চাকরি পুনর্বহাল ও বেতন–ভাতার দাবিতে ৫ থেকে ১৪ অক্টোবর পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা
চাকরি পুনর্বহাল ও বেতন–ভাতার দাবিতে ৫ থেকে ১৪ অক্টোবর পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো: প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও নেই কাজ, ৩৪ মাস বন্ধ বেতন–ভাতা

প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোয় কর্মরত ২৬৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার পর থমকে যায় প্রকল্পের কার্যক্রম। ফলে বন্ধ হয়ে যায় তাঁদের বেতন–ভাতাও। চাকরি পুনর্বহাল ও বেতন–ভাতার দাবিতে ৫ থেকে ১৪ অক্টোবর পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা। পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দেশের দারিদ্র্যসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্পটি দেশি নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় কর্মীরা কর্মহীন হয়েছেন এবং জাতীয় পরিসংখ্যানের কাজেও প্রভাব পড়ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে পরিসংখ্যান ব্যুরো ‘ডেভেলপমেন্ট অব দ্য পভার্টি ডেটাবেজ’ প্রকল্পে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৫৪৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। কর্মরত ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, প্রকল্পে নিয়োগ থাকলেও দীর্ঘ সময় তাঁরা রাজস্ব শাখায় কাজ করেছেন। ২০২২ সালের জুলাই থেকে, চাকরিতে যোগদানের ছয় বছর পর তাঁদের প্রকল্পের কাজে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কার্যক্রম থেমে যায়। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৬ সালে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বেতন–ভাতা বন্ধ হওয়ার সময় ২৬৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর প্রকল্পে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৬১ জন হাইকোর্টে রিট দাখিল করে প্রকল্প শেষ হওয়া পর্যন্ত বেতন–ভাতা বহাল রাখার দাবি করেন।

আদালতের রায়

হাইকোর্ট রিটের পক্ষে রায় দেন। এরপর পরিসংখ্যান ব্যুরো সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করে। তবে চলতি বছরের আগস্টে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন।

আদালত তিন দফায় সময় বৃদ্ধি করে ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্প চলমান রাখার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি শূন্য পদ সাপেক্ষে চাকরি স্থায়ী করার নির্দেশও দেন আদালত। অদ্যাবধি আদালতের রায়ের পরও তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়নি। বেতন–ভাতাও পাচ্ছেন না। এ অবস্থাতেই তাঁরা ১০ দিন টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা অভিযোগ করেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ আছে, রায়ও আমাদের পক্ষে হয়েছে, তবুও কার্যক্রম শুরু হয়নি। বেতন–ভাতা বন্ধ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।’

২০১৬ সালের অক্টোবরে পরিসংখ্যান ব্যুরো ‘ডেভেলপমেন্ট অব দ্য পভার্টি ডেটাবেজ’ প্রকল্পে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৫৪৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়

পরিসংখ্যান ব্যুরোর বক্তব্য

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহকারী সচিব শিউলী রাণী বালা বলেন, ‘আদালত আংশিক রায় দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য আবার শুনানি হবে। আইনি উপায়ে এর সমাধান হবে। এটি শুধু আমাদের বিষয় নয়, এখানে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় জড়িত। তাই ঠিক কত দিন লাগবে, বলা যাচ্ছে না।’

কর্মসূচি স্থগিত

১০ দিন অবস্থানের পর গতকাল মঙ্গলবার পরিসংখ্যান ব্যুরোর আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। আন্দোলনকারীদের একজন আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে ২০ দিনের মধ্যে সমাধান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আপাতত আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি। ২০ দিনের মধ্যে সমাধান না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকল্পের মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও যদি কর্মীদের পুনর্বহাল ও বেতন–ভাতা শুরু না হয়, তাহলে শুধু তাঁদের আর্থিক নিরাপত্তা নয়; বরং দেশের তথ্য পরিসংখ্যান ব্যবস্থা ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায়ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। পরিসংখ্যান ব্যুরো ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।