Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার ‘অনিয়ন্ত্রিত’

বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ডিজিটাল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে একের পর এক বিপত্তি ও কেলেঙ্কারি ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে না পারায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিন্দা–সমালোচনা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) বন্ধ হওয়ার ঘটনায় বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা বড় ধাক্কা খেয়েছে। মাত্র তিন দিনের মাথায় সিগনেচার ব্যাংক নামের আরেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। তার ওপর ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা ডিজিটাল মুদ্রা খাতের ঋণদাতা ব্যাংক হিসেবে বিবেচিত সিলভারগেটও মুখ থুবড়ে পড়ে।

পরপর ব্যাংক বন্ধের কারণে টনক নড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর। দুশ্চিন্তা বাড়ে দেশে দেশে। কারণ সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ হওয়া আর সিলভারগেট ব্যাংকের মুখ থুবড়ে পড়ার জেরে ডিজিটাল মুদ্রা লেনদেন তথা ক্রিপ্টোকারেন্সি খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম এফটিএক্স দেউলিয়া হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই দু–তিনটি ব্যাংকের বিপর্যয় সংশ্লিষ্ট সবার দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।

Also Read: পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল মুদ্রা চালু করছে ভারত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকেরা এখন ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে তদারকি জোরদারে মনোযোগ দিয়েছে। কোভিড–১৯ মহামারি চলাকালে যখন লকডাউন তথা নিষেধাজ্ঞার কারণে মানুষ বাড়িতে আটকে ছিল, তখন ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ ডিজিটাল লেনদেনের খাতগুলোর দ্রুত বিকাশ ঘটে। বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি খাতে মোট লেনদেনের পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। অবশ্য এর আগে ২০২১ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈশ্বিক বাজারের আকার ছিল সর্বোচ্চ তিন ট্রিলিয়ন বা তিন লাখ কোটি ডলারের মতো।

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সেন্টার ফর এভিডেন্স–বেজড ম্যানেজমেন্টের ব্যাংকিং–প্রধান মার্টিন ওয়াকার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, কোভিড লকডাউনের সময় থেকেই বিশ্বে ক্রিপ্টোকারেন্সির গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ক্রিপ্টো গ্রাহকদের লক্ষ্য করে তাঁর মন্তব্য হলো, তাঁরা একটি অনিয়ন্ত্রিত বাজারে যোগ দিয়েছিলেন। বিনিয়োগ করেছিলেন বিশাল ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু বুঝতে পারেননি যে তাঁরা অনিয়ন্ত্রিত এবং আইনি সম্পদে বিনিয়োগ করছেন না।

Also Read: ডিজিটাল মুদ্রা চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই হবে

মার্টিন ওয়াকার গত বছর ক্রিপ্টোকারেন্সির সমালোচকদের নিয়ে লন্ডনে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, তাঁদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে। কারণ, মালিকেরা একই সময়ে ক্রিপ্টোতে ঝুঁকির অবস্থান নিচ্ছেন এবং সম্পদগুলো তাঁদের গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছেন। ওয়াকারের মতে, মানুষ বুঝতে পারে না যে এটি প্রচলিত অর্থে অনুমোদিত কিছু নয়। নিয়ন্ত্রকেরাও এ জাতীয় প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নজরদারি করতে চান।

এদিকে বোরগোগন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক লুডোভিক ডেসমেট এএফপিকে বলেন, এই ধরনের ট্রেডিং (লেনদেন) প্ল্যাটফর্মগুলো আর্থিক ও প্রযুক্তিগত—উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত জটিল। এমন সব মানুষের সঙ্গে এই লেনদেন সম্পন্ন হয়, যাঁরা অপ্রশিক্ষিত এবং বিষয়টি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত নন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো তত্ত্বাবধানের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গঠনের বিষয়ে কাজ করছেন। সে আলোকেই মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ক্রিপ্টো ঋণদাতা জেনেসিস ও জেমিনির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইতিমধ্যে এ–সংক্রান্ত খসড়া আইন তৈরি করেছে, যা আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে। এতে ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ করতে বাধ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ইতিমধ্যে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (এসভিবি) বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এ নিয়ে মার্কিন বিচার বিভাগও তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। এসভিবির প্রধান নির্বাহীসহ এসভিবির মালিক এসভিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের কর্মকর্তারা যে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে তাঁদের শেয়ার বিক্রি করেছিলেন, সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক সংবাদে বলা হয়েছে, তদন্তে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে বা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে, এমনটা না–ও হতে পারে।

এসইসির চেয়ারম্যান গ্যারি জেন্সলার রয়টার্সকে জানান, তাঁরা মূলত বাজারের স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এসভিবির তরফ থেকে কোনো ধরনের অসদাচরণ করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন।

এসভিবির শেয়ারহোল্ডাররা এসভিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ ও ব্যাংকের দুই শীর্ষ নির্বাহীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে যে এসভিবি এমন চাপে পড়তে পারে, সে ব্যাপারে এসভিবি গ্রুপ ও ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা তাঁদের সতর্ক করেননি।

পরপর দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোসহ হোয়াইট হাউস এখন অন্যান্য ব্যাংকের ওপর নজর রাখতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউস এখন ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ছোটখাটো ব্যাংককে নজরদারিতে রেখেছে। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, এসভিবি ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ করাসহ যেসব ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে, তার বদৌলতে ব্যাংক ব্যবস্থা যথেষ্ট সুরক্ষিত হয়েছে।

দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাতে একধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক। সান ফ্রান্সিসকো–ভিত্তিক এ ব্যাংকের পতন ঠেকাতে জে পি মরগ্যান, ব্যাংক অব আমেরিকান করপোরেশন ও সিটি গ্রুপের মতো ১১টি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এসব ব্যাংক ফার্স্ট রিপাবলিককে ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার আমানত দিচ্ছে।