোমবার রুপার দাম আউন্সপ্রতি ৬৯ দশমিক ৪৪ ডলারে পৌঁছে নতুন রেকর্ড গড়েছে।
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত রুপার দাম ১৩৮ শতাংশ বেড়েছে। প্লাটিনামের দাম উঠেছে ১৭ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বিশ্লেষকদের মতে, চাঙা চাহিদা ও সরবরাহ সীমাবদ্ধতার কারণে এই ধাতুগুলোর মূল্যবৃদ্ধির হার সোনাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এসব মূল্যবান ধাতু শিল্প উৎপাদনেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ফলে এগুলোর চাহিদার নানামুখী উৎস আছে।
এদিকে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার সমুদ্র উপকূল থেকে আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকার আটক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভেনেজুয়েলা থেকে ছেড়ে আসার পর সম্প্রতি ওই তেলবাহী ট্যাংকারটি আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। এ নিয়ে চলতি মাসে ওই উপকূল থেকে দ্বিতীয়বারের মতো তেলবাহী জাহাজ আটক করলে যুক্তরাষ্ট্র। খবর বিবিসি
এ ঘটনার জেরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে ১ দশমিক ৬১ ডলার বেড়ে ৬২ ডলার ০৮ সেন্টে ওঠে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়ে ৫৭ দশমিক ৯৮ ডলার পর্যন্ত উঠেছে।
তবে সামগ্রিকভাবে চলতি বছর তেলের বাজার নিম্নমুখী ছিল। বছরের শুরুতে দাম এর চেয়ে বেশি ছিল।