১৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে নেসলে

১৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে নেসলে—আজ বৃহস্পতিবার কোম্পানির নতুন বৈশ্বিক প্রধান নির্বাহী (সিইও) ফিলিপ নাভরাটিল এ ঘোষণা দেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্যাকেটজাত খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি খরচ কমানো ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ছাঁটাইয়ের এ সংখ্যা নেসলের মোট কর্মীবাহিনীর প্রায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমানে এই কোম্পানিতে কাজ করছেন প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার কর্মী। নাভরাটিল জানান, ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ খরচ সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩৭৭ কোটি ডলারে উন্নীত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি নেসলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও দেশটিতে বিক্রীত বেশির ভাগ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদকেরা এখন আস্থার টানাপোড়েন ও স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ভোক্তা আচরণের পরিবর্তনের মুখে পড়েছে।

নাভরাটিল বলেন, ‘বিশ্ব বদলাচ্ছে—নেসলেকেও এখন আরও দ্রুত বদলাতে হবে।’

নেতৃত্বে অস্থিরতা

বৃহস্পতিবার সকালে ঘোষণার পর নেসলের শেয়ারের দাম প্রায় ৮ শতাংশ বেড়ে যায়। তবে সম্প্রতি কোম্পানিটি নজিরবিহীন নেতৃত্বসংকটে ভুগছে। সেপ্টেম্বর মাসে কোম্পানির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী লরেন্ট ফ্রেইক্স অধীনস্থ কর্মীর সঙ্গে গোপন সম্পর্কের অভিযোগে বরখাস্ত হন, তাঁর জায়গায় আসেন নাভরাটিল।

এর দুই সপ্তাহ পর চেয়ারম্যান পল বুলকে আগাম অবসরে যান এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ইন্ডিটেক্সের সাবেক প্রধান পাবলো ইসলা।

নাভরাটিল জানান, আগামী দুই বছরে ১২ হাজার অফিসকর্মী ছাঁটাই করা হবে। পাশাপাশি উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার চলমান সংস্কারের অংশ হিসেবে আরও ৪ হাজার কর্মী কমানো হবে। মূলত কোম্পানির কার্যকারিতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

কঠিন বাস্তবতা

কিটক্যাট, নেসপ্রেসো ও ম্যাগির মতো বিশ্বখ্যাত পণ্য তৈরি করে নেসলে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিক্রি কমে যাওয়া, ব্যয় বৃদ্ধি ও ঋণের চাপের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক ও বাজার প্রতিযোগিতার চাপে কোম্পানিটি কঠিন অবস্থায় পড়েছে।

বিশ্লেষক সংস্থা বার্নস্টেইন ছাঁটাইয়ের এই সিদ্ধান্তকে ‘অপ্রত্যাশিত কিন্তু সাহসী পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে।

বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে নেসলের বাস্তব অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি ছিল (আরআইজি) ১ দশমিক ৫ শতাংশ; এটি বিশ্লেষকদের প্রত্যাশিত শূন্য দশমিক ৩ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। এতে নবনিযুক্ত নাভরাটিল কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।

নাভরাটিল বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হলো আরআইজি–নির্ভর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। আমরা এমন কর্মসংস্কৃতি গড়ে তুলছি, যেখানে কর্মদক্ষতা মূল্যায়িত হবে—বাজার হারানোর সংস্কৃতি নয়, বরং বিজয়ের পুরস্কার দেওয়া হবে।’

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের পানীয়, প্রিমিয়াম বেভারেজ ও কম প্রবৃদ্ধি–কম মুনাফার ভিটামিন–সাপ্লিমেন্ট ব্যবসা নিয়ে কৌশলগত পর্যালোচনা চলছে।

২০২৫ সালের লক্ষ্য অপরিবর্তিত

সুইস কোম্পানি নেসলে ২০২৫ সালের আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রেখেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের তুলনায় অর্গানিক পণ্যের বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ও মুনাফা বাড়বে।

নেসলে আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সুইস পণ্যের ওপর আগস্ট থেকে ৩৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। এই পূর্বাভাসে সেই শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

খরচ সাশ্রয়ের বড় অংশ ২০২৬–২৭ সালে বাস্তবায়িত হবে। তবে ২০২৫ সালে আরও বেশি সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। বিক্রয়ে যে প্রবৃদ্ধি এসেছে, তা হয়েছে মূলত কফি ও কনফেকশনারি পণ্যের দাম বাড়ার কারণে। তবে চীনের বাজারে এখনো আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

নেসলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আনা মানজ বলেন, ‘চীনে আমরা এতদিন বিতরণ বিস্তারে অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়েছি, কিন্তু ভোক্তা চাহিদা তৈরিতে যথেষ্ট কাজ করিনি। এখন আমরা সেটি সংশোধন করছি—বিতরণ ব্যবস্থা আরও কার্যকর করছি এবং একই সঙ্গে চাহিদা তৈরিতে জোর দিচ্ছি।’